ভারতের জলবায়ু | ভারতের জলবায়ু অঞ্চল
𖤂 ভারতের জলবায়ু : ভারতের ন্যায় বিশাল আয়তনবিশিষ্ট দেশের জলবায়ু অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। ভারতের পূর্বদিকে অসম ও মেঘালয়ে যেমন অতি বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়, তেমনি পশ্চিমে জলবায়ুর শুষ্কতার কারণে রাজস্থানে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে। আবার, দেশের মধ্যভাগে অতিরিক্ত উয়তার কারণে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়। অপরদিকে, উপকূলীয় অবস্থানের কারণে কেরল ও দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্যগুলিতে সমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখতে পাওয়া যায়। আয়তনের বিশালতার কারণে ভারতীয় জলবায়ুর যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে পরিলক্ষিত হয় না।
ভূপ্রকৃতির মতো এদেশের জলবায়ুও অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। ভারতের মৌসিনরামে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক বৃষ্টিপাত হয়, আবার ভারতেরই থর মরুভূমি বা লাদাখের মতো শীতল মরুভূমিতে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 10 সেন্টিমিটারেরও কম। উষ্ণতার ক্ষেত্রেও এই ধরনের বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। যেমন—উত্তরে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে শীতল জলবায়ু, আবার দক্ষিণ ও মধ্যভারতে উষ্ণ জলবায়ু (বিশেষত গ্রীষ্মে) দেখা যায় ও উত্তরে হিমালয়, পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের বেষ্টনী এবং মধ্যভাগে কর্কটক্রান্তি রেখার বিস্তার— এগুলি সবই ভারতীয় জলবায়ুর গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক নিয়ন্ত্রকসমূহ; কিন্তু সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হল ‘মৌসুমি বায়ু’।
ভারতবর্ষের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অত্যন্ত বেশি, তাই ভারতকে ‘মৌসুমি জলবায়ুর দেশ' (Monsoon Country) বলা হয়। ভারতের 67 থেকে 72% বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই হয়। আরবি শব্দ ‘মৌসিম' থেকে মৌসুমি শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ ঋতু। গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের ফলে ভারতের জলবায়ুতে 'বিপরীতধর্মী দুটি প্রধান ঋতুর সৃষ্টি হয়—(i) আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং (ii) শুষ্ক শীতকাল।
❏ আরো পড়ুন :
𖤂 ভারতের ঋতুসমূহ :
বছরে বিভিন্ন সময়ে ঋতু পরিবর্তন হল ভারতের জলবায়ুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ভারতের জলবায়ুতে যে চারটি ঋতু চক্রাকারে আবর্তিত হয়, সেগুলি হল— গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত): মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত ভারতের সর্বত্র বেশি তাপমাত্রা অনুভূত হয়, এই সময়টি তাই গ্রীষ্মকাল নামে পরিচিত।
উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ হয় (উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজস্থানে 45°-55° সে এবং দিল্লি ও মধ্যভারতে 40° - 45° সে.)। উচ্চতা এবং সমুদ্রের সমভাবাপন্ন জলবায়ুর প্রভাবে এইসময় দক্ষিণ ভারতের মালভূমি অঞ্চলে উত্তর ভারতের তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকে ৷ অত্যধিক উষ্ণতার কারণে এসময় থর মরুভূমি থেকে শুরু করে ছোটোনাগপুর মালভূমি পর্যন্ত অঞ্চল জুড়ে নিম্নচাপ বিরাজ করে। উত্তর ভারতের সমভূমির তুলনায় শীতল হওয়ায় দাক্ষিণাত্য মালভূমি অঞ্চলের বায়ুতে উচ্চচাপ বজায় থাকে। এইসময় পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলি থেকে উচ্চচাপযুক্ত বায়ু নিম্নচাপযুক্ত সমভূমি অঞ্চলে ছুটে আসে। এর ফলে মাঝে মাঝে কিছু স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ বা ঘূর্ণিঝড় এবং বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
❏ লু : গ্রীষ্মকালে ভারতের উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, বিহার প্রভৃতