climatology geography notes in bengali medium
𖤂 জলবায়ুবিদ্যা (Climatology) কাকে বলে?
▻ জলবায়ুবিদ্যা বা ‘Climatology' শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ ‘Klima, যা ভূমিঢাল ও অক্ষাংশ সংক্রান্ত ধারণাকে নির্দেশ করে এবং ‘Logos’-এর অর্থ হল ‘বিদ্যা’। অর্থাৎ যে বিদ্যায় পৃথিবীর বৈচিত্র্যময় জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, তাকে বলে জলবায়ুবিদ্যা। ❏ বৈশিষ্ট্য : (i) জলবায়ুবিদ্যা একটি দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া। (ii) আবহবিদ্যার ওপর জলবায়ুবিদ্যা নির্ভরশীল। (ii) জলবায়ু বিদ্যাকে চারভাগে ভাগ করা যায়। যথা— ➊ ভৌত জলবায়ুবিদ্যা ➋ বর্ণনামূলক জলবায়ুবিদ্যা ➌ আঞ্চলিক জলবায়ুবিদ্যা ➍ ফলিত জলবায়ুবিদ্যা।
𖤂 ট্রপোস্ফিয়ারকে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে কেন?
▻ বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তর হল ট্রপোস্ফিয়ার। বায়ুমণ্ডলের 75% গ্যাসীয় উপাদান ও অধিক পরিমাণে জলীয় বাষ্প এই স্তরে অবস্থিত। জলীয় বাষ্পের প্রাচুর্য হেতু ঝড়-ঝঞ্ঝা, বজ্রবৃষ্টি দেখা যায়। আবহাওয়া সংক্রান্ত বায়ুমণ্ডলের যাবতীয় সঞ্চালক ক্রিয়া ট্রপোস্ফিয়ারে সীমিত থাকে তাই এই স্তরকে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে। তবে ঝোড়ো কালবৈশাখী মেঘ এবং পালক মেঘ ট্রপোপজ ভেদ করে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বিস্তার লাভ করতে পারে।
𖤂 আবহবিদ্যা (Meteorology) কাকে বলে?
▻ 'Meteorology' একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ হল ‘Discourse on thing above'। অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল বিষয়ক বিজ্ঞান হল আবহবিদ্যা। অ্যারিস্টটল-কৃত ‘মিটিওরলজিকা' (Meteorologica) গ্রন্থ থেকে এই বিজ্ঞানটির নামকরণ হয়েছে।
▢ বৈশিষ্ট্য : i. আবহাওয়াবিদ্যা একটি স্বল্পকালীন প্রক্রিয়া। ii. বায়ুমণ্ডলের মূল উপাদানগুলির পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হল এই বিদ্যার মূল বিষয়বস্তু। iii. আবহাওয়াবিদ্যায় চারটি উপবিভাগ রয়েছে—➊ গতিশীল আবহবিদ্যা, ➋ ভৌত আবহবিজ্ঞান, ➌ সিনপটিক মিটিওরলজি, ➍ এরোনটিক্যাল মিটিওরলজি।
𖤂 থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নোস্ফিয়ার (Ionesphere) কাকে বলে?
▻ মেসোস্ফিয়ারের উপর বায়ুমণ্ডলের চতুর্থ যে স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাকে থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নোস্ফিয়ার বলে। স্তরটির প্রধান উপাদান হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম তড়িৎগ্রস্ত কণা H+, He- রূপে অবস্থান করায়, একে আয়নমণ্ডলও বলে। ▢ বিস্তার : 80-500 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। ▢ বৈশিষ্ট্য : (i) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা অতিদ্রুত বৃদ্ধি পায়। (ii) বেতারতরঙ্গ এই স্তরে প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। (iii) এই স্তরে তড়িদাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে মৃদু অলোকপ্রভার সৃষ্টি হয়, একে মেরুপ্রভা বলে।
𖤂 এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere) কাকে বলে?
▻ থার্মোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের পঞ্চম যে স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে ধীরে ধীরে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, তাকে 'Exosphere' বলে। ▢ বিস্তার : থার্মোস্ফিয়ারের উপরে এই স্তরটি 500 – 650 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত।
▢ বৈশিষ্ট্য : (i) এই স্তরে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতাও বাড়ে ( 1000 ° - 1600°C)। (ii) এই স্তরে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায়। (iii) এখানে বায়ু এত হালকা, যে এর অস্তিত্ব বোঝা যায় না। (iv) এক্সোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার অবস্থিত।
𖤂 ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere) কাকে বলে?
▻ সাম্প্রতিককালে আবহবিদগণ এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere)-এর ঊর্ধ্বে ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের অস্তিত্বের কথা বলেন। এটিই বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ সীমা। ▢ বিস্তার : এক্সোস্ফিয়ারের ওপরে 10000 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। ▢ বৈশিষ্ট্য : (i) প্রোটন ও ইলেকট্রনের প্রাধান্য দেখা যায়। (ii) চৌম্বক ক্ষেত্রের অবস্থান লক্ষণীয়। 1958 সালে আমেরিকান পদার্থবিদ Van Allen প্রথম এটি আবিষ্কার করেন। একে 'Van Allen Radiation Belts' বলে।
𖤂 'Van Allen Belts' বলতে কী বোঝো?
▻ ম্যাগনেটোস্ফিয়ারে আনুমানিক 1000 কিমি উচ্চতা থেকে 10000 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত ইলেকট্রন ও প্রোটনের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। 1958 সালে আমেরিকান পদার্থবিদ Van Allen এই স্তরটি আবিষ্কার করেন বলে, একে 'Van Allen Belts' বলে। ▢ বৈশিষ্ট্য : i. বিজ্ঞানীদের মতে সূর্য থেকে আগত আয়ন ও পৃথিবীর চৌম্বক কেন্দ্রের ফলে মহাজাগতিক রশ্মির প্রভাবে এটি সৃষ্টি হয়।
𖤂 অ্যাপলেটন স্তর (Appleton layer) কাকে বলে?
▻ ভূপৃষ্ঠের প্রায় 300কিমি উচ্চতায় আয়নোস্ফিয়ারের 'F' স্তরকে Appleton layer বলে।
▢ বৈশিষ্ট্য : i. এই স্তর 100A ও 800A তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষণ করে। ii. এই স্তরে প্রতিফলিত হয়ে ভূপৃষ্ঠে উৎপন্ন হ্রস্ব তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেতারতরঙ্গ ভূপৃষ্ঠের দিকে পুনরায় ফিরে আসে বলে ভূপৃষ্ঠের দূরবর্তী ও অতিদূরবর্তী অঞ্চলগুলির মধ্যে বেতার যোগাযোগ সম্ভব হয়।
𖤂 বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল / গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাব সম্পর্কে লেখো।
▻ বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল অথবা গ্রিন হাউস গ্যাসের প্রভাবগুলি হল—
▢ জলবায়ুর ওপর প্রভাব : (i) অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি—আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান বিশেষত বৃষ্টিপাত (অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি), ঝড়-ঝঞ্ঝা প্রভৃতির অনিশ্চয়তা বাড়বে। (ii) জলচক্রে ব্যাঘাত—উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের বায়ুমণ্ডল ও ভূপৃষ্ঠের মধ্যে যে জলচক্র আছে তা পরিবর্তিত হবে। (ii) দাবানল—উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে গাছে গাছে ঘষা লেগে দাবানলে বনভূমি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
▢ জীব-সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব : (i) খাদ্যশৃঙ্খল—উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। (ii) জীববৈচিত্র্য—সমুদ্র-জলতলের উষ্ণতা বাড়তে থাকায় জীববৈচিত্র্য নষ্ট হবে। (iii) অতিরিক্ত উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জীবজগতের প্রজনন ক্ষমতা, রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা হ্রাস পাবে। (iv) জলজ বাস্তুতন্ত্র বিপন্ন —সমুদ্রজলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে বায়ুমণ্ডলের CO2 অতিরিক্ত মাত্রায় দ্রবীভূত হতে পারে না। দ্রবীভূত CO2-এর জোগানের অভাব ঘটলে উদ্ভিদ প্ল্যাঙ্কটনগুলি মারা যাবে। (v) ভৌমজলের ঘাটতি—উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে বৃষ্টিপাত ও মৃত্তিকা জলের পরিমাণ হ্রাস পাবে এবং ভৌমজল ভাণ্ডারে টান পড়বে, ফলে জীব সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
▢ সাধারণ প্রভাব : (i) বরফের গলন—পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বাড়লে মেরু অঞ্চলে ও পার্বত্য অঞ্চলে জমে থাকা বরফখণ্ড আরো বেশি করে গলবে। (ii) সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি—বরফগলা জল সমুদ্রজলে যুক্ত হয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি করবে। (iii) প্লাবন/জলমগ্নতা—সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার জন্য উপকূলীয় অঞ্চলসমূহ প্লাবিত হবে।
𖤂 Global Warming Potential (GWP) কী?
▻ বিশ্ব উষ্ণায়ন পরিমাপের একককে Global Warming Potential বলে। এর সাহায্যে 'Green House Gas' কতটা পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিমাণ কতটা হবে, তা সহজেই জানা যায়। Green House Gas ও একই ভরের কার্বন ডাইঅক্সাইডের আপেক্ষিক অনুপাত হল এই Global Warming Potential। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর পৃথিবী কতটা উষ্ণ হচ্ছে, তা এর সাহায্যে সহজেই নির্ণয় করা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, CFC-11-এর GWP হল 3400, যা সর্বোচ্চ।
𖤂 IPCC বা Intergovernmental Panel on Climatic Change কী ?
▻ 1988 সালে 'United Nation Environment Programme' (UNED) ও 'World Meterological Organization' (WMO)-এর যৌথ উদ্যোগে IPCC গঠিত হয়। এর প্রধান দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনিভাতে অবস্থিত। এটি 195টি দেশের সদস্য নিয়ে গঠিত। এই সংস্থা মূলত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ, ফলাফল ও নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে Working group-I, II ও III-তে কাজ করে। বর্তমানে IPCC.AR-6 Report 2021 2022 সালে প্রকাশ করেছে। এর কার্যপ্রণালী : বিশ্ব পরিবেশের বিপদ সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধান করা ও তার প্রতিবিধানের পথ বাতলে দেওয়াই এর প্রধান কাজ। এটি গবেষণার কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, তথ্য অনুসন্ধানের জন্য এটিকে নির্ভর করতে হয় বিজ্ঞানের নামী পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধের ওপর। এখন পর্যন্ত 1990, 1995, 2001 এবং 2007 সালের IPCC রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
𖤂 বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming)-এর সম্ভাব্য সুফলগুলি আলোচনা করো।
▻ মানবজাতির কাছে সবচেয়ে বড়ো বিপদ হল Global Warming-এর ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি হেতু প্রাকৃতিক ও মানবিক পরিবেশ যথার্থই প্রভাবিত হয়। এক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক প্রভাবক বেশি হলেও বেশ কিছু সুফলও বর্তমানে সীমিত আকারে দেখা যাচ্ছে। যথা— (i) মেরু অঞ্চলে বরফমুক্ত হয়ে মৃত্তিকা অনাবৃত হচ্ছে, ফলে কৃষির সুবিধা হচ্ছে। (ii) কানাডা, ফিনল্যান্ডে নদীতে জলপ্রবাহের বেগ বৃদ্ধি পেয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা বাড়ছে।
𖤂 থর্নথয়েটের জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগের ভিত্তি কী?
▻1933 ও 1948 সালে থর্নথয়েট তাঁর জলবায়ুতে শ্রেণিবিভাগ করেন। যেমন— ➊ 1931 সালে শ্রেণিবিভাগের ভিত্তি : উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের ফলপ্রসূতা, বায়ুতাপের কর্মক্ষমতা ও বৃষ্টিপাতের ঋতুগত বণ্টন। ➋ 1948 সালে শ্রেণিবিভাগের ভিত্তি : প্রতি মাসের উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, সম্ভাব্য বাষ্পীয় প্রস্বেদন ও জলের জমা-খরচের হিসাব।
𖤂 থর্নথয়েটের জলবায়ু শ্রেণিবিভাগের ত্রুটি লেখো।
▻ থর্নথয়েটের জলবায়ু শ্রেণিবিভাগের ত্রুটিগুলি হল— (i) থর্নথয়েট দক্ষিণ-পশ্চিম আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বিশ্বের জলবায়ুকে শ্রেণিবিভাগ করেন, যা সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।(ii) থর্নথয়েট-এর জলবায়ুর শ্রেণির শ্রেণিসংখ্যা অনেক বেশি, যা মনে রাখা কষ্টসাধ্য। (iii) থর্নথয়েটের শ্রেণিটি অত্যন্ত জটিল, যা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয় ৷
𖤂 বায়ুপুঞ্জ (Airmass) বলতে কী বোঝো?
▻ ভূপৃষ্ঠের কোনো নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুরাশি যদি কয়েক লক্ষ বর্গকিমি বিস্তৃত হয় এবং তার অনুভূমিক তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও উচ্চতা মোটামুটি একই রকমের হয়, তবে বায়ুমণ্ডলের এই অবস্থাকে ‘বায়ুপুঞ্জ' বলে।
▢ বৈশিষ্ট্য :
i. বায়ুপুঞ্জের গভীরতা কয়েকশত মিটার হয়।
ii. ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে বায়ুপুঞ্জ ঘটার জন্য একই পদার্থ দ্বারা গঠিত হওয়া আবশ্যক।
iii. বায়ুপুঞ্জ সামগ্রিকভাবে তার গতিপথ বদলায়।
iv. বায়ুপুঞ্জ সৃষ্টির জন্য বায়ুর গতি কমে যায়।
𖤂 বায়ুপুঞ্জের শ্রেণিবিভাগ করো?
▻ অক্ষাংশগত অবস্থান অনুসারে বায়ুপুঞ্জ 4টি। যথা—
➊ নিরক্ষীয় বায়ুপুঞ্জ (E) : নিরক্ষরেখার 5° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থিত।
➋ ক্রান্তীয় বায়ুপুঞ্জ (T) : উত্তর গোলার্ধে 20°-35° উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত।
➌ মেরু বায়ুপুঞ্জ (P) : 50°-65° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে অবস্থিত।
➍ মেরুবৃত্তের বায়ুপুঞ্জ (A) : 80°-95° উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত। এই বায়ুপুঞ্জে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়।
𖤂 ব্যারোট্রফিক ও ব্যারোক্লিনিক বায়ুপুঞ্জ কাকে বলে?
▻ কোনো বায়ুপুঞ্জের সমচাপরেখা ও সমোয়রেখা যদি পরস্পরের সমান্তরালে অবস্থান করে তাকে ব্যারোট্রফিক বায়ুপুঞ্জ বলে। পক্ষান্তরে কোনো বায়ুপুঞ্জের সমচাপরেখা ও সমোয়রেখা যদি পরস্পর পরস্পরকে ছেদ করে তবে সেই বায়ুপুঞ্জকে ‘ব্যারোক্লিনিক বায়ুপুঞ্জ’ বলে। ব্যারোট্রফিক বায়ুপুঞ্জের ফলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় না। ব্যারোট্রফিক অবস্থায় বায়ুপুঞ্জে বায়ুর গতিবেগ একইরকম থাকে বলে সীমান্তে কোনো ঘূর্ণিঝড় হয় না। ব্যারোক্লিনিক বায়ুপুঞ্জ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।
𖤂 বায়ুপ্রাচীর (Front) কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ট্য লেখো।
▻ ভিন্ন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতাবিশিষ্ট দুটি বায়ুপুঞ্জ একে অপরের দিকে অগ্রসর হলে, তারা পরস্পরের সঙ্গে না মিশে এক অদৃশ্য ঢাল-প্রাচীর বরাবর পৃথক হয়। এই অদৃশ্য প্রাচীরকে ‘Front' বলে। Front বা সীমান্ত দুই প্রকার। যথা—উষ্ণ সীমান্ত ও শীতল সীমান্ত।
▢ বৈশিষ্ট্য :
i. ভিন্ন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও ঘনত্ববিশিষ্ট দুটি বায়ুপুঞ্জের সন্ধিস্থলে সীমান্ত সৃষ্টি হয়।
ii. সীমান্ত বরাবর উন্নতার বিশাল পার্থক্য দেখা যায়।
ii. এক্ষেত্রে সমচাপরেখাগুলি বক্রভাবে অবস্থান করে।
iv. বায়ুপ্রবাহের দিকের পরিবর্তন দেখা যায়।
v. সর্বশেষ সীমান্তে বৃষ্টিপাতের পর সীমান্তের বিলুপ্তি হয়।
𖤂 মৌসুমি বায়ু (Monsoon Wind) কাকে বলে?
▻ আরবি শব্দ ‘মৌসিন’ থেকে ‘মৌসুমি’ কথাটি এসেছে, যার বাংলা অর্থ ঋতু। অর্থাৎ ঋতুভেদে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে মৌসুমি বায়ু বলা হয়। মৌসুমি একপ্রকার সাময়িক বায়ুপ্রবাহ, তাই এই বায়ু সারাবছর প্রবাহিত না হয়ে গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে প্রবাহিত হয়। স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর বৃহত্তর সংস্করণ হল মৌসুমি বায়ু ▢ প্রভাবিত অঞ্চল : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, কাম্পুচিয়া, লাওস, চিন প্রভৃতি
দেশে এই বায়ুর প্রভাব বেশি।
𖤂 কেনেলি হেভিসাইড স্তর (Kennely Heaviside layer)কী?
▻ আয়নোস্ফিয়ার স্তরটি ইলেকট্রনের ঘনত্বের ভিত্তিতে D,E,F,G এবং H এই পাঁচটি উপস্তরে বিভক্ত। এই স্তরগুলির মধ্যে 'E' স্তরটি উল্লেখযোগ্য। ▢ বিস্তার : এই স্তরটি 90-130 কিমি উচ্চতায় অবস্থিত। ▢ বৈশিষ্ট্য : (i) এই স্তর বেতারতরঙ্গকে ভূপৃষ্ঠে পুনঃপ্রেরণ করে, ফলে দূরবর্তী কেন্দ্রের মধ্যে বেতার সংযোগ সহজে ঘটে। (ii) এই স্তর 'X'ray শোষণ করে ও N, অণুকে আয়নিত করে।
𖤂 সমতাপ অঞ্চল (Isothermal Region) কাকে বলে?
▻ থার্মোস্ফিয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতাও দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং 500 কিমি উচ্চতায় বায়ুর উষ্ণতা প্রায় 2000°C হয়। এরপর থেকে বায়ুর উষ্ণতা বাড়েও না বা কমেও না। একই রকম থাকে। এইরকম স্তরকে বলে ‘সমতাপ অঞ্চল'। ▢ বৈশিষ্ট্য : i. অঞ্চলটিতে একই উদ্ভূতা সর্বত্র বিরাজ করে। ii. মূলত থার্মোস্ফিয়ারে 500 কিমি উচ্চতায় এইরকম সমতাপযুক্ত উষ্ণতা বিরাজ করে।
𖤂 স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের গড় (Normal Lapse Rate) কাকে বলে?
▻ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমা ট্রপোপজ পর্যন্ত। R G Berry ও RJ Chorley-র মতানুযায়ী, 6.5°C কিমি হারে উষ্ণতা কমে। একে স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের গড় বা Normal Lapse Rate বলে।
𖤂 সুমেরু প্রভা ও কুমেরু প্রভা (Aurora Boreolis and Aurora Australis) কী?
▻ সেপ্টেম্বর থেকে 21 মার্চ পর্যন্ত উত্তর মেরুতে এবং 21 মার্চ থেকে 23 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুতে এক বর্ণময় আলোর ছটা দেখা যায় একে উত্তর মেরুতে ‘সুমেরু প্রভা' ও দক্ষিণ মেরুতে ‘কুমেরু প্রভা' বলে ৷ ▢ অবস্থান : এই মেরুজ্যোতি আয়নোস্ফিয়ারে 100-500 কিমি উচ্চতায় দেখা যায়। ▢ সৃষ্টির কারণ : বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ারে যে সকল গ্যাসীয় উপাদান উপস্থিত আছে, তার সঙ্গে আগত রশ্মি ও বস্তুকণার সংঘর্ষ হয়। এই অবস্থায় গ্যাসীয় অণু ভেঙে গিয়ে পরমাণুতে পরিণত হয় এবং ইলেকট্রন ও প্রোটনের সঙ্গে সংঘাতের ফলে পরমাণু থেকে যে আলোর ছটা বেরিয়ে আসে, তাকেই মেরুজ্যোতি বলে।
𖤂 বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরের মধ্য দিয়ে জেট বিমান যাতায়াত করে এবং কেন?
▻ বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্য দিয়ে জেট বিমান যাতায়াত করে। কারণ এই স্তরের বায়ু প্রবাহহীন। এই স্তরের বায়ুতে সূক্ষ্ম ধূলিকণা আছে, কিন্তু জলীয় বাষ্প নেই। ফলে এখানে ঝড়-বৃষ্টি পরিলক্ষিত হয় না। ঝড়-বৃষ্টিমুক্ত বলেই জেট বিমানগুলি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের বায়ুস্তরের মধ্য দিয়ে বাধাহীনভাবে উড়ে যায়।
𖤂 বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) বলতে কী বোঝো?
▻ গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা উষ্ণায়ন বলতে বিগত দশকগুলিতে পৃথিবীর আবহমণ্ডল, পরিবেশ ও সমুদ্রের গড় তাপমাত্রার লক্ষণীয় বৃদ্ধিকে বোঝায়। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে বেড়ে চলেছে। 1880-1980 এই একশো বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় 0.6°C। আশঙ্কা করা হচ্ছে, 2100 সাল নাগাদ এই তাপমাত্রা সর্বনিম্ন 1.4°C এবং সর্বোচ্চ 5.8°C বাড়বে। সুতরাং বলা যায়, উষ্ণতা বৃদ্ধির হার ক্রমবর্ধমান। সারা পৃথিবীর এই গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্রমবর্ধমান অবস্থাকে বিজ্ঞানীরা ‘Global Warming' বলেছেন। মূলত বায়ুমণ্ডলের গ্রিন হাউস গ্যাস (CO2, N2O, O3, CH4, CFC) ও জলীয় বাষ্পের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর এই উষ্ণকরণ ঘটনা ঘটছে।
𖤂 বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণার উৎস লেখো।
▻ বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধুলোবালি, ছাই, খনিজ, লবণকণা, উল্কাপিণ্ডের ধ্বংসাবশেষ ‘ধূলিকণা” বা ‘অ্যারোসল' নামে পরিচিত। ▢ প্রাকৃতিক উৎস : (i) বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ার প্রভাবে ভূপৃষ্ঠ থেকে সরাসরি ধূলিকণা বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। (ii) আগ্নেয়গিরি থেকে বিক্ষিপ্ত ছাইভস্ম। (iii) সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলের লবণকণা বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়। ▢ অপ্রাকৃতিক উৎস : কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
𖤂 বায়ুমণ্ডল (Atmosphere)-এর সংজ্ঞা দাও।
▻ ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বে যে গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে, তাকেই বায়ুমণ্ডল বলে। এই বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে পৃথিবীর গায়ে জড়িয়ে আছে এবং পৃথিবীর সঙ্গে আবর্তন করছে। ▢ বিস্তার : বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমা 10000 কিমি পর্যন্ত ধরা হলেও এর শতকরা 97% পদার্থই সমুদ্রতল থেকে প্রায় 30 কিমি উচ্চতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ▢ উপাদান : পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল প্রধানত তিনপ্রকার উপাদান নিয়ে গঠিত। যথা— (i) গ্যাসীয় উপাদান, (ii) জলীয় বাষ্প ও (iii) ধূলিকণা।
𖤂 বায়ুমণ্ডল গঠনকারী উপাদানসমূহের গুরুত্ব লেখো।
▻ বায়ুমণ্ডল গঠনকারী উপাদানসমুহের গুরুত্বগুলি নিম্নরূপ — ➊ নাইট্রোজেনের গুরুত্ব : বায়ুমণ্ডলের গ্যাসগুলির মধ্যে নাইট্রেজেনের পরিমাণ সর্বাধিক (78.1%)। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। এটি প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের উৎস হওয়ায় জীবজগতের পক্ষে অপরিহার্য। এই গ্যাস বায়ুর আয়তন বৃদ্ধি ও O2-কে পাতলা করতে সহায়তা করে। কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া বায়ু থেকে N2 গঠন করে, যা শুঁটি জাতীয় উদ্ভিদের পক্ষে অপরিহার্য উপাদান।
➋ অক্সিজেনের গুরুত্ব : বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসগুলির মধ্যে অক্সিজেন (O2) সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ যদিও এর শতকরা পরিমাণ 20.94%। জীবদের শ্বাসকার্য চালাতে এবং প্রাণীদের শক্তি ও উত্তাপ বৃদ্ধি করতে O2 অপরিহার্য। অঙ্গার ব্যতীত আলোচনা অসম্ভব। এটি লৌহ জাতীয় খনিজের ওপর বিক্রিয়া ঘটায় বলে আবহবিকার ও দহনকার্যে O2 ত্বরান্বিত হয়।
➌ কার্বন ডাইঅক্সাইডের গুরুত্ব : বায়ুমণ্ডল গঠনকারী উপাদানগুলির মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) অতি সামান্য (0.03%) পরিমাণে থাকলেও জীবজগৎ ও জলবায়ুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন— Ⓐ এই গ্যাস তাপ শোষণ ও উত্তাপ পরিবহণ করে না বলে ভূপৃষ্ঠের উত্তাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। Ⓑ উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ও উদ্ভিদের খাদ্য প্রস্তুত করে। Ⓒ বায়ুমণ্ডলে মাত্রাতিরিক্ত CO2-এর পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর উয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে ভূ-উয়ায়ন ঘটেছে।
➍ বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব : জলের গ্যাসীয় অবস্থাকে জলীয় বাষ্প বলে। বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব হল— Ⓐ মেঘের সৃষ্টি : বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি মেঘের সৃষ্টি করে। Ⓑ ঘনীভবনের রূপ : বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভবন ঘটায়। এর ফলে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিশির, তুহিন, কুয়াশা ইত্যাদির সৃষ্টি হয়। Ⓒ উষ্ণতার বণ্টন : জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস তাপ শোষণ করে উষ্ণতার বণ্টনে সাহায্য করে। Ⓓ অস্থির বায়ুমণ্ডল : জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির জন্য নিম্ন বায়ুমণ্ডল অস্থির হয়। অধিক জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস বায়ুমণ্ডলের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর ও অস্বস্তিজনক।
➎ বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব : বায়ুমণ্ডলে ভাসমান সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জৈব ও অজৈব কণিকা ধূলিকণা নামে পরিচিত। Ⓐ মেঘ ও বৃষ্টি : বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণাকে কেন্দ্র করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং মেঘ ও বৃষ্টি ঘটায়। Ⓑ বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত : ধূলিকণা সূর্যতাপ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। Ⓒ নীল আকাশ ও বর্ণচ্ছটা : সূর্যরশ্মি ধূলিকণায় প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে বর্ণচ্ছটা ঘটায়। তাই আকাশ নীল দেখায়। Ⓓ ধোঁয়াশা : ধূলিকণার ধোয়া ও কুঁয়াশা মিলিত হয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে, যা শিল্পাঞ্চলে ঘটে থাকে।
➏ বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের গুরুত্ব : বায়ুমণ্ডলে অবস্থানকারী বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদানের মধ্যে শতকরা 0.00006% হল ওজোন গ্যাস। বায়ুমণ্ডলের এই গ্যাসের গুরুত্ব হল— Ⓐ অতিবেগুনি রশ্মিকে বাধাদান : ভূপৃষ্ঠ থেকে 20-24 কিমি উচ্চতায় ওজোন স্তর পৃথিবীর উপরে পাতলা আবরণের সৃষ্টি করেছে। তাই সূর্য থেকে আগত ক্ষতিক্ষারক অতিবেগুনি রশ্মি বাধাপ্রাপ্ত হয় বলে জীবজগৎ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়। Ⓑ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ : বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে এই গ্যাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। Ⓒ অন্যান্য গুরুত্ব : (i) তেল ও মোমশিল্পে ওজোন রঞ্জক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (ii) পানীয় জলে ওজোন মিশ্রিত বাতাস পাঠিয়ে জলকে জীবণামুক্ত করা হয়।
𖤂 বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব আলোচনা করো।
▻ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষণীয়। যেমন—➊ জীবের আধার : O2 সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর জীবজগৎ ধারণের অনুকূল। ➋ UV-রশ্মি থেকে রক্ষা : বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত ওজোন গ্যাস (Os) সূর্যের ক্ষতিকারক UV-রশ্মির হাত থেকে জীবকুলকে রক্ষা করে। ➌ নাইট্রোজেনের ভূমিকা : নাইট্রোজেন (N2) উদ্ভিদের প্রোটিন জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। ➍ বৃষ্টিপাত : বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় যা পৃথিবীতে শস্যশ্যামলা পরিবেশের সৃষ্টি করে।
𖤂 সমমণ্ডল (Homosphere) কাকে বলে?
▻ ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 90 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল গঠনকারী উপাদানগুলি মোটামুটি সমধর্মী বলে একে সমমণ্ডল বলে। ➊ অর্থ : Homosphere-এর 'Homo' কথাটির অর্থ ‘সম’ এবং ‘Sphere' কথার অর্থ ‘মণ্ডল’। ➋ উপাদান : (i) বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান (N2, O2, CO2, Ar, He, etc.) (ii) জলীয় বাষ্প ও (iii) জৈব ও অজৈব কণিকা। ➌ শ্রেণিবিভাগ : সমমণ্ডল 4টি উপাদানে বিভক্ত, যথা–ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ার-এর সামান্য অংশ।
𖤂 বিষমমণ্ডল (Heterosphere) কাকে বলে?
▻ সমমণ্ডলের উপরে প্রায় 90-10000 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল গঠনকারী উপাদানগুলি সমপরিমাণে থাকে না বলে, একে বিষমমণ্ডল বলে। ➊ অর্থ : Heterosphere-এর ‘Hetero' কথার অর্থ ‘বিষম’ এবং ‘Sphere' কথার অর্থ ‘মণ্ডল”। ➋ বৈশিষ্ট্য : (i) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে উষ্ণতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। (ii) মূলত এই স্তরে গ্যাসীয় উপাদানের প্রাধান্য বেশি থাকে। ➌ শ্রেণিবিভাগ : (i) আণবিক নাইট্রোজেন স্তর, (ii) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর, (ii) হিলিয়াম স্তর ও (iv) হাইড্রোজেন স্তর।
𖤂 উষ্ণতার বৈপরীত্যের গুরুত্ব লেখো।
▻ উষ্ণতার বৈপরীত্যের গুরুত্বগুলি হল— ➊ জলবায়ুগত গুরুত্ব : (i) জলবায়ুগত উপাদানের পরিবর্তন, (ii) ঘন কুয়াশার সৃষ্টি, (iii) তুহিন-এর সৃষ্টি, (iv) বায়ুমণ্ডলের স্থিরতা সৃষ্টি ও (v) তাপমাত্রার উল্লম্ব বণ্টনে সাহায্য করে। ➋ অর্থনৈতিক গুরুত্ব : (i) ঘন কুয়াশার সৃষ্টির ফলে— দুর্ঘটনা (জাহাজ, এরোপ্লেন, রেল প্রভৃতি), কৃষিজ শস্যের ক্ষতি (পাট, ছোলা, মটরশুটি), ধোঁয়াশা প্রভৃতি প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। (ii) তুহিন—ফল, সবজি, কৃষিজ শস্যের ক্ষতি করে।
𖤂 পার্বত্য বায়ু (Katabetic Wind) বলতে কী বোঝো?
▻ বন্ধুর ভূপ্রকৃতিবিশিষ্ট পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ের উপরের অংশে ঠান্ডা ভারী বায়ুপ্রবাহকে পার্বত্যবায়ু বলে। ➊ সৃষ্টির কারণ : রাত্রিবেলা তাপ বিকিরণের ফলে পর্বতের ঢাল শীতল হয় এবং শীতল ভূমির সংস্পর্শে বায়ুও শীতল হয়। এর ফলে ওই শীতল ও ভারী বায়ু পর্বতের ঢাল বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসে একে নিম্নঢাল বায়ু বা পার্বত্য বায়ু বলে। ▢ প্রভাব : এই বায়ুর ফলে উপত্যকার তলদেশ ঘন কুয়াশায় আবৃত হয়। ▢ ব্যুৎপত্তি : গ্রিক শব্দ ‘Kata'-এর অর্থ ‘নিম্নমুখী'।
𖤂 উপত্যকা বায়ু (Anabetic Wind) কাকে বলে?
▻ ‘U’ আকৃতির পার্বত্য অঞ্চলে দিনের বেলা যে বায়ু উপত্যকার গা ঘেঁষে উপরের দিকে উঠে যায়, তাকে উপত্যকা বায়ু বলে। ▢ সৃষ্টির কারণ : দিনের বেলা উপত্যকা সূর্যের কিরণে বেশি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে এবং তৎসংলগ্ন বায়ুও উত্তপ্ত হয়, ফলে তা হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। ▢ প্রভাব : উপত্যকা মেঘমুক্ত হয় এবং উয় হয়। ▢ ব্যুৎপত্তি : গ্রিক শব্দ 'Ana'-র অর্থ হল ঊর্ধ্বমুখী।
𖤂 আগত সৌরকিরণ (Insolation) কী?
▻ পৃথিবীর উয়তার প্রধান উৎস হল সৌরশক্তি বা সৌরকিরণ। সূর্য থেকে বিকিরিত সৌররশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে বিরামহীনভাবে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। একে আগত সৌরকিরণ (Incoming Solar Radiation) বা Insolation বলে। সূর্য থেকে বিকিরিত তাপশক্তির অতি সামান্য অংশ (200 কোটি ভাগের 1 ভাগ) ক্ষুদ্র তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গরূপে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 300000 কিমি বেগে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। একেই সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বা Insolation বলে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথসা নিয়ান ইন্সটিটিউটের মতে, এর পরিমাণ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 1.94 গ্রাম/ক্যালোরি।
𖤂 কৃষ্ণবস্তু (Black body) কী?
▻ Black body বা কৃষ্ণবস্তু হল এমন একটি কাল্পনিক বস্তু যা সম্পূর্ণরূপে শক্তি নিঃসরণ করতে পারে এবং ওই বস্তুর ওপর যে পরিমাণ শক্তি পড়ে থাকে তাকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ বা শোষণ করতে পারে। এই বিকিরণের ক্ষেত্রে সূর্যের আকৃতি ও প্রকৃতি হল কৃয়বস্তুর মতো।
𖤂 সৌর স্থিরাঙ্ক (Solar Constant) কী?
▻ সূর্য থেকে পৃথিবী প্রতিদিন ও প্রতিবছর প্রায় একই পরিমাণ সৌর তাপীয় ফললাভ করে। সূর্যের গড় দূরত্ব থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওপর উল্লম্ব সৌর বিকিরণের যতটুকু অংশ লম্বভাবে পড়ে, তাকে সৌর স্থিরাঙ্ক বা সৌর ধ্রুবক (Solar Constant) বলে। এর মান হল 1.94 kcal / cm / sec.
𖤂 বায়ুপ্রবাহের কারণসমূহ বর্ণনা করো।
অথবা, বায়ু প্রবাহিত হয় কেন?
▻ বায়ুপ্রবাহের কারণসমূহ নীচে বর্ণনা করা হল— ➊ চাপের তারতম্য : যেখান বায়ুর চাপ বেশি সেখান থেকে যেদিকে বায়ুর চাপ কম হয়, সেদিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। ➋ তাপের তারতম্য : উত্তপ্ত হয়ে প্রসারিত হলে বায়ুর ঘনত্ব, আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে যায়, ফলে বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ➌ জলীয় বাষ্প : জলীয় বাষ্প বিশুদ্ধ বায়ুর চেয়ে হালকা, ফলে বেশি পরিমাণ জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ➍ পৃথিবীর আবর্তন গতি : পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যও বায়ুপ্রবাহ ঘটে।
𖤂 বায়ুচাপের ঢাল (Pressure Gradient) বলতে কী বোঝো ?
▻ সমচাপরেখার সঙ্গে সমকোণ করে উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রতি একক দূরত্বে বায়ুচাপের যে পার্থক্য ঘটে, তাকে বায়ুচাপের অনুভূমিক অবক্রমণ বলা হয়। ভূপৃষ্ঠে একই অনুভূমিক তলে অবস্থিত দুটি বিন্দুর মধ্যে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের অন্তরফলকে ওই দুটি বিন্দুর দূরত্ব দিয়ে ভাগ করলে চাপ অবক্রম পাওয়া যায়। সমচাপরেখা পাশাপাশি অবস্থান করলে উচ্চচাপ অবক্রম এবং দূরে অবস্থান করলে নিম্নচাপ অবক্রম পাওয়া যায়।
𖤂 ‘ফেরেলের সূত্র'-এর ব্যাখ্যা দাও।
▻ নীচে ফেরেলের সূত্র সম্পর্কে বর্ণনা করা হল—➊ প্রবক্তা : 1835 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত আবহবিজ্ঞানী উইলিয়ম ফেরেল। ➋ সূত্র : বায়ুপ্রবাহ সোজাসুজি উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে বেঁকে অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়। ➌ কারণ : পৃথিবীর আবর্তন গতি ও কোরিওলিস বলের প্রভাব। ➍ প্রভাব : বায়ুপ্রবাহের মতো সমুদ্রস্রোতও বেঁকে প্রবাহিত হয়। ➎ উদাহরণ : নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর মিলনে হয়।
𖤂 বাইস ব্যালট সূত্র (Buys Ballot Law) ব্যাখ্যা করো।
▻ বাইস ব্যালট সূত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল— ➊ প্রবক্তা: 1857 খ্রিস্টাব্দে বাইস ব্যালট নামে জনৈক ওলন্দাজ আবহবিজ্ঞানী বায়ুর গতিবিক্ষেপ সম্পর্কে যে তত্ত্বের কথা বলেন, তা ‘বাইস ব্যালট সূত্র' নামে পরিচিত। ➋ সূত্র: উত্তর গোলার্ধে বায়ুপ্রবাহের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালে বামদিকে বায়ুর চাপ কম এবং ডানদিকে বায়ুর চাপ বেশি অনুভূত হবে। দক্ষিণে গোলার্ধে এর বিপরীত অবস্থা অনুভূত হয়। এই সূত্র ‘Buys Ballot Law' নামে পরিচিত। ➌ প্রভাব : বস্তুত উত্তর গোলার্ধে বায়ু সমপ্রেষরেখা বরাবর উচ্চচাপ অঞ্চলের ঘড়ির কাঁটা অনুসরণ করে এবং নিম্নচাপ অঞ্চলের ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে এর ঠিক বিপরীত অবস্থার সৃষ্টি হয়।
𖤂 কোরিওলিস বল (Coriolis Force) বলতে কী বোঝো?
▻ কোরিওলিস বল বলতে আমরা জানতে পারি— ➊ প্রবক্তা: 1835 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি পদার্থবিদ গ্যাসপার দ্য কোরিওলিস (1792-1843 ) প্রথম কোরিওলিস বলের ধারণা দেন। ➋ সংজ্ঞা : কোনো বস্তুর আবর্তনজনিত কারণে উদ্ভূত কাল্পনিক বলের নাম কোরিওলিস বল। পৃথিবীর আবর্তন গতির কারণে উদ্ভূত দিকবিক্ষেপক শক্তি আসলে কোরিওলিস। পদার্থবিদ্যায় কোরিওলিস বল বলতে কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণকে বোঝায়। ➌ প্রভাব : কোরিওলিস বলের প্রভাবে বায়ু উত্তর গোলার্ধে নিম্নচাপযুক্ত কেন্দ্রের চতুর্দিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতক্রমে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার অভিমুখে প্রবাহিত হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে মিসাইল ও কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের সময়ও কোরিওলিস বলের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
𖤂 রসবি তরঙ্গ (Rossby Wave) বলতে কী বোঝো?
▻ ঊর্ধ্বাকাশে সমচাপরেখার সঙ্গে সমান্তরালে প্রবাহিত বায়ুকে জিওস্ট্রোফিক বায়ু বলে। ভূপৃষ্ঠের 2 কিমি উচ্চতার উপরে জিওস্ট্রোফিক বায়ুপ্রবাহ তরঙ্গায়িত এবং সর্পিল পথে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। 1930-এর দশকে C. G Rossby নামে এই জনৈক আবহবিজ্ঞানী গাণিতিক উপায়ে এ ধরনের বায়ুপ্রবাহের উপস্থিতি প্রমাণ করেছিলেন বলে, এই বায়ুকে ‘Rossby Wave’ বলা হয়। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে 3-6টি Rossby Wave দেখা যায়
𖤂 জিওস্ট্রোফিক বায়ু (Geostrophic Wind) কাকে বলে?
▻ ঊর্ধ্ববায়ুতে সমচাপরেখার সঙ্গে সমান্তরালে একপ্রকার বায়ু প্রবাহিত হয়, যা Geostrophic Wind নামে পরিচিত। এই ধরনের বায়ুর মূল বৈশিষ্ট্য হল—➊ উত্তর গোলার্ধের নিম্নচাপ অঞ্চল বায়ুপ্রবাহের বামদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এটি বায়ুপ্রবাহের ডানদিকে থাকে। ➋ 0.5 কিমি উচ্চতায় এই বায়ু উভয় গোলার্ধে পশ্চিম থেকে পূর্বে তরঙ্গাকারে প্রবাহিত হয়। ➌ মূলত কোরিওলিস শক্তি ও বায়ুচাপের অবক্রমণজনিত শক্তি এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ➍ মূলত বায়ুচাপের ঢাল ও আবর্তন বল সমান হলে Geostrophic সমতা রক্ষিত হয়।
𖤂 অভিকর্ষজ বায়ু (Gravitational Wind) বলতে কী বোঝো?
▻ পৃথিবীর সকল বরফাচ্ছাদিত উঁচু উপকূল অঞ্চলে শীতল ও ভারী বায়ু নিজভাবে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহকে অভিকর্ষজ বায়ু বলে। ➊ প্রবাহস্থান : গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার উপকূল অঞ্চলে এই বায়ু নিয়মিত প্রবাহিত হয়। ➋ গতিবেগ : এর গতিবেগ ঘণ্টায় 60-80 কিমি। ➌ উদাহরণ : ইটালির অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্রের উঁচু উপকূল অঞ্চল যখন শীতকালে বরফে ঢেকে যায় তখন এই বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। একে স্থানীয় ভাষায় ‘বোরা' বলে।
𖤂 একম্যান স্পাইরাল (Bkman Spiral) কাকে বলে?
▻ ভূপৃষ্ঠে বায়ুর ঘর্ষণ সর্বাধিক হয়। আবার ঊর্ধ্বাকাশে বায়ুর ঘর্ষণশক্তির কার্যকারিতা তেমন থাকে না। তখন বায়ুর কোরিওলিস বল অধিক কার্যকরী হয়। অর্থাৎ বায়ুর উচ্চগতিবেগে কোরিওলিস বল অধিক কার্যকরী এবং নিম্ন গতিবেগে কোরিওলিস বল কম কার্যকরী। ফলে বায়ু তির্যকভাবে প্রবাহিত হয়। ঘর্ষণশক্তি বৃদ্ধি পেলে বায়ুপ্রবাহে তির্যকতা বাড়ে। উচ্চতা বৃদ্ধিতে এই বায়ুপ্রবাহে ঘূর্ণন দেখা যায়। এরকম ঘূর্ণন ‘একম্যান স্পাইরাল' নামে পরিচিত।
𖤂 ‘জিওস্ট্রোফিক ভারসাম্য (Geostrophic Balance) বলতে কী বোঝো?
▻ ঊর্ধ্ববায়ুতে বায়ুচাপের পার্থক্যের মাত্রা, বায়ুচাপের ঢাল এবং আবর্তন বল সমান হলে বায়ু কোনোরকম না বেঁকে সোজাপথে স্থিরভাবে প্রবাহিত হয়। এরকম অবস্থাকে জিওস্ট্রোফিক ভারসাম্য বলে। মূলত বায়ুর চাপজনিত শক্তি ও কোরিওলিস বল এইরকম ভারসাম্য বজায় রাখে।
𖤂 আর্দ্রতা (Humidity)-র সংজ্ঞা।
▻ বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা বলতে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতাকে বোঝায়। কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে বায়ুমণ্ডলের যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, তাকে বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা বলে। বায়ুমণ্ডলে এর পরিমাণ খুবই কম (1%-এর কম)। আর্দ্রবায়ুতে 2-5% জলীয় বাষ্প থাকে। উয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রবায়ুতে জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বাড়ে। ▢ বায়ুর আর্দ্রতা চারভাবে প্রকাশ করা হয়। যথা—(i) চরম আর্দ্রতা, (ii) আপেক্ষিক আর্দ্রতা, (iii) আর্দ্রতার গুণাঙ্ক ও (iv) বায়ুর মিশ্রণ অনুপাত।
𖤂 চরম আর্দ্রতা (Absolute Humidity) কাকে বলে?
▻ একটি নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে প্রকৃত জলীয় বাষ্পের পরিমাণের উপস্থিতিকে বায়ুর চরম আর্দ্রতা বলে। চরম আর্দ্রতার ক্ষেত্রে বায়ুর আয়তনকে ঘনমিটারে এবং জলীয় বাষ্পের পরিমাণকে গ্রামে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে কত গ্রাম জলীয় বাষ্প আছে, তা চরম আর্দ্রতাকে নির্দেশ করে। যার পাথর্ক্য ঘটে মূলত বাতাসের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে। ▢ একক : গ্রাম/ঘনমিটার। যেমন-20 গ্রাম/ঘনমিটার।
𖤂 আপেক্ষিক আর্দ্রতা (Relative Humidity) কী?
▻ কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে প্রকৃত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ এবং সেই উষ্ণতায় ওই বায়ুকে সম্পৃক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্পের অনুপাতের শতকরা হারকে ‘আপেক্ষিক আর্দ্রতা' বলে। ▢ বৈশিষ্ট্য : (i) বর্ষাকালে সর্বাধিক ও শীতকালে সর্বনিম্ন বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকে। (ii) আপেক্ষিক আর্দ্রতার ওপর ঘনীভবন নির্ভরশীল। ▢ নির্ণয় : শুষ্ক ও আর্দ্রকুণ্ড থার্মোমিটারের সাহায্যে আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্ণয় করা হয়।
𖤂 আর্দ্রতার গুণাঙ্ক বা বিশেষ আর্দ্রতা (Specific Humidity) কাকে বলে?
▻ কোনো বিষয়ে বায়ুতে মোট আর্দ্র বায়ুর ভর এবং জলীয় বাষ্পের ভরের অনুপাতকে বিশেষ আর্দ্রতা বা আর্দ্রতার গুণাঙ্ক বলে। অর্থাৎ প্রতি কিলোগ্রাম বায়ুতে যত জলীয় বাষ্প থাকে তাকেই বিশেষ আর্দ্রতা বলে।' ▢ একক : গ্রাম / কিলোগ্রাম । ▢ বৈশিষ্ট্য : (i) ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে বা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি উচ্চতার সাপেক্ষে উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলেও আর্দ্রতার গুণাঙ্কের কোনো পরিবর্তন হয় না। (ii) আবহবিদ্যায় আর্দ্রতার গুণাঙ্কের গুরুত্ব অপরিসীম।
𖤂 বায়ুর মিশ্রণ অনুপাত (Mass Mixing Ratio) কী?
▻ প্রতি একক ওজন পরিমাণ শুষ্কবায়ুতে যতটুকু ওজন পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে, তাকে বায়ুর মিশ্রণ অনুপাত বলে। এই অনুপাত নির্ভর করে মূলত এক গ্রাম জলীয় বাষ্পের সঙ্গে প্রতি কিলোগ্রাম শুষ্ক বাতাসের ওজনের ওপর। বায়ুর মিশ্রণ অনুপাতের একক হল গ্রাম/ কিলোগ্রাম।
𖤂 বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতার নিয়ন্ত্রকগুলি কী কী?
▻ বায়ুতে আপেক্ষিক আর্দ্রতার উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রকগুলি হল— ➊ জলীয় বাষ্প : বায়ুতে জলীয় বাষ্পের জোগান বাড়লে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়ে এবং জোগান কমলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে। ➋ উষ্ণতা : বায়ুর উষ্ণতার সঙ্গে আপেক্ষিক আর্দ্রতার ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক। উষ্ণতা বাড়লে জলীয় বাষ্পের ধারণ ক্ষমতা বাড়ে এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে। ➌ বৃষ্টিপাত : বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়লে আপেক্ষিক আর্দ্রতাও বাড়ে।
➍ বায়ুর চাপ : সাধারণত নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি হয়।
𖤂 ঘনীভবন (Condensation) কী?
▻ বাষ্পপূর্ণ সম্পৃক্ত বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে, অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প যে প্রক্রিয়ায় ধুলো ও কার্বন কণাকে আশ্রয় করে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তরল জলকণায় বা তুষারকণায় পরিণত হয়, তাকে ঘনীভবন বলে। ➊ সৃষ্টির কারণ : (i) আপেক্ষিক আর্দ্রতা 100% হলে বায়ু সম্পৃক্ত হয়ে ঘনীভবন ঘটে। (ii) বায়ুর আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে শীতল হলে, উষ্ণ বায়ু শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এলে এবং তাপ বিকিরণের ফলে বায়ু শীতল হলে বায়ুর ঘনীভবন ঘটে। উদাহরণ : বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বে এবং ভূপৃষ্ঠের নিকট শিশির, তুষার, কুয়াশা ঘনীভবনের প্রকৃষ্ট রূপ।
𖤂 মেঘ (Cloud) কাকে বলে?
▻ ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলের ঘনীভবনের একটি রূপ হল মেঘ। বায়ুতে অবস্থিত ভাসমান জলীয় বাষ্পের ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলকণা এবং ভূমি থেকে যথেষ্ট উপরে সৃষ্ট ভাসমান ঘনপুঞ্জকে মেঘ বলে। উচ্চতার ভিত্তিতে মেঘ তিন প্রকার, যথা— ➊ উঁচু মেঘ : 6 কিমি বেশি উচ্চতায় মূলত তুষারকণার সমষ্টিরূপে বেশি থাকে। ➋ মাঝারি মেঘ : 2-6 কিমি উচ্চতায় তুষার ও জলকণা মিশে থাকে। ➌ নীচু মেঘ : ভূপৃষ্ঠ থেকে 2 কিমি উচ্চতায় সূক্ষ্ম জলকণার সমষ্টিরূপে থাকে।
𖤂 আকৃতি অনুসারে মেঘের শ্রেণিবিভাগ করো।
▻ ইংরেজ রাসায়নবিদ লিউক হাওয়ার্ড আকৃতি ও চেহারা অনুসারে মেঘকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন—
➊ সিরাস বা আলোক মেঘ : পালক বা আঁশের মতো উঁচু মেঘ।
➋ স্ট্র্যাটাস বা স্তরে মেঘ : স্তরে স্তরে সজ্জিত মেঘ।
➌ কিউমুলাস বা স্তূপ মেঘ : পেঁজা তুলোর স্তূপের মতো মেঘ।
➍ নিম্বাস বা বাদল মেঘ : কালো রঙের মেঘ ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এই মেঘ আবার দুই প্রকার—(a) নিম্বো-স্ট্র্যাটাস ও (b) কিউমুলোনিম্বাস মেঘ।
𖤂 সব মেঘে বৃষ্টি হয় না কেন?
▻ সব মেঘে বৃষ্টি হয় না, কারণ— i. মেঘের গভীরতা অধিক না হলে ঊর্ধ্বাকাশের প্রবল বায়ুপ্রবাহ মেঘকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে। ii. জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণা তৈরির সময় সৃষ্ট লীনতাপে জলকণা আবার বাষ্পীভূত হয়।
iii. অতি সূক্ষ্ম জলকণাগুলি অনেক সময় পরস্পর সংযুক্ত হয়ে ভারী হতে পারে না। ফলে মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূপৃষ্ঠে পড়তে পারে না।
𖤂 শিশিরাঙ্ক কাকে বলে?
▻ শিশিরাঙ্ক হল সেই সন্ধি উষ্ণতা, যে উষ্ণতায় কোনো বায়ু সম্পূর্ণরূপে সম্পৃক্ত হয়ে যায় এবং তার থেকে কম হলে স্বাভাবিকভাবেই ঘনীভবন শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ বায়ুতে বিদ্যমান জলীয় বাষ্পের দ্বারা যে উষ্ণবায়ু সম্পৃক্ত হয়, তাকে সেই উষ্ণতায় বায়ুর শিশিরাঙ্ক বলে। উদাহরণ : 1000 মিলিবার বায়ুর চাপে 30°C উষ্ণতায় বায়ুর জলীয় বাষ্পের ধারণক্ষমতা হল 27.69 গ্রাম/কিগ্রা।
𖤂 আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল (ITCZ) কী?
▻ আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল বলতে আমরা বুঝি- ➊ অর্থ : ITCZ কথাটির অর্থ হল 'Inter Tropical Convergence Zone' বা আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চল। ➋ সৃষ্টি : 5°-10° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর মিলনের ফলে সৃষ্টি হয়।
𖤂 নিরক্ষীয় শান্ত বলয় (Equatorial Belts of Calm / Doldrums) কী?
▻ উত্তব-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে (5-10 উত্তর/দক্ষিণ) এসে অনবরত উয় ও লঘু হয়ে উপরে উঠে যায়। এজন্য নিরক্ষীয় বায়ুর গতি কেবল ঊর্ধ্বমুখী। বায়ুর এই ঊর্ধ্বপ্রবাহের জন্য এখানে ভূপৃষ্ঠের কোনো পার্শ্বপ্রবাহ লক্ষ করা যায় না। কাজেই এখানে ভূপৃষ্ঠে বায়ুর সমান্তরাল গতি বোঝা যায় না। এখানে বায়ু সর্বদাই শান্ত থাকে। এজন্য নিরক্ষীয় শাস্ত বলয়কে Doldrum বা Equatorial Belts of Calm বলে।
𖤂 ক্রান্তীয় শান্তবলয় (Sub-Tropical Belts of Calms) কী?
▻ কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় অঞ্চলের বায়ু প্রধানত নিম্নমুখী বলে এখানে বায়ুর পার্শ্বপ্রবাহ লক্ষ করা যায় না। অর্থাৎ অনুভূমিকভাবে বায়ু সঞ্চালিত হয় না। এই কারণে এই অঞ্চলের বায়ুতে শান্তভাব বজায় থাকে। এজন্য একে কর্কটীয় ও মকরীয় শান্ত বলয় বা ক্রান্তীয় শান্তবলয় বলে।
𖤂 অশ্ব-অক্ষাংশ (Horse Latitude) বলতে কী বোঝো?
▻ আটলান্টিক মহাসাগরের উপর বিস্তৃত কর্কটীয় শান্ত বলয়ের 30°-35° অক্ষাংশ অশ্ব-অক্ষাংশ (Horse Latitude) নামে পরিচিত। প্রাচীনকালে অশ্ববোঝাই পালতোলা জাহাজগুলি কর্কটীয় শান্তবলয়ে এসে বাধাহীন হয়ে পড়ত। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আয়নবায়ুর এই প্রবাহে পালতোলা জাহাজগুলিকে 30°-35° অক্ষাংশের মধ্যে কর্কটীয় শান্তবলয়ে অপেক্ষা করতে হত। নাবিকরা খাদ্য ও পানীয় জলের খরচ কমানোর জন্য জাহাজকে হালকা করার উদ্দেশ্যে অশ্বগুলিকে সমুদ্রে ফেলে দিত। সেই থেকে এই কর্কটীয় শাস্তবলয়টি ‘অশ্ব-অক্ষাংশ' নামে পরিচিত।
𖤂 বায়ুচাপ কক্ষ (Pressure Cell) কী?
▻ পৃথিবীর স্থায়ী চাপবলয়গুলি নিরবচ্ছিন্নভাবে বলয় আকারে পূর্ব-পশ্চিমে একটানা বিস্তৃত না হয়ে কতকগুলি ছোটো ছোটো কক্ষরূপে অবস্থান করে এদের বায়ুচাপ কক্ষ বলে। ▢ উৎপত্তির কারণ : (i) একই অক্ষরেখা বরাবর স্থলভাগ ও জলভাগ সমানভাবে বণ্টিত হয়নি। (ii) তাপগ্রহণের তারতম্য (উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে) জনিত কারণ। ▢ শ্রেণিবিভাগ : বায়ুচাপ কক্ষকে 2 টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে—(i) উচ্চচাপবিশিষ্ট কক্ষ, (ii) নিম্নচাপবিশিষ্ট কক্ষ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দক্ষিণ গোলার্ধ অপেক্ষা উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগের পরিমাণ বেশি থাকায় বায়ুচাপ কক্ষও অপেক্ষাকৃত বেশি।
𖤂 বায়ুর উষ্ণতা ও চাপের মধ্যে সম্পর্ক লেখো।
▻ উষ্ণতা ও বায়ুর চাপ গভীর সম্পর্কযুক্ত। কারণ— i. কোনো অঞ্চলের বায়ু উষ্ণ হলে তা প্রসারিত ও হালকা হয়। এর ফলে বায়ুর চাপ কম হয়। ii. কোনো অঞ্চলের বায়ু শীতল হলে তা ভারী ও ঘন হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এরূপ বায়ুর চাপ বেশি হয়। iii. কোনো অঞ্চলের বায়ু হঠাৎ ব্যাপকভাবে উষ্ণ উয় হয়ে পড়লে সেই অঞ্চলে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এর ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে শীতল উচ্চচাপযুক্ত বায়ু ওই অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে এবং সেই বায়ুও পর্যায়ক্রমে উষ্ণ হয়ে উপরে উঠে যায়। iv. বাতাস উষ্ণ হলে তা প্রসারিত হয় বলে, এরূপ বাতাসের জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । এই কারণে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর চাপ কম হয় ৷
𖤂 বায়ুচাপ বলয়গুলির সঙ্গে নিয়তবায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক কী?
▻ বায়ুচাপের পার্থক্যের কারণেই নিয়তবায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। নিয়তবায়ু তিনপ্রকার, যথা— (i) আয়নবায়ু, (ii) পশ্চিমাবায়ু ও (iii) মেরুবায়ু। ▢ আয়নবায়ু : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত বায়ু। ▢ পশ্চিমাবায়ু : কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তের নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত বায়ু। ▢ মেরুবায়ু : সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু ও কুমেরু বৃত্তের নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত বায়ু।
𖤂 'Walker Circulation' বলতে কী বোঝো?
▻ 'Walker Circulation' সম্পর্কে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী G T Walker (1922-23 ) প্রথম এই তত্ত্বের ধারণা দেন। ➊ সৃষ্টির কারণ : এটি একটি পরিচলন চক্র বা পরিচলন কোশ, যার উৎপত্তির কারণ প্রশান্ত মহাসাগরে নিরক্ষরেখা বরাবর সমুদ্রপৃষ্ঠীয় বায়ুতাপের ফল। ➋ বিষয়বস্তু : উম্ন মহাদেশ ও সমুদ্রের উন্নতর অংশের উপরে বায়ু ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় বায়ুচাপ হ্রাস পায়। অন্যদিকে, শীতল মহাদেশীয় অংশে বায়ুর অবতরণ এবং উপক্রান্তীয় উচ্চচাপীয় কোশের প্রভাবে বায়ুর উচ্চচাপ তৈরি হয়। যার ফলে পূর্ব-পশ্চিমে একটি তীক্ষ্ণ বায়ুচাপের ঢাল (Steep Pressure Gradient) তৈরি হয়, যা বায়ুর পরিচলন কোশীয় বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি করে, একে ‘Walker Circulation' বলে।
𖤂 বায়ুচাপ-বলয়গুলি স্থান পরিবর্তন করে কেন?
▻ ঋতু পরিবর্তনের ফলে ভূপৃষ্ঠের চাপ-বলয়গুলি সূর্যের আপাতগতির সঙ্গে সঙ্গে তাদের সীমানা পরিবর্তন করে 100 উত্তর ও 10° দক্ষিণে সরে যায়। উত্তরায়ণের সময় জুলাই মাসে ও দক্ষিণায়নের সময় ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ উষ্ণতা যথাক্রমে নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে অনুভূত হয়। ফলে বায়ু চাপ-বলয়গুলি তাদের স্থান পরিবর্তন করে। ➊ কারণ : (i) স্থলভাগ ও জলভাগের অবস্থান, (ii) সূর্যের আপাত বার্ষিক গতি, (iii) সূর্যরশ্মির পতন কোণের পার্থক্য । ➋ প্রভাব : (i) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবছর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন। (ii) ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন শুষ্কতা ও শীতকালীন বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। (iii) নিয়তবায়ুপ্রবাহেরও পরিবর্তন ঘটে।
𖤂 বায়ুপ্রবাহ (Wind Movement) ও বায়ুস্রোত (Wind Current)-এর সংজ্ঞা দাও।
▻ বায়ুপ্রবাহ ও বায়ুস্রোতের সংজ্ঞা নীচে দেওয়া হল- ➊ বায়ুপ্রবাহ : ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বা অনুভূমিকভাবে যখন কোনো স্থানের বায়ু অপর একটি স্থানের দিকে ছুটে যায়, তখন তাকে বায়ুপ্রবাহ বলে। এক্ষেত্রে উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চলের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। ➋ বায়ুস্রোত : উপর থেকে নীচে বা নীচ থেকে উপরে বায়ুর উল্লম্ব চলাচলকে বায়ুস্রোত বলে। উষ্ণতার তারতম্য মূলত বায়ুস্রোতের সৃষ্টি করে।
𖤂 গ্রিনহাউস এফেক্ট কাকে বলে?
▻ বিগত কয়েক দশক ধরে অতিমাত্রায় বৃক্ষচ্ছেদন ও অত্যধিক মাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানির কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে CO2, CFC, CH, প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। এই সমস্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বস্তরে একটি স্বচ্ছ আবরণের সৃষ্টি করেছে। যার মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র তরঙ্গ রূপে সূর্যরশ্মি খুব সহজে প্রবেশ করে, কিন্তু বিকিরিত সূর্যরশ্মি বৃহৎ তরঙ্গরূপে পুনরায় মহাশূন্যে ফিরে যেতে পারে না। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে একে গ্রিনহাউস এফেক্ট বলা হয়।
𖤂 প্রধান প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস ও উৎসসমূহ লেখো।
▻ প্রধান প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস ও তাদের উৎস সমূহ নীচে বর্ণনা করা হল―
গ্রিনহাউস গ্যাস : কার্বন ডাইঅক্সাইড (55%)
উৎস কেন্দ্র : জীবাশ্ম জ্বালানি, কয়লা, খনিজ তেল, অরণ্যধ্বংস প্রভৃতি।
গ্রিনহাউস গ্যাস : মিথেন (15%)
উৎস কেন্দ্র : পশুচারণ, ধানজমি, জলাজমি, গ্যাস ও কয়লা খনি অঞ্চল।
গ্রিনহাউস গ্যাস : ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (24%)
উৎস কেন্দ্র : হিমকরণ গ্যাস, এরোপ্লেন, শিল্প প্রক্রিয়াকরণ (ইলেক্ট্রনিক ও রংশিল্প)।
গ্রিনহাউস গ্যাস : নাইট্রাস অক্সাইড (6%)
উৎস কেন্দ্র : জীবাশ্ম জ্বালানি, সার, জৈব পদার্থের বিচলন।
𖤂 গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণ কী?
▻ গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির প্রধান কারণসমূহ হল – (i) জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে CO2-এর পরিমাণ বৃদ্ধি। (ii) জ্বালানি কাঠের ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলের CO2-এর পরিমাণ বৃদ্ধি। (iii) পচনশীল জৈব আবর্জনা, গবাদিপশুর গোবর, জলাভূমি ও ধানখেত থেকে নিঃসৃত গ্যাসের ফলে CH-এর পরিমাণ বৃদ্ধি। (iv) রেফ্রিজারেশন প্রক্রিয়া, ইলেকট্রনিক শিল্প ও রং শিল্পে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে CFC-র পরিমাণ বৃদ্ধি এবং (v) জমিতে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সারের ব্যবহারের ফলে NO2-এর বৃদ্ধি।
𖤂 গ্রিনহাউস নিয়ন্ত্রণের উপায়সমূহ লেখো।
▻ গ্রিনহাউস নিয়ন্ত্রণের উপায়সমূহ হল—(i) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস, (ii) অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, (ii) ফ্রেয়ন গ্যাসের উৎপাদন বন্ধ, (iv) বনসৃজনে উৎসাহদান, (v) প্রযুক্তির উন্নতি, (vi) আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ, (vii) পরিবর্ত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি, (viii) জনসচেতনতা বৃদ্ধি, (ix) গবেষণায় উৎসাহদান, (x) জ্বালানির সাশ্রয় ইত্যাদি।
𖤂 ওজোন (Ozone) কী?
▻ ‘Ozo´ একটি গ্রিক শব্দ, যার অর্থ 'to small’। বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে 15-30 কিমি (মতান্তরে 20.50 কিমি)-র মধ্যে নীল রঙের আঁশটে গন্ধযুক্ত গ্যাসীয় পদার্থই ওজোন (O3) নামে পরিচিত। একটি অক্সিজেন অণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণু নিয়ে ওজোন গঠিত হয়। তাই একে O,-এর রূপভেদও বলে। 1840 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী Schonbein সর্বপ্রথম এই গ্যাস আবিষ্কার করেন। ▢ গুরুত্ব : i. ওজোনস্তর সূর্যের অতি ক্ষতিকারক উপাদান অতিবেগুনি রশ্মিকে বাধা দিয়ে জীবকুলকে রক্ষা করে । ii. স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে এই স্তর পাতলা আবরণ সৃষ্টি করায় বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের তাপমাত্রাও বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
𖤂 ওজোনস্তরের সৃষ্টি ব্যাখ্যা করো।
▻ বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের সৃষ্টি হয় দুটি অনুক্রমিক আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে। যেমন―➊ এই বিক্রিয়ায় O2 অণুগুলি অতিবেগুনি রশ্মির (UV-C, UV-B) ফোটনকণার দ্বারা দুটি O2 পরমাণুতে বিয়োজিত হয়। যেমন― O2+ অতিবেগুনি রশ্মি O + O অক্সিজেন বিয়োজন। ➋ এই বিক্রিয়ায় আলোক বিয়োজনে উৎপন্ন O2 পরমাণুর সঙ্গে O2 অণুর সংযোজনে উৎপন্ন হয় ওজোন গ্যাস। যেমন— O2 + O(M) → O3+ M (এখানে M অনুঘটক)
𖤂 ওজোন গহ্বর (Ozone hole) কী?
▻ ওজোন গহ্বর হল পরিবেশ দূষণের একটি পদ্ধতি। বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ওজোন গ্যাসের যে প্রাকৃতিক পরদা আছে তা ধীরে ধীরে পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ওজোনস্তরের এই ক্ষয়কেই ড. ফারনেস 'Ozone hole' বলেছেন। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের উপর থেকে ওজোনস্তর পাতলা হয়ে যাচ্ছে। ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব 200 DU-এর নীচে নেমে গেলে ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়।
𖤂 ওজোনের হ্রাসের প্রভাবগুলি উল্লেখ করো।
▻ ওজোনের হ্রাসের প্রভাবগুলি নীচে উল্লেখ করা হল— ➊ মানুষের ওপর ওজোন গ্যাসের প্রভাব : মানুষের ত্বকে ক্যানসার, চোখে ছানি পড়া, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, বন্ধ্যাত্ববৃদ্ধি ইত্যাদি ঘটনা ওজোন হ্রাসের ফলে ঘটছে। ➋ উদ্ভিদের ওপর প্রভাব : UV-B রশ্মির প্রভাবে 20-50% পাতায় ক্লোরোফিলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছের পাতা, ফুল ও বীজের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। ➌ জলবায়ুর ওপর প্রভাব : বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটাচ্ছে, এবং উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতির পরিবর্তন হচ্ছে।
𖤂 বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতিগুলি লেখো।
▻ বায়ুমণ্ডল মূলত তিনটি প্রধান পদ্ধতির মাধ্যমে উত্তপ্ত হয়। যেমন— ➊ বিকিরণ : আগত সৌর বিকিরণে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয় এবং ভূপৃষ্ঠ দ্বারা বিকীর্ণ তাপে সর্বনিম্ন বায়ুস্তরও উত্তপ্ত হয়। ➋ পরিবহণ : উষ্ণ বায়ুস্তরের সংস্পর্শে থাকা পরবর্তী শীতল বায়ুতে তাপ সঞ্চালিত হয়ে উত্তপ্ত হয়। ➌ পরিচলন : উষ্ণ বায়ু হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় এবং ওই শূন্যস্থান পূরণে আশেপাশের শীতল বায়ু ছুটে এসে উষ্ণও ঊর্ধ্বগামী হয়।
𖤂 বৈপরীত্য উষ্ণতা (Inversion of Temparature) কী?
▻ বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সর্বদা উষ্ণতা হ্রাস না পেয়ে, অনেক সময় উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় একে বৈপরীত্য উষ্ণতা বলে।
▢ প্রভাব :
i. উপত্যকায় ঘন কুয়াশার সৃষ্টি করে।
ii. কৃষিকাজের ক্ষতি হয়।
iii. উপত্যকার ঊর্ধ্বাংশে উয়তা বৃদ্ধি হেতু বরফ গলন দেখা যায়।
উদাহরণ : শীতকালে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে মাঝে মাঝে লক্ষণীয় হয়।
𖤂 বৈপরীত্য উষ্ণতার অনুকূল পরিবেশের বর্ণনা দাও।
▻ বৈপরীত্য উষ্ণতার জন্য কতকগুলি অনুকূল পরিবেশের প্রয়োজন। যেমন— (i) সুদীর্ঘ রাত্রি, (ii) মেঘহীন আকাশ, (ii) শান্ত আবহাওয়া, (iv) বরফাবৃত ভূপৃষ্ঠ, (v) শুষ্ক বায়ু, (vi) আগত শীতল বায়ুপুঞ্জ, (vii) ঢালু উপত্যকা প্রভৃতি।
𖤂 স্থলভাগ ও জলভাগের উষ্ণতার পার্থক্যের কারণ কী?
▻ স্থলভাগ ও জলভাগের উষ্ণতার পার্থক্যের প্রধান কারণ হল— ➊ জলপৃষ্ঠ থেকে সূর্যালোক যতটা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়, স্থলভাগে তেমন হয় না। ➋ জলভাগে যেমন পরিচলন পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালন সম্ভব হয়, স্থলভাগের ক্ষেত্রে তা মোটেই সম্ভব নয়। ➌ জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ তাপের বেশি সুপরিবাহী। ➍ কোনো একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় স্থলভাগ যতটা উত্তপ্ত হয়, সেই পরিমাণ উত্তপ্ত হতে জলভাগের বেশি উষ্ণতার প্রয়োজন হয়। ফলে একই উদ্বৃতায় স্থলভাগের উত্তাপ বেশি হয়, জলভাগের কম হয়। ➎ ভূপৃষ্ঠের রঙের ওপরও সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল নির্ভর করে।
𖤂 মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি মেঘহীন রাত্রির চেয়ে উষ্ণ হয় কেন?
▻ মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অপেক্ষাকৃতভাবে মেঘহীন রাত্রির চেয়ে উষ্ণ। কারণ আকাশের ঘন মেঘের আবরণ পৃথিবীর পক্ষে কম্বলের মতো কাজ করে। আকাশে মেঘের আবরণ পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে দীর্ঘ তরঙ্গরূপে বিকিরিত উত্তাপকে বেরোতে দেয় না। মেঘের নিম্নস্তরে জমতে থাকে এই কারণেই মেঘাচ্ছন্ন রাত্রিতে গরম বোধ হয়। মেঘ কেটে গেলেই তীব্রভাবে শীত অনুভূত হয়। মেঘহীন রাতে শীত বেশি লাগে।
𖤂 সমোষ্নরেখা (Isotherm) কাকে বলে?
▻ বছরের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ভূপৃষ্ঠের যেসব স্থানের গড় উষ্ণতা সমান, মানচিত্রে সেইসব স্থানের উপর দিয়ে যে কাল্পনিক রেখা টানা হয়, তাকে সমোষ্নরেখা বলে। ▢ বিশেষত্ব : (i) সমোষ্নরেখা টানার সময় সেই স্থানের উষ্ণতাকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতায় পর্যবসিত করা হয়। (ii) মূলত জানুয়ারি ও জুলাই মাসের সমোষ্নরেখা মানচিত্রে প্রদর্শিত হয়। ▢ বৈশিষ্ট্য : (i) কোনো স্থানের উষ্ণতার সঠিক ধারণা পাওয়া যায়। (ii) রেখাগুলো কখনও পরস্পরকে ছেদ করে না। (iii) পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত হয়। (iv) জানুয়ারি মাসে স্থলভাগের উপর নিরক্ষরেখার দিকে এবং জলভাগের উপর মেরু অঞ্চলের দিকে বেঁকে যায়। জুলাই মাসে এর উলটো ঘটনা ঘটে।
𖤂 তাপ বিষুবরেখা (Heat Equator) কী?
▻ বছরের বিশেষ ঋতু বা নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিটি দ্রাঘিমার সর্বোচ্চ উষ্ণতাকে মানচিত্রে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে তাপ বিষুবরেখা বলে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর লম্বভাবে সূর্যকিরণের জন্য উষ্ণতা সর্বোচ্চ হয়। তাই তাপ বিষুবরেখা নিরক্ষরেখা বরাবর অবস্থান করে। সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে রেখাটি কিছুটা উত্তরে বা দক্ষিণে সরে যায়।
𖤂 বায়ুচাপ (Atmospheric Pressure) -এর সংজ্ঞা দাও।
▻ বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদানগুলির অণুসমূহের অবিরাম সংঘর্ষের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে প্রযুক্ত বলকে বায়ুচাপ বলে। তবে সাধারণভাবে একক আয়তনে বা একক ক্ষেত্রফলে বায়ু উল্লম্বভাবে বা অনুভূমিকভাবে যে চাপ দেয়, তাকে বায়ুচাপ বলা হয় ৷ ▢ বৈশিষ্ট্য : (i) বায়ুচাপ মাপার একক হল মিলিবার। (ii) প্রমাণ সমুদ্র পৃষ্ঠীয় বায়ুচাপ হল 1013.25 Mb বা 760 মিলিমিটার পারদস্তম্ভের সমান। (iii) বায়ু সবদিক থেকেই চাপ দেয়। শ্রেণিবিভাগ : বায়ুর চাপ দুই প্রকার—(i) উচ্চচাপ ও (ii) নিম্নচাপ।
𖤂 প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও বায়ুচাপ হ্রাসের গড় বর্ণনা করো।
▻ 45° অক্ষাংশে 15°C তাপমাত্রায় গড় বায়ুচাপ/সমুদ্র সমতলে বায়ুচাপ হল 1013.25 মিলিবার। ➊ বায়ুচাপ হ্রাসের গড় : ভূপৃষ্ঠের গড়ে 1000 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রায় 12.60 মিলিবার বায়ুচাপ কমে। যেমন— (i) 110 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর চাপ কমে 1.34 Mb । (ii) 270 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর চাপ কমে 3.4 Mb। (iii) 900 ফুট উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুর চাপ কমে 1 ইঞ্চি ।
𖤂 লী-তরঙ্গ (Lee Wave) বলতে কী বোঝো?
▻ প্রবল বায়ুস্রোত পার্বত্য অঞ্চল অতিক্রম করে তরঙ্গের আকারে বেশ কিছু দূরে প্রবাহিত হয়। এই ধরনের বায়ুস্রোতরে ‘লী-তরঙ্গ' বলে।সাধারণত লম্বা ধরনের পাহাড় অতিক্রম করার সময় বায়ুস্রোেত লী-তরঙ্গের সৃষ্টি করে। এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য 3-30 কিমির মধ্যে বিদ্যমান। এই তরঙ্গের প্রভাবে অনেক সময় বিমানপোত ধ্বংস হয়ে যায়। উদাহরণ : ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতে যখন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এসে আঘাত করে, তখন ‘লী-তরঙ্গ'-এ সৃষ্টি হয়।
𖤂 বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালন (Atmospheric Circulation)-এর 'Tricellular Model' বলতে কী বোঝো?
▻ ভূগোলকের বায়ু সঞ্চালন শুধুমাত্র পৃথিবীপৃষ্ঠের সমান্তরালে হয় না। বায়ুমণ্ডলে বায়ুর উল্লম্ব ও অনুভূমিক প্রবাহ লক্ষ করা যায়। বায়ুর উল্লম্ব প্রবাহের ফলে উচ্চ ট্রপোস্ফিয়ারে একটি বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। বায়ুর এরকম সঞ্চালনের ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উপমেরু পর্যন্ত অংশে তিনটি কোশের সৃষ্টি হয়। এদের একত্রে Tricellular Model' বলে। যেমন—কোশগুলি হল- (i) Hadley Cell, (ii) Ferrel Cell, (iii) Polar Cell
𖤂 'Hadley Cell' বলতে কী বোঝো?
▻ 'Hadley Cell' সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল— 'Hadley Cell'-এর প্রথম ধারণা দেন Edmund Hadley, 1686 খ্রিস্টাব্দে এবং 1735 খ্রিস্টাব্দে G. Hadley তা পরিমার্জিত করেন। ➊ ধারণা : নিরক্ষীয় অঞ্চলের (5°-10°N/S) বায়ু উম্ন ও হালকা বলে তা সর্বদাই ঊর্ধ্বমুখী। এই বায়ু উপরে উঠে দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে উভয় মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। এরপর ক্রমে শীতল হয়ে ক্রান্তীয় অঞ্চলের সন্নিকটে নীচে নেমে এসে চক্রাকার ভূপৃষ্ঠ বরাবর পুনরায় নিরক্ষীয় অঞ্চলে ফিরে আসে। বায়ুপ্রবাহের এই বৈশিষ্ট্য হ্যাডলি প্রথম আবিষ্কার করেন বলে একে 'Hadley Cell' বলে। ➋ সৃষ্টির কারণ : পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি ও পর্যায়ক্রমে উচ্চচাপ ও নিম্নচাপের অবস্থান ইত্যাদি।
𖤂 'Ferrel Cell'?
▻ সুমেরু ও কুমেরু মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ে বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয়ে উভয় ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে বিক্ষিপ্তভাবে নিম্নগামী হয়। পরবর্তী সময়ে ভূপৃষ্ঠ বরাবর উভয় ক্রান্তীয় উচ্চ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে বায়ু ফিরে আসে। এইভাবে পৃথিবীর ক্রান্তীয় অঞ্চলের দুপাশে দু-টি বায়ুপ্রবাহের চক্রাকার আবর্তনকে বিজ্ঞানী ফেরেলের নাম অনুযায়ী ‘Ferrel Cell' বলা হয়।
𖤂 Polar Cell কী?
▻ সুমেরু ও কুমেরু মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় থেকে বায়ু উল্লম্বভাবে ঊর্ধ্বগামী হয়ে মেরুর দিকে নিম্নগামী হয়। এই বায়ু পুনরায় মেরু অঞ্চল থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। এইভাবে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের দু-পাশে দুটি বায়ু চক্রাকারে আবর্তিত হয়, যা ‘Polar Cell' বা ‘মেরুকক্ষ' নামে পরিচিত।
𖤂 নিয়তবায়ুপ্রবাহ (Planetary Wind System) কাকে বলে?
▻ সারাবছর নিয়মিতভাবে একটি নির্দিষ্ট দিক থেকে আরও একটি নির্দিষ্ট দিকে যেসব বায়ু প্রবাহিত হয়, তাদের নিয়তবায়ু বলে। ➊ সৃষ্টির কারণ : পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে কয়েকটি স্থায়ী উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ বলয় আছে, যাদের প্রভাবে নিয়তবায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। ➋ শ্রেণিবিভাগ : ভূপৃষ্ঠে তিন রকমের নিয়তবায়ু প্রবাহিত হয়। যথা- (i) আয়নবায়ু, (ii) পশ্চিমাবায়ু, (iii) মেরুবায়ু।
𖤂 আয়নবায়ু (Trade Wind / Tropical Easterlies) কাকে বলে?
▻ ‘আয়ন’ শব্দের অর্থ ‘পথ’। কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারাবছর ধরে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে আয়নবায়ু বলে। ➊ সৃষ্টির কারণ : নিরক্ষরেখার উভয় পার্শ্বে 5°-10° অক্ষাংশের মধ্যে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় সেখানে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়েছে। বায়ুচাপের সমতা রক্ষা করার জন্য কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে এই বায়ু প্রবাহিত হয়।
𖤂 আয়নবায়ুর গতিপথে মহাদেশসমূহের পশ্চিমদিকে বড়ো বড়ো মরুভূমিগুলি অবস্থিত কেন?
▻ আয়নবায়ু উচ্চ অক্ষাংশ (শীতল স্থান) থেকে নিম্ন অক্ষাংশে (উষ্ণতর স্থান) প্রবাহিত হয় বলে, এদের জলীয় বাষ্প ধারণ করার শক্তি বেড়ে যায়। এর ফলে এই বায়ুতে সাধারণত বৃষ্টি হয় না। এ ছাড়া এই বায়ু পূর্বদিক থেকে প্রবাহিত হওয়ার জন্য এই বায়ুর গতিপথে মহাদেশসমূহের পশ্চিমাংশে পৃথিবীর অধিকাংশ মরুভূমি (সাহারা, কালাহারি, আটাকামা) অবস্থিত।
𖤂 আয়নবায়ুকে ‘বাণিজ্যবায়ু” বলা হয় কেন?
▻ উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ু সারাবছর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট দিকে, নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হওয়ার জন্য কম্পাস ও বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের আগে পালতোলা জাহাজগুলি এই বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতির সাহায্যে সমুদ্রপথে ক্রান্তীয় ও নিরক্ষীয় দেশগুলির মধ্যে ব্যাবসাবাণিজ্য পরিচালনা করত। তাই আয়নবায়ুকে বাণিজ্যবায়ু বলে।
𖤂 পশ্চিমাবায়ু (Westerlies) কাকে বলে?
▻ যে নিয়ত বায়ু কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারাবছর নিয়মিতভাবে পশ্চিমদিক থেকে প্রবাহিত হয়, তাকে পশ্চিমাবায়ু বলে। এই বায়ু 40°-60° অক্ষাংশের মধ্যে প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুসারে এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু ও দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু নামে পরিচিত।
𖤂 সাহসী পশ্চিমাবায়ু (Brave West Wind) বা গর্জনশীল চল্লিশা (Roaring Forties) কী?
▻ উত্তর গোলার্ধে 40°-60° অক্ষাংশে দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ুর প্রবাহপথে স্থলভাগে ঘর্ষণজনিত বাধায় এর দিক ও গতি পরিবর্তিত হয়। কিন্তু 40°-60° দক্ষিণ অক্ষাংশে নিরবচ্ছিন্ন প্রশান্ত, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের জলভাগে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু সারাবছর প্রবল গতিতে, বিকট শব্দে অপ্রতিহতভাবে প্রবাহিত হয়। তাই উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ুকে সাহসী পশ্চিমাবায়ু বলা হয়। এই বায়ু বিভিন্ন অক্ষরেখায় প্রবল গতিতে প্রবাহিত হয় বলে অক্ষরেখাগুলির বিভিন্ন নামকরণ করা হয়। 40° দক্ষিণ অক্ষরেখাকে ‘গর্জনশীল চল্লিশা', 50° দক্ষিণ অক্ষরেখাকে ‘ভয়ংকর পঞশিয়া' এবং 60° দক্ষিণ অক্ষরেখা -কে ‘তীক্ষ্ণ চিৎকারী ষাট' বলে।
𖤂 প্রত্যয়ন বায়ু (Anti-Trade Wind) কী?
▻ ক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে আয়নবায়ু বলা হয় ৷ আয়নবায়ু বলয়ের মধ্যে অধিক উচ্চতায় আয়নবায়ুপ্রবাহের বিপরীতে একধরনের বায়ু প্রবাহিত হয়। একে প্রত্যয়ন বায়ু বলা হয়। প্রত্যয়নবায়ু ও পশ্চিমাবায়ু সম্পূর্ণ আলাদা। আয়নবায়ুর বিপরীতে এই বায়ু প্রবাহিত হয় বলে একে 'Anti Trade Wind'-ও বলা হয় ।
𖤂 পশ্চিমাবায়ু প্রবাহপথে মহাদেশের পশ্চিমাংশে মূলত শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় কেন?
▻ ইউরেশিয়া ও আমেরিকার পশ্চিমাংশে পশ্চিমাবায়ু মূলত শীতকালে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে পশ্চিম উপকুলীয় সামুদ্রিক ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর সৃষ্টি করেছে। ▢ কারণ : i. প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে পশ্চিমাবায়ু উন্ন অঞ্চলে পশ্চিম দিক থেকে শীতল অঞ্চলের দিকে প্রবাহকালে তার বাষ্পধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। ফলে বায়ু সম্পৃক্ত ও ঘনীভূত হয়ে মহাদেশের পশ্চিমাংশে বৃষ্টি ঘটায়। ii. শীতকালে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি শীতল থাকায় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু ঠান্ডা স্থলভাগের সংস্পর্শে ঘনীভূত হয়ে অধিক বৃষ্টি ঘটায়।
𖤂 কালবৈশাখী কাকে বলে?
▻ এপ্রিল-মে মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তার আশেপাশের অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে ভীষণ ঝড় হয়, তাকে কালবৈশাখী বলা হয়। গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতার জন্য স্থায়ীভাবে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপ কেন্দ্রের আকর্ষণে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ছুটে আসে এবং উত্তরের শীতল বায়ুর সঙ্গে সংঘর্ষে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। ▢ প্রভাব : এই বায়ুপ্রবাহ খুব ঠান্ডা, তাই এর ফলে গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা এক লাফে কিছুটা কমে যায়।
𖤂 ফন বায়ু (Fohn Wind) কাকে বলে?
▻ শীতকালে আল্পস পার্বত্য অঞ্চল থেকে রাইন নদীর উপত্যকায় যে উষ্ণও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে ফন বায়ু বলে। ▢ সৃষ্টির কারণ : আল্পস পর্বতের উপর দিয়ে কোনো নিম্নচাপ অগ্রসর হলে এই বায়ু দক্ষিণ ঢাল অবলম্বন করে উপরে উঠে মেঘের সৃষ্টি করে ও বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই বায়ু যখন পর্বতের উত্তর ঢালে পৌঁছায়, তখন আর্দ্রতা হ্রাস পেয়ে উষ্ণ ও শুষ্ক ফন বায়ুতে পরিণত হয় ৷ এর ফলে উষ্ণতা 8°-11° পর্যন্ত বেড়ে যায় এবং তুষার গলে যায় ও তৃণক্ষেত্র উন্মুক্ত হয়ে পড়ে।
𖤂 চিনুক (Chinook) কী?
▻ বসন্তকালে উত্তর আমেরিকা রকি পার্বত্য অঞ্চল থেকে প্রেইরি অঞ্চলের দিকে একপ্রকার উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয় একে চিনুক বলে । চিনুকের প্রভাবে প্রেইরি অঞ্চলের উষ্ণতা 1.5 মিনিটে প্রায় 15°-20° বেড়ে যায়। ফলে তুষার গলে যায় ও তৃণক্ষেত্র উন্মুক্ত হয়ে পশুচারণে সুবিধা হয়। রেড ইন্ডিয়ানরা এই বায়ুকে ‘Snow Easter' বা ‘তুষারভক্ষক বায়ু’ বলেছেন।
𖤂 লু (Loo) কী?
▻ গ্রীষ্মকালে মে ও জুন মাসে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে অত্যন্ত উষ্ণ ও শুষ্ক প্রকৃতির এক ধরনের বায়ু দুপুরের পর থেকে পশ্চিমদিকে প্রবাহিত হয় এই বায়ু ‘লু’ (Loo) নামে পরিচিত। ▢ সৃষ্টির কারণ : লম্বভাবে পতিত সূর্যকিরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হওয়ার জন্য উত্তপ্ত বায়ু দুপুরের পর থেকে প্রবাহিত হয়ে ‘লু’-এর সৃষ্টি করে। ▢ বৈশিষ্ট্য : (i) লু বায়ু আগুনের হলকার মতো 30-40 কিমি/ঘণ্টা বয়ে চলে। (ii) এই বায়ুর উষ্ণতা 40°C 50C হয়। (iii) লু হল একপ্রকার তাপপ্রবাহ। উদাহরণ : পাঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর ইত্যাদি অঞ্চলে দেখা যায় ।
𖤂 আঁধি কী?
▻ গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বিকেলের দিকে যে উষ্ণ ধূলিঝড় প্রবাহিত হয়, তাকে আঁধি বলে। ▢ সৃষ্টির কারণ : উত্তর-পশ্চিম ভারতে অতি উত্তপ্ত সমভূমিতে সৃষ্ট নিম্নচাপ কেন্দ্র আঁধি সৃষ্টির কারণ। ▢ বৈশিষ্ট্য : (i) গতিবেগ ঘণ্টায় 50-80 কিমি। (ii) এতে বৃষ্টির পরিবর্তে ধূলিঝড় প্রবাহিত হয়। (ii) এই ঝড়ের প্রভাবে বায়ুর তাপমাত্রা 3°C 5°C হ্রাস পায়। উদাহরণ : উত্তর-পশ্চিম ভারতের অন্তর্গত রাজস্থানের মরুভূমিতে আঁধির প্রভাব দেখা যায়।
𖤂 ঘনীভবনের লীনতাপ (Latent heat of Condensation) বলতে কী বোঝো?
▻ পদার্থের উষ্ণতার পরিবর্তন না-ঘটিয়ে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় পদার্থের ভৌত অবস্থার পরিবর্তনকালে যে তাপ নির্গত বা শোষিত হয়, তাকে লীনতাপ বলে। এই অবস্থায় কঠিন থেকে তরল বা তরল থেকে গ্যাসীয় অবস্থায় পরিবর্তনকালে যে লীনতাপের শোষণ হয়, তাকে বাষ্পীভবনের লীনতাপ বলে। আবার পদার্থের গ্যাসীয় অবস্থা থেকে তরল বা তরল থেকে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরকরণের ফলে যে লীনতাপ নির্গত হয়, তাকে ঘনীভবনের লীনতাপ বলে।
𖤂 ঘনীভবনের কেন্দ্রবিন্দু (Condensation Nuclei) কাকে বলে?
▻ বায়ুতে ভাসমান কতকগুলি অতি সূক্ষ্ম কণাকে আশ্রয় করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়। এসব অতি সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম কঠিন পদার্থের কণাকে জলাকর্ষী কণা বলে। প্রধান প্রধান জলাকর্ষী কণাগুলি হল লবণকণা, ধূলিকণা, ধোঁয়া, সালফার ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি।
▢ বৈশিষ্ট্য :
i. জলাকর্ষী কণাগুলির ওপর বায়ুর ঘনীভবন শুরু হয় মূলত বায়ু সম্পৃক্ত হওয়ার পূর্বে।
ii. এইরকম জলাকর্ষী কণাকে আশ্রয় করে কুয়াশা ও মেঘের জলকণা বায়ুতে ভেসে থাকতে পারে।
iii. এর ব্যাসার্ধ 0.0001-10 1m
𖤂 শিশির (Dew)কী?
▻ ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন কোনো বস্তুর ওপর (যেমন—ঘাস, উদ্ভিদ) জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণা আকারে জমা হয়। একে শিশির বলে। ▢ সৃষ্টির কারণ : রাতে তাপ বিকিরণ করে ভূপৃষ্ঠ শীতল হয় এবং শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শিশিরের সৃষ্টি হয়। ▢ প্রভাব : শুষ্ক বা প্রায়শুষ্ক অঞ্চলে শিশির গাছপালাকে জল পেতে সাহায্য করে।
𖤂 তুহিন (Frost) কী?
▻ ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন কোনো বস্তুর ওপর, যেমন – ঘাস, উদ্ভিদ ইত্যাদির ওপর জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বরফকণা আকারে জমা হলে, তাকে তুহিন বা তুষার বলে। ▢ সৃষ্টির কারণ : তাপ বিকিরণের ফলে বায়ুর উষ্ণতা 0°C-এর নীচে নেমে গেলে ঊর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়ার ফলে বাষ্পের সরাসরি কঠিনে রূপান্তর ঘটে। ▢ প্রভাব : গভীর তুহিন শীতপ্রধান দেশে ফসলের ক্ষতি করে।
𖤂 কুয়াশা সৃষ্টির কারণ লেখো।
▻ ভূপৃষ্ঠের নিকট শীতলতার দরুন জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে যখন বায়ুমণ্ডলকে অস্বচ্ছ করে তোলে এবং দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়, তাকে কুয়াশা বলে।
▢ সৃষ্টির কারণ :
i. ভূমি-সংলগ্ন আর্দ্রবায়ু সামান্য শীতল হলে।
ii. বায়ুতে অধিক পরিমাণে জলাকর্ষী কণা উপস্থিত থাকলে।
iii. মেঘমুক্ত রাতের আকাশ ভূপৃষ্ঠ থেকে অবাধে তাপ বিকিরণ করলে।
iv. শীতকালে ভূপৃষ্ঠ বেশি পরিমাণ তাপ বিকিরণ করলে, প্রভৃতি কারণে কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
𖤂 বিকিরণগত কুয়াশা (Radiation Fog) কীভাবে সৃষ্টি হয়?
▻ ক্রান্তীয়মণ্ডলে শীতকালে রাত্রিবেলা ভূপৃষ্ঠ তাপবিকিরণ করে শীতল হয়। এই শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে ভূমি সংলগ্ন বায়ুও শীতল হয়ে পড়ে ও ঘনীভবন ঘটে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ও অসংখ্য সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলকণা ধোঁয়ার মতো বায়ুতে ভেসে থেকে বায়ুমণ্ডলকে অস্বচ্ছ করে ও দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়। একে বিকিরণগত কুয়াশা বলে। শীতলতার কারণে ভূমি সংলগ্ন বায়ুতে এই কুয়াশা সৃষ্টি হয় বলে, একে ভূমিকুয়াশাও বলে।
𖤂 স্পর্শজনিত কুয়াশা (Advection Fog) কী?
▻ জলীয় বাষ্পপূর্ণ উষু ও আর্দ্রবায়ু যখন শীতল ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন শীতল ভূমির সংস্পর্শে থাকা উষ্ণবায়ুর জলীয় বাষ্প শীতল ও ঘনীভূত হয়ে অসংখ্য সূক্ষ্ম জলকণা ধোঁয়ার মতো বায়ুতে ভেসে বেড়ায়। ফলে বায়ুমণ্ডল অস্বচ্ছ হয় ও দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়। একে স্পর্শজনিত কুয়াশা (Advection Fog) বলে। এইপ্রকার কুয়াশা সমুদ্রের উপর বা মহাদেশীয় হ্রদের ওপর গ্রীষ্মকালে ও স্থলভাগের উপর শীতকালে সৃষ্টি হয়। উদাহরণ : শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত ও উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের নিকটবর্তী হওয়ায় নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়।
𖤂 তাপ-বিযুক্তি প্রক্রিয়া (Adiabetic Process) কী?
▻ ঊর্ধ্বমুখী বায়ুতে বায়ুচাপ কমে গেলে বায়ুর প্রসারণ ঘটে। এই প্রসারণের জন্য শক্তি ব্যয় হওয়ায় বায়ুর তাপমাত্রা কমে যায় এবং এই প্রসারণের জন্য কোনোরকম তাপ বায়ুতে যুক্ত হয় না। এইভাবে বায়ুর আয়তন বৃদ্ধি হেতু শীতলীকরণ ঘটে। এই ধরনের শীতলীকরণ প্রক্রিয়াকে তাপ-বিযুক্তি প্রক্রিয়া Adiabetic Process বলে। এককথায়, বায়ুর তাপ ও চাপের মধ্যে যে পরিবর্তন হয়, তাকেই Adiabetic Process বলে। ▢ শ্রেণিবিভাগ : এই প্রক্রিয়া দুই প্রকার—(i) Saturated Adiabetic Lapse Rate, (ii) Dry Adiabetic Lapse Rate
𖤂 আৰ্দ্ৰরুদ্ধ তাপ-বিযুক্তি প্রক্রিয়া (SALR) কী?
▻ বায়ু সম্পৃক্ত হলে বায়ুতে ঘনীভবন ঘটে এবং ঘনীভবনের ফলে পরিত্যক্ত লীনতাপ বায়ুতে যুক্ত হয় ও শীতলতার হার কমিয়ে দেয়। এই ধরনের সম্পৃক্ত বায়ুতে শীতলীকরণের হারকে আর্দ্র তাপ-বিযুক্তি হার বলে। এক্ষেত্রে তাপমাত্রা প্রতি কিমিতে 6.4°C হারে কমে একে আবার Saturated Adiabetic Lapse Rate-ও বলে।
𖤂 শুষ্ক রুদ্ধ তাপ-বিযুক্তিয় পরিবর্তন (Dry-Adiabetic Lapse Rate) কী?
▻ বায়ু যদি অসম্পৃক্ত থাকে তবে উপরের দিকে ওঠার সময় বায়ুর তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট হারে কমতে থাকে। ঊর্ধ্বমুখী অসম্পৃক্ত বায়ুতে তাপ হ্রাসের হারকে শুষ্ক রুদ্ধ তাপীয় পরিবর্তন বলে। এর পরিমাণ প্রতি কিমিতে 10°C
𖤂 বৃষ্টিপাত সৃষ্টির সংঘর্ষ সংমিলন তত্ত্ব (Coalescence or Capture theory) কী?
▻ বৃষ্টিপাত সৃষ্টির সংঘর্ষ সংমিলন তত্ত্বটি হল—এই তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান আবহবিজ্ঞানী E. G. Broven, নিম্ন অক্ষাংশে যেসব মেঘের উচ্চতা হিমাঙ্কের ওপরে থাকে সেইসব মেঘ থেকে এইরূপ বৃষ্টিপাত হয়। ➊ বিষয় : মেঘস্থিত ছোটো ছোটো জলকণা পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হলে তাদের আয়তন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জলকণাগুলি বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকতে না পেরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে বৃষ্টিরূপে এসে পড়ে।
𖤂 হিমকেলাসন তত্ত্ব ( Ice-Crystal Theory) বলতে কী বোঝো?
▻ হিমকেলাসন তত্ত্ব বলতে আমরা বুঝি— Tor Bergeron ও Findeisen, উচ্চ অক্ষাংশের শীতল বৃষ্টিপাত গভীর ও ঘন মেঘ থেকে সংঘটিত হয়। ➊ বিষয় : 0°C থেকে -40°C উষ্ণতায় বরফের কেলাসগুলির দ্রুতহারে আয়তনে বাড়ে এবং ভারী হয়ে যায়। তাই ভেসে থাকতে না পেরে সেগুলি নীচে নামতে থাকে। এগুলি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগেই গলে গিয়ে বৃষ্টিরূপে মাটিতে পড়ে।
𖤂 পরিচলন বৃষ্টিপাত (Convectional Rainfall) বলতে কী বোঝো?
▻ উদ্বু ও আর্দ্র বায়ু ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে সংলগ্ন ভূপৃষ্ঠে বিকেলের দিকে বজ্রপাতসহ প্রবল বৃষ্টি ঘটায়। একে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে। সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে এই ধরনের বৃষ্টি হয়। ➊ সৃষ্টিস্থান : নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল। উদাহরণ : ব্রাজিলের আমাজন অববাহিকা অঞ্চলে এধরনের বৃষ্টিপাত হয়।
𖤂 শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (Orographic Rainfall) কাকে বলে?
▻ উষ্ণ ও আর্দ্রবায়ু তার প্রবাহপথে কোনো পর্বত বা উচ্চভূমিতে বাধা পেলে ঢাল বরাবর উর্ধ্বে উৎক্ষিপ্ত হয়। উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য পর্বতের চূড়ায় বরফের সংস্পর্শে এই উঘ্ন ও আর্দ্রবায়ু শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রতিবাত চালে বৃষ্টিপাত ঘটায় একে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে। অন্যদিকে অনুবাত ঢালে জলীয় বাষ্প না থাকার জন্য বৃষ্টিপাত ঘটার না। তাই অনুবাত ঢালটিকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে। ➊ সৃষ্টিস্থান : শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি মূলত পাহাড়ের প্রতিবাত ঢালে হয়ে থাকে। উদাহরণ : পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হয়।
𖤂 ঘূর্ণ বৃষ্টিপাত/ঘূর্ণবৃষ্টি (Cyclonic Rainfall) কাকে বলে?
▻ উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণঅঞ্চলে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতকে ঘূর্ণবৃষ্টি বলে। ➊ সৃষ্টির কারণ : উষ্ণ মণ্ডলে প্রচণ্ড উষ্ণতার জন্য শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় এবং তার চারদিক থেকে বায়ু ছুটে এসে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করে ও বজ্র-বিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত ঘটায়। ➋ শ্রেণি : (i) গ্রীষ্মমণ্ডলের ঘূর্ণবৃষ্টি, (ii) নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের ঘূর্ণবৃষ্টি। উদাহরণ : পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার উপকূলে মার্চ-মে মাসে দেখা যায়।
𖤂 কৃত্রিম বৃষ্টিপাত কাকে বলে?
▻ যে পদ্ধতিতে সুইডিস আবহবিজ্ঞানী বার্জেরন ও জার্মান আবহবিজ্ঞানী ফিন্ডিসেন তত্ত্ব প্রয়োগ করে শীতল মেঘে (-25°C থেকে -5°C) বিমান ও রকেটের সাহায্যে সিলভার আয়োডাইট ও জৈব যৌগ প্রোপেন স্প্রে করে তুষারকেলাস সৃষ্টি দ্বারা বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়, তাকে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত বা Artificial Rain বলে। বর্তমানে বিশ্বের 24টি দেশে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে বৃষ্টিপাত ঘটানো হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, চিনে খরার প্রকোপ থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য এই পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়।
𖤂 মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি (Cloud Burst) কী?
▻ সম্পৃক্ত মেঘ যখন উঘ্ন মৌসুমি বায়ুর দ্বারা উপরে উঠে যায় এবং খুব কম সময়ের মধ্যে ঘনীভূত হয়ে একটি স্থানীয় অঞ্চলের কম জায়গার মধ্যে অল্প সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং এক্ষেত্রে বৃষ্টির ফোঁটার আকার বড়ো হয়, একে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি (Cloud Burst) বলে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, 2013 সালের 14-17 জুন উত্তরাখণ্ডের কেদারনাথ সংলগ্ন চোরাবারি হ্রদ (Chorabari Lake)-এর এরূপ বৃষ্টির কারণে প্রচুর জলধারা নিম্নে চালিত হয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টায় 10 সেমি করে বৃষ্টিপাত হয়। প্রায় 6000 জন মারা যায় ও 934টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়।
𖤂 হিমবাহ বিস্ফোরণ (Glacial Burst) কী?
▻ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তন ঘটছে। পূর্বে উত্তরাখণ্ডে নন্দাদেবী হিমবাহের উষ্ণতা ছিল - 6°C থেকে - 20°C। বর্তমানে এই হিমবাহের উদ্ভূতা - 2°C লক্ষ করা যায়। 2021 সালের 7 ফেব্রুয়ারি নন্দাদেবী হিমবাহ গলে গিয়ে ধৌলিগঙ্গাতে অধিক জলের জোগানে বন্যার সৃষ্টি হয়। চামোলী জেলার জোশীমঠে Glacial Burst ফলে 50 জন মারা যায় ও 100 জন নিখোঁজ হয়ে যায়।
𖤂 ঘূর্ণবাত (Cyclone)-এর সংজ্ঞা দাও।
▻ ঘূর্ণাবতের ইংরেজি ‘Cyclone' শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Kukloma' থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘সর্পকুণ্ডলী’ (Coil of Snake)। নিম্নচাপ কক্ষকে ঘিরে কেন্দ্রাভিমুখী, ঊর্ধ্বগামী, দ্রুতগতিসম্পন্ন উষ্ণ ঘূর্ণিবায়ুকে ঘূর্ণবাত বলে। Henry Peddingston (1948 সালে) এটির প্রবক্তা ছিলেন। ➊ সৃষ্টির কারণ : কোনো স্বল্প পরিসর স্থান হঠাৎ উত্তপ্ত হলে সেখানকার বাতাস হালকা ও পার্শ্বচাপের ফলে উপরে উঠে গিয়ে ওই স্থানে শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি করে, ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে শীতল ও ভারী বায়ু ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে এসে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি করে।
𖤂 ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখো।
▻ ঘূর্ণাবতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— ➊ বায়ুর চাপ : ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে বায়ুর চাপ কম হয়। প্রায় 850 900 মিলিবার হয়ে থাকে। ➋ বায়ুর গতি : ঘূর্ণবাতের গতি ঘণ্টায় 20 কিমি কম হয় না, তবে গতিবেগ ঘণ্টায় 400 কিমি পর্যন্ত হতে পারে। ➌ বায়ুর দিক : এই বায়ু উত্তর গোলার্ধের বামাবর্তে ও দক্ষিণ গোলার্ধের দক্ষিণাবর্তে প্রবাহিত হয়। ➍ চক্ষু : ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে একটি শান্ত আবহাওয়া বিরাজ করে। একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে। ➎ আবহাওয়া : ঘূর্ণবাত যতক্ষণ পর্যন্ত অবস্থান করে, বায়ুর অবস্থা বা আবহাওয়া ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ থাকে।
𖤂 ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত (Tropical Cyclone) বলতে কী বোঝো?
▻ গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে নিরক্ষরেখার 5°-20° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে প্রচণ্ড সূর্যকিরণের জন্য সৃষ্ট নিম্নচাপ ক্ষেত্র বরাবর বায়ু প্রবলবেগে ধাবিত হয়ে যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি করে, তাকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত (Tropical Cyclone) বলে। ➊ বৈশিষ্ট্য : (i) এই ঘূর্ণবাতের উচ্চতা প্রায় 10 কিমি, ব্যাস 16000 কিমি এবং বায়ুর গতিবেগ 120-160 কিমি/ঘণ্টা। (ii) মূলত গ্রীষ্ম ও শরতে সৃষ্টি হয়। (iii) কেন্দ্রে গভীর নিম্নচাপকেন্দ্র থাকে। (iv) বায়ু কেন্দ্রমুখী উয় ও ঊর্ধ্বমুখী হয়। উদাহরণ : টর্নেডো, টাইফুন, হ্যারিকেন, সাইক্লোন প্রভৃতি এই ঘূর্ণবাতের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
𖤂 ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তির পর্যায়সমূহ লেখো।
▻ ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তির পর্যায়কে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা— ➊ প্রারম্ভিক পর্যায় : এই পর্যায়ে বাতাস ক্রমাগত আবর্তিত হয়ে ঘূর্ণির সৃষ্টি করে ও অবশেষে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়। ➋ বিকাশশীল পর্যায় : এই পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় ক্রমশ বড়ো হয়ে বিধ্বংসী ও শক্তিশালী ঘূর্ণবাতে পরিণত হয়। ➌ পরিণত পর্যায় : এই পর্যায়ে ঘূর্ণিঝড় প্রবল আকার ধারণ করে। ➍ সমাপ্ত পর্যায় : শক্তিশালী ঘূর্ণবাত স্থলভাগে প্রবেশ করার পর স্তিমিত হয়ে আসে।
𖤂 ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টির কারণ কী?
▻ ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টির কারণগুলি হল— ➊ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তাপ ও লীনতাপ : সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা 27°C বা তার বেশি হলে। ➋ উষ্ণজলের গভীরতা : 27°C উষ্ণতায় জলের গভীরতা 60-70 মিটার হওয়া আবশ্যক। ➌ ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলে গোলযোগ : উর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ারে কোনো নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের পরিত্যক্ত ট্রাক (Trough) থাকলে, তার কেন্দ্রে শীতল বাতাস থাকে। ➍ কোরিওলিস বল : বাতাসকে তরঙ্গের মতো পরিচালিত করতে ন্যূনতম কোরিওলিস বল প্রতি সেকেন্ডে 10° ডাইন হওয়া বাঞ্ছনীয়। ➎ বাতাসের ন্যূনতম উল্লম্ব উত্থান হওয়া একান্ত আবশ্যক।
𖤂 ঘূর্ণবাতের চক্ষু কী?
▻ ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ঘূর্ণবাতের চক্ষু। শক্তিশালী ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে এক গতিশীল শান্ত, প্রায় মেঘশূন্য অবস্থা বিরাজ করে। একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে। বৈশিষ্ট্য : i. এর ব্যাস প্রায় 10-20 কিমি হয়। ii. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের চক্ষুর চারিদিকে নিম্বোষ্ট্যাটাস মেঘের আস্তরণ থাকে, একে ঝড়ের চক্ষুপ্রাচীর বলা হয়।
𖤂 ফুজিয়ারা ফল বলতে কী বোঝো?
▻ ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল কুজিয়ারা কল। অনেক সমর দুটি ঘূর্ণিঝড় পরস্পরের কাছাকাছি এসে একে অপরের চারদিকে আবর্তন করে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও কম গভীর ঘূর্ণিঝড় অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতিতে আবর্তন করে। এইরকম আচরণকে কুজিয়ারা কল বলে।
𖤂 হ্যারিকেন কী?
▻ নীচে হ্যারিকেন সম্বন্ধীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল— ➊ অবস্থান : ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অন্তর্গত একটি বিধ্বংসী ঘূর্ণবাত হল হ্যারিকেন। পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, ক্যারিবিয়ান সাগর, মেক্সিকো উপসাগরের উপকূল প্রভৃতি অঞ্চলে হ্যারিকেন সৃষ্টি হয়ে থাকে। ➋ ব্যাস : এই ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস 200-600 কিমি । ➌ গতিবেগ : বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় 150-200 কিমি হয়। ➍ চক্ষু অঞ্চল : চক্ষু অঞ্চলের আয়তন প্রায় 10-50 কিমি।
𖤂 টাইকুন কী?
▻ টাইফুন বলতে আমরা বুঝি– ➊ অবস্থান : ক্রান্তীয় অঞ্চলের জাপান, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর, চিনসাগর ও ফিলিপাইনস্-সৃষ্ট ঝড় টাইকুন নামে পরিচিত। • ব্যাস : 200 কিমি। ➋ বাতাসের চাপ : প্রায় 950 Mb। ➌ গতিবেগ : ঘণ্টায় প্রায় 200 কিমি। ➌ বৈশিষ্ট্য : (i) এই ঝড় যথেষ্ট বিধ্বংসী, (ii) এই ঝড়ের প্রভাবে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
𖤂 টর্নেডো কী?
▻ স্পেনীয় শব্দ ‘Tornada' থেকে 'Tornado' শব্দটি এসেছে। পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগরের মোহনা অঞ্চলে 300-600 মিটার উচ্চতার 300-500 কিমি/ঘণ্টা গতিবেগে প্রবাহিত ক্রান্তীর ঘূর্ণবাতকে টর্নেডো বলে। টর্নেডো সৃষ্টি সম্পর্কে তিনটি অবস্থা বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন—
i. ভূপৃষ্ঠের নিকটস্থ বায়ু অতি আর্দ্র ও উষ্ণ হওয়া প্রয়োজন।
ii. বায়ুতে আবর্তন সৃষ্টির অনুকূল অবস্থা থাকা প্রয়োজন।
iii. ভূপৃষ্ঠের নিকটস্থ গভীর বায়ুস্তর বেশ Untsable থাকা প্রয়োজন।
𖤂 ক্যাটরিনা কী?
▻ ক্রান্তীয় ঝামেলা বা ঝঞ্ঝা বা ঘূর্ণিঝড় আমেরিকায় হ্যারিকেন ক্যাটরিনা বা ক্যাটরিনা হ্যারিকেন নামে পরিচিত। ➊ গতিবেগ : এই ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় 120-300 কিমি। ➋ চক্ষু : এই ঝড়ের কেন্দ্রে 10-50 কিমি ব্যাসযুক্ত শান্ত চক্ষু থাকে। উদাহরণ : 2005 সালের 24 আগস্ট ক্যাটরিনা হ্যারিকেনের দাপটে মিসিসিপি লুইসিয়ানা ও নিউ অর্লিয়েন্সসহ আমেরিকার পূর্ব উপকূলের রাজ্যগুলি একেবারে তছনছ হয়ে যায়।
𖤂 নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত (Temparate Cyclone) কাকে বলে?
▻ নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলে উষ্ণ ও শীতল বায়ুপুঞ্জের মিলনের ফলে যে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়, তাকে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত বলে। ➊ অবস্থান : 30° 60° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে। ➋ সমচাপরেখার ব্যবধান : কেন্দ্র ও বাইরের মধ্যে চাপের ব্যবধান সাধারণত 10-20 মিলিবার হয়। ➌ ব্যাস : 150-300 কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ↑ বৈশিষ্ট্য : (i) সীমান্ত সৃষ্টি হয়। (ii) ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত অপেক্ষা কম বিধ্বংসী। (iii) বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় 30-35 কিমি। (iv) মূলত শীতকালে এই প্রকার ঘূর্ণবাত হয়।
𖤂 নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত কীভাবে সৃষ্টি হয়?
▻ বার্কনেস প্রবর্তিত মেরু সীমান্ত তত্ত্বানুসারে— i. নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উষ্ণ আর্দ্র এবং শীতল শুষ্ক বায়ুপুঞ্জ একটি সীমান্তে তরঙ্গ সৃষ্টি করে পরস্পরের সমান্তরালে ও বিপরীতে প্রবাহিত হয়। ii. তরঙ্গ সীমান্তের বক্রতা বৃদ্ধি পেয়ে দ্রুতগামী শীতল সীমান্ত উষ্ণ ক্ষেত্রকে সংকীর্ণ করে। ঝড়ের তীব্রতা সর্বাধিক হয়। iii. শীতল সীমান্ত অবশেষে উষ্ণ সীমান্তকে স্পর্শ করে সমগ্র এলাকায় শীতল বায়ু বিরাজ করে Occlusion ঘটে এবং
ঝড়ের সমাপ্তি ঘটে।
𖤂 অন্তর্লীন সীমান্ত (Occluded Front) কী?
▻ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল বায়ুপুঞ্জ পরস্পরের সঙ্গে সাম্য সীমান্ত বরাবর সংঘর্ষে উপনীত হলে বায়ুপুঞ্জ শীতল বায়ুপুঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে। কিন্তু শীতল বায়ুপুঞ্জের ধাক্কায় উষ্ণ বায়ুপুঞ্জটি মেরু অঞ্চলের অভিমুখে অভিক্ষিপ্ত হয়। এই সময় মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল বায়ু উষ্ণ বায়ুটিকে ঘিরে ফেলে ও ভূপৃষ্ঠ থেকে উষ্ণ বায়ুপুঞ্জকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এইভাবে শীতল বায়ুপুঞ্জ ও উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ মিলিত হয়ে শীতল বায়ু দ্বারা উষ্ণ বায়ুর অবরুদ্ধ হওয়াকে অন্তর্লীন সীমান্ত বা Occluded Front বলে।
𖤂 আবদ্ধতা বা অন্তর্ধারণ (Occlusion) বলতে কী বোঝো?
▻ নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের জীবনচক্রের শেষে উষ্ণ ও শীতল সীমান্তের মিলনে আবদ্ধতা বা অন্তর্ধারণ (Occlusion) সৃষ্টি হয়। যে সীমান্তদেশে শীতল বায়ুপুঞ্জ উষ্ণ বায়ুপুঞ্জকে উপরে উঠতে বাধ্য করে, তাকে Occluded Front এবং ওই সীমান্ত বরাবর উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ যখন শীতল বায়ুপুঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে, তখন তাকে Occlusion বলে। এর ফলে আবহমণ্ডলের মেঘ ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত হ্রাস পায় ।
𖤂 প্রতীপ ঘূর্ণবাত (Antic-Cyclone) কাকে বলে?
▻ নাতিশীতোষ্ণও হিমমণ্ডলের অন্তর্গত কোনো স্বল্প পরিসর স্থানে অত্যধিক শৈত্যর কারণে উচ্চচাপ সৃষ্টি হলে ওই উচ্চচাপ অঞ্চলের বায়ু নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে কুণ্ডলাকারে প্রবাহিত হতে থাকে। এই প্রকার কেন্দ্রবহির্মুখী ও নিম্নমুখী শীতল ও শুষ্ক ঘূর্ণবায়ুকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। 1861 সালে SIr Francis Gatton প্রথম প্রতীপ ঘূর্ণবাতের ধারণা দেন।
𖤂 বায়ুপুঞ্জ (Airmass) বলতে কী বোঝো?
▻ ভূপৃষ্ঠের কোনো নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুরাশি যদি কয়েক লক্ষ বর্গকিমি বিস্তৃত হয় এবং তার অনুভূমিক তাপমাত্রা, আর্দ্রতা উচ্চতা মোটামুটি একই রকমের হয়, তবে বায়ুমণ্ডলের এই অবস্থাকে ‘বায়ুপুঞ্জ' বলে।
❐ বৈশিষ্ট্য :
i. বায়ুপুঞ্জের গভীরতা কয়েকশত মিটার হয়।
ii. ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে বায়ুপুঞ্জ ঘটার জন্য একই পদার্থ দ্বারা গঠিত হওয়া আবশ্যক ।
iii. বায়ুপুঞ্জ সামগ্রিকভাবে তার গতিপথ বদলায়।
iv. বায়ুপুঞ্জ সৃষ্টির জন্য বায়ুর গতি কমে যায় ।
𖤂 ব্যারোট্রফিক ও ব্যারোক্লিনিক বায়ুপুঞ্জ কাকে বলে?
▻ কোনো বায়ুপুঞ্জের সমচাপরেখা ও সমোষ্ণ রেখা যদি পরস্পরের সমান্তরালে অবস্থান করে তাকে ব্যারোট্রফিক বায়ুপুঞ্জ বলে। পক্ষান্তরে কোনো বায়ুপুঞ্জের সমচাপরেখা ও সমোষ্ণরেখা যদি পরস্পর পরস্পরকে ছেদ করে তবে সেই বায়ুপুঞ্জকে ‘ব্যারোক্লিনিক বায়ুপুঞ্জ' বলে। ব্যারোট্রফিক বায়ুপুঞ্জের ফলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় না। ব্যারোট্রফিক অবস্থায় বায়ুপুঞ্জে বায়ুর গতিবেগ একইরকম থাকে বলে সীমান্তে কোনো ঘূর্ণিঝড় হয় না। ব্যারোক্লিনিক বায়ুপুঞ্জ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।
𖤂 বায়ুপ্রাচীর (Front) কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য লেখো।
▻ ভিন্ন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতাবিশিষ্ট দুটি বায়ুপুঞ্জ একে অপরের দিকে অগ্রসর হলে, তারা পরস্পরের সঙ্গে না মিশে এক অদৃশ্য ঢাল-প্রাচীর বরাবর পৃথক হয়। এই অদৃশ্য প্রাচীরকে ‘Front' বলে। Front বা সীমান্ত দুই প্রকার। যথা—উষ্ণ সীমান্ত ও শীতল সীমান্ত।
❐ বৈশিষ্ট্য :
i. ভিন্ন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও ঘনত্ববিশিষ্ট দুটি বায়ুপুঞ্জের সন্ধিস্থলে সীমান্ত সৃষ্টি হয়।
ii. সীমান্ত বরাবর উষ্ণতার বিশাল পার্থক্য দেখা যায়।
iii. এক্ষেত্রে সমচাপরেখাগুলি বক্রভাবে অবস্থান করে।
iv. বায়ুপ্রবাহের দিকের পরিবর্তন দেখা যায়।
v. সর্বশেষ সীমান্তে বৃষ্টিপাতের পর সীমান্তের বিলুপ্তি হয়।
𖤂 মৌসুমি বায়ু (Monsoon Wind) কাকে বলে?
▻ আরবি শব্দ 'মৌসিন' থেকে ‘মৌসুমি' কথাটি এসেছে, যার বাংলা অর্থ ঋতু। অর্থাৎ ঋতুভেদে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে মৌসুমি বায়ু বলা হয়। মৌসুমি একপ্রকার সাময়িক বায়ুপ্রবাহ, তাই এই বায়ু সারাবছর প্রবাহিত না হয়ে গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে প্রবাহিত হয়। স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর বৃহত্তর সংস্করণ হল মৌসুমি বায়ু। ❐ প্রভাবিত অঞ্চল : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, কাম্পুচিয়া, লাওস, চিন প্রভৃতি
দেশে এই বায়ুর প্রভাব বেশি।
𖤂 'MONEX' কী ?
▻ MONEX বা Monsoon Experiment হল একটি উপগ্রহ, যা মূলত মৌসুমি বায়ু গবেষণা সংক্রান্ত কর্মসূচি। 1973 সালে ভারত-রুশ যৌথ উদ্যোগে Global Atmospheric Research Programme-এর অধীনে দক্ষিণ এশিয়ায় মৌসুমি বায়ু গবেষণার যে বিশেষ কার্যক্রম স্থির হয়, তা MONEX নামে পরিচিত। এই কর্মসূচিতে নিরক্ষীয় 60° পূর্ব দ্রাঘিমাস্থিত মার্কিন ভূ-নিরীক্ষণ উপগ্রহ GOES INDIAN OCEAN মেঘমণ্ডলের
অবস্থান নিরীক্ষণ করে উৎক্ষিপ্ত METOSAT উপগ্রহের সাহায্যে ভারতের মুম্বাইয়ে অবস্থিত উপগ্রহ বার্তা গ্রাহক কেন্দ্রে প্রেরিত করে।
𖤂 মৌসুমি বায়ুর ওপর এল-নিনোর প্রভাব লেখো।
▻ মৌসুমি বায়ুর ওপর দক্ষিণ আমেরিকার চিলি বা পেরুর সমুদ্রে চলাচলকারী এল-নিনোর প্রভাব নিতান্ত কম নয়। কারণ এল-নিনো যে বছর প্রবাহিত হয়, সেই বছর পুবালী জোটবায়ুপ্রবাহটি কিছুটা দুর্বল থাকে। এর ফলে ভারত মহাসাগরীয় উচ্চচাপটি অন্যান্য বছরের মতো শক্তিশালী হয় না এবং গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ুও কিছুটা দুর্বল হয় ও কিছুটা দেরিতে এর আগমন ঘটে। ফলে এরকম দুর্বল মৌসুমি বায়ু থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়।
𖤂 মৌসুমি বায়ুর বিস্ফোরণ (Burst of Monsoon) কী?
▻ ভারত মহাসাগর থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু জুন মাসের প্রথমদিকে বঙ্গোপসাগরীয় শাখা ও আরবসাগরীয় শাখায় বিভক্ত হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে ঘন ঘন মেঘের সঞ্চার করে। এর ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মুষলধারে বর্ষণের সৃষ্টি হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে বর্ষার সূচনা হওয়ার অবস্থাকে মৌসুমি বায়ুর বিস্ফোরণ (Burst of Monsoon) বলে।
𖤂 মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের বিরতি (Break of Monsoon) বলতে কী বোঝো?
▻ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু অবিরামভাবে প্রবাহিত হয় না। মাঝে মাঝে একটানা (3-10 দিন পর্যন্ত) স্থায়ী বিরতি দেখা যায়। এই বিরতি বায়ু সঞ্চালনে ও বৃষ্টিপাত অবলুপ্তিতে সংঘটিত হয়ে থাকে। একটি মৌসুমি নিম্নচাপের শেষ অবস্থা ও অপর একটি নিম্নচাপের উৎপত্তির মধ্যবর্তী সময়ে এই বিরতি দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠে বায়ুচাপের অবক্রমণটি যখন খুব দুর্বল থাকে, তখন মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের বিরতি (Break of Monsoon) পরিলক্ষিত হয়।
𖤂 মৌসুমি বায়ুকোশ কী?
▻ গ্রীষ্মকালে একটি দীর্ঘায়িত নিম্নচাপ দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের উত্তর অঞ্চলে অবস্থান করে। এই দীর্ঘায়িত নিম্নচাপটি মৌসুমি নিম্নচাপ কোশ নামে পরিচিত। মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ থেকে এই নিম্নচাপ কোশের দিকে প্রবাহিত হয়। গ্রীষ্মকালে উপমহাদেশের বায়ু সঞ্চালনের উল্লম্ব প্রস্থচ্ছেদে দুটি সঞ্চালন কোশ দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠের কাছে দুটি সঞ্চালন কোশ মৌসুমি নিম্নচাপ কোশে এসে মিলিত হয়।
𖤂 ছদ্ম মৌসুমি (Pseudo Monsoon) কী?
▻ শীত ও গ্রীষ্মঋতুতে সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে প্রবাহিত ধারাবাহিক ও নিয়মিত বায়ুপ্রবাহকে মৌসুমি বায়ু বলে। ভারত একটি আদর্শ মৌসুমি বায়ুর দেশ। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে যেখানে মৌসুমি বায়ু একটি ঋতুতে নিয়মিত বা ধারাবাহিকভাবে প্রবাহিত হলেও অন্য ঋতুতে অনুপস্থিত থাকে অথবা ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়। এই ধরনের বায়ুপ্রবাহকে ছদ্ম মৌসুমি বায়ু বলে।
𖤂 বজ্রঝড় (Thunderstorm) বলতে কী বোঝো?
▻ যে ঝড় কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে উৎপন্ন হয় এবং সর্বদা বজ্র-বিদ্যুৎসহ সংঘটিত হয়, তাকে বজ্রঝড় (Thunderstorm) বলে। ❐ বজ্রঝড় (Thunderstorm)-এর সৃষ্টি : গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে বায়ুমণ্ডলে অস্থিরতা দেখা যায়। এই অবস্থায় চাপের সমতা রক্ষা করতে চারদিক থেকে বায়ু ছুটে আসে। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ঊর্ধ্বগামী হয়ে গভীর বজ্রমেঘ কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি করে ও প্রচুর ঝড়ঝঞ্ঝাসহ বৃষ্টি ঘটায়, যা “Thunderstorm' নামে পরিচিত। যেমন— নরওয়েস্টার (Norwester)।
𖤂 প্রাকৃতিক বিপর্যয় কী? অথবা, জলবায়ুগত দুর্যোগ কাকে বলে?
▻ বর্তমান বিশ্বে উত্তরোত্তর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা জ্বলন্ত সমস্যা। যে সকল প্রাকৃতিক ঘটনা আকস্মিকভাবে মানুষ, উদ্ভিদ, প্রাণীজগৎ ও সর্বোপরি সমগ্র বস্তুরাজ্যের কাছে ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে আসে, তাকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে। আর খরা, বন্যা, সুনামি, সাইক্লোন, ঝড়ঝঞ্ঝা প্রভৃতি আবহাওয়াজনিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে জলবায়ুগত দুর্যোগ বলে। উদাহরণ : গ্লোবাল ওয়ার্মিং, এল-নিনোর দাপটে সৃষ্ট বিভিন্ন জলবায়ুগত দুর্যোগে সারা বিশ্বে আজ বিপর্যয় নেমে এসেছে।
𖤂 এল-নিনো (El-NINO) বলতে কী বোঝো?
▻ El-NINO একটি স্পেনীয় শব্দ, যার অর্থ ‘দুষ্ট ছেলে’। ডিসেম্বর মাসে সাধারণত খ্রিস্টমাসের সময় এই উষ্ণস্রোতের আবির্ভাব হয় বলে, স্পেনীয়ভাষী অধিবাসীগণ একে শিশু খ্রিস্ট নামে অভিহিত করেছেন। এল নিনো হলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের চিলির উপকূল বরাবর প্রবাহিত মাঝে মাঝে দেখা দেওয়া একপ্রকার অস্থির ও অনির্দিষ্ট প্রকৃতির দক্ষিণমুখী স্রোত। একে আবার দক্ষিণের দোলকও বলা হয়। প্রতি 4-7 বছর অন্তর এই স্রোতের আগমন ঘটে।
𖤂 এল-নিনোর প্রভাব লেখো।
▻ এল-নিনোর প্রভাবগুলি নীচে উল্লেখ করা হল― 𝟭. প্রাকৃতিক প্রভাব : ➊ এর প্রভাব বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা 1°C-2°C বৃদ্ধি পায়। ➋ স্থানীয়ভাবে ঝড়ঝঞ্ঝা ও বৃষ্টিপাত সৃষ্টি হয়। ➌ বন্যা, খরা ও অতিবৃষ্টি সৃষ্টি হয়। ➍ মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে। ➎ প্রবাল কীট নষ্ট হয়ে যায় । ➏ এনটোডি জাতীয় মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে।➐ উপকূলবর্তী অরণ্যের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে। 𝟮. অর্থনৈতিক প্রভাব : ➊ কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। ➋ মৎস সংগ্রহের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
𖤂 লা-নিনা (LA NINA) কী?
▻ লা-নিনা (LA-NINA) শব্দটি এল-নিনোর স্ত্রী-প্রতিরূপকে বোঝায়। তবে এই শব্দটির দ্বারা মূলত নিম্ন অক্ষাংশে প্রশান্ত মহাসাগরের এল-নিনোর দক্ষিণের দোলল্যমানতার উপাখ্যানের শান্ত বা শীতল সমুদ্রস্রোতকে বোঝায়। বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডলের LA-NINA-র প্রভাব সম্পর্কে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
⏺︎ বৈশিষ্ট্য : i. স্পেনীয় ভাষায় এর অর্থ ‘দুষ্ট মেয়ে’। ii. এটি শীতল প্রকৃতির সমুদ্রস্রোত। iii. এটি খুব স্বল্পস্থায়ী। iv. এর প্রভাবে সমুদ্রের জলের ভারসাম্য ফিরে আসে।
𖤂 উপকূলবর্তী এলাকার ওপর জলবায়ুগত দুর্যোগ (Climatic Hazard) কেমন প্রভাব ফেলে?
▻ জলবায়ুগত ঝামেলা বা দুর্যোগ উপকূলবর্তী অঞ্চলকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। হঠাৎ কোনো কারণে সমুদ্রে নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে প্রবলবেগে বাতাস প্রবাহিত হয়। এরকম অবস্থায় উপকূলবর্তী অঞ্চলের মধ্য দিয়ে ঘণ্টায় 60-120 কিমি বা তার থেকেও বেশি বেগে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার ফলে উপকূলবর্তী মানুষ ও বসতি, অরণ্যজীবন বা পশুজীবনের এক বিরাট ক্ষতি করে। এজন্য বলা হয় জলবায়ুগত দুর্যোগের ক্ষতিকারক দিক বহুমুখী।
𖤂 জলবায়ুগত দুর্যোগ দক্ষিণবঙ্গকে সবথেকে বেশি প্রভাবিত করে কেন?
▻ দক্ষিণবঙ্গে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এখানে বদ্বীপসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র দ্বীপ, খাঁড়ি, হ্রদ, উপহ্রদ ইত্যাদি দেখা যায়। কোনো কারণে এই বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে চারপাশ থেকে উচ্চচাপযুক্ত বায়ু প্রবলবেগে ঘূর্ণির আকারে নিম্নচাপ অঞ্চলে ধেয়ে আসে। ঝড়ের এই প্রচণ্ড গতিবেগের ফলে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলের অরণ্যজীবন, মানুষজীবন, পশুপাখির ব্যাপক হারে ক্ষতি তথা মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেহেতু দক্ষিণবঙ্গ সমুদ্রের কাছে অবস্থিত, তাই জলবায়ুগত দুর্যোগ ঝামেলা এখানে ক্ষতিকারকও বেশি।
𖤂 কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগের গুণগুলি লেখো।
▻ কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগের গুণগুলি হল—
i. কোপেনের শ্রেণিবিভাগে জলবায়ু অঞ্চলগুলিকে নির্দিষ্ট প্রতীক দ্বারা চিহ্নিত করার ফলে সহজেই জলবায়ুর বর্ণনা দেওয়া যায়। ii. কোপেনের জলবায়ুগত শ্রেণিবিভাগ সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে স্থির করা হয়েছে। iii. কোপেনের বহু জলবায়ু শ্রেণি বায়ুমণ্ডলের সার্বিক সংবহন নীতি মেনে চলে। iv. কোপেন উদ্ভিদ অঞ্চলের সীমারেখার সঙ্গে জলবায়ু সীমারেখার এক অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন, যা সহজে মনে রাখা সম্ভব।
𖤂 কোপেনের জলবায়ুগত শ্রেণিবিভাগের ত্রুটি লেখো।
▻ কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগের ত্রুটিগুলি হল— i. পৃথিবীর সকল অংশে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র না থাকায় পৃথিবীর সকল জলবায়ুর পরিসংখ্যান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। ii. জলবায়ুর সীমা নির্ধারণে অসংগতি রয়েছে।
iii. কোপেন প্রথমে উচ্চভূমির জলবায়ুকে চিহ্নিত করেননি। iv. এই শ্রেণিবিভাগে ACDE-এর শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে তাপমাত্রার ভিত্তিতে এবং B-এর শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে শুষ্কতার ভিত্তিতে।
𖤂 ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল (Troposphere) কাকে বলে?
▻ Troposphere-এর ইংরেজি ‘Tropo' শব্দটির অর্থ পরিবর্তন। বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরটির নাম ‘ট্রপোস্ফিয়ার’। ➊ বিস্তার : মেরু অঞ্চলে প্রায় ৪ কিমি উচ্চতা ও নিরক্ষীয় অঞ্চলে 16-18 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। ➋ বৈশিষ্ট্য : (i) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা প্রতি কিমিতে 6.4°C হারে কমে। (ii) আবহাওয়ার যাবতীয় উপাদান এই স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। (iii) এখানে বায়ুর চাপ সবথেকে বেশি। (iv) এখানে মেঘ, জলীয় বাষ্প, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে বলে, একে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলে। (v) নিরক্ষীয় অঞ্চলে ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশের উষ্ণতা–80°C ও মেরুপ্রদেশে –58°C।
𖤂 কোপেনের জলবায়ুগত শ্রেণিবিভাগ বলতে কী বোঝো?
▻1936 খ্রিস্টাব্দে ভ্লাদিমির কোপেন তাঁর জলবায়ুগত শ্রেণিবিভাগ প্রকাশ করেন। তাঁর প্রধান জলবায়ুগত শ্রেণিবিভাগুলি হল— ➊ ক্রান্তীয় অরণ্য যা প্রায় সমস্ত ঋতুতেই গরম থাকে। ➋ শুষ্ক জলবায়ু। ➌ নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টি অরণ্যযুক্ত জলবায়ু। ➍ শীতল অরণ্যযুক্ত জলবায়ু যা শীতকালে অত্যন্ত ঠান্ডা থাকে। ➎ মেরু জলবায়ু।
𖤂 ট্রপোপজ (Tropopause) কাকে বলে?
▻ ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে প্রায় 3 কিমি পর্যন্ত স্থানে উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে না। এজন্য এই অংশটিকে ট্রপোপজ বা স্তব্ধ স্তর বলে। ➊ অবস্থান : ট্রপোস্ফিয়ারের শেষ (12 কিমি) ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের শুরুর সীমা নির্দেশক অঞ্চল। ➋ বৈশিষ্ট্য : (i) এখানে বায়ুর তাপীয় মিশ্রণ ও বায়ুপ্রবাহ চোখে পড়ে। (ii) ট্রপোপজে বায়ুর গড় তাপমাত্রা – 60°C। ➌ গুরুত্ব : এই স্তর ট্রপোস্ফিয়ার থেকে উপরের দিকে স্তরে তাপ চলাচলকে রোধ করে। ফলে তাপ চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়।
𖤂 স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere) কাকে বলে?
▻ ট্রপোপজের উপরে বায়ুমণ্ডলের যে স্তর রয়েছে, তার নাম স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। ➊ বিস্তার : বায়ুমণ্ডলের এই স্তরের বিস্তার 18-50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত। ➋ বৈশিষ্ট্য : (i) উচ্চতা বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। (ii) শান্ত আবহাওয়ার জন্য একে শাস্ত্রমণ্ডল বলে। (iii) এই স্তরে জেট বিমান নির্গত ধোঁয়া কুণ্ডলী আকারে দেখতে পাওয়া যায়। (iv) ওজোন গ্যাসের আধিক্যের জন্য একে ওজোনমণ্ডলও বলে। (v) এর ঊর্ধ্বসীমা (50 কিমি) ‘স্ট্র্যাটোপজ' নামে পরিচিত, যেখানে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে 0°C-এ পৌঁছায়।
𖤂 মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere) কাকে বলে ?
▻ স্ট্যাটোপজের উপরে 50-80 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত স্তরকে মেসোস্ফিয়ার বলে। গ্রিক ‘Meso' শব্দের অর্থ 'Middle' ⏺︎ বৈশিষ্ট্য : i. উচ্চতা বৃদ্ধিতে উষ্ণতা হ্রাস পায় (–90°C থেকে – 100°C)। ii. মহাকাশ থেকে আগত উল্কা এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। iii. মেসোস্ফিয়ারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এখানে বায়ুর চাপ কম থাকে। iv. মেসোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে মেসোপোজ বলে।
𖤂 স্ট্র্যাটোপজ (Stratopause) কী?
▻ স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে স্ট্র্যাটোপজ বলে। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী সংযোগকারী সীমানাকে স্ট্র্যাটোপজ বলে। ➊ বিস্তার : স্ট্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় 50 কিমি উচ্চতায় এই স্তর অবস্থিত, যেখানে তাপমাত্রার হঠাৎই হ্রাস ঘটে। ➋ বৈশিষ্ট্য : (i) এই স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও এর উপরের স্তরের মধ্যে বায়ু ও তাপ চলাচল রোধ করে। (ii) স্ট্যাটোস্ফিয়ারের বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পেতে পেতে স্ট্যাটোপোজে এসে 0°C-তে এসে পৌঁছায়।
𖤂 কোপেনের শ্রেণিবিভাগে কীভাবে স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও জলবায়ুর মেলবন্ধন ঘটেছে?
▻ কোপেনের শ্রেণিবিভাগের ফলে উদ্ভিদ ও জলবায়ুর মেলবন্ধনের উপায়গুলি হল—
শব্দ চিহ্ন | স্বাভাবিক উদ্ভিদ শ্রেণি | কোপেনের নির্ধারিত জলবায়ু |
---|---|---|
A | Megatherms | ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য |
B | Xerophytes | শুষ্ক জলবায়ু |
C | Mesotherms | মধ্য-অক্ষাংশীয় মৃদু উষ্ণ গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টি জলবায়ু |
D | Microtherms | মধ্য অক্ষাংশীয় শীতল অরণ্য জলবায়ু |
E | Hekistotherms | মেরু জলবায়ু |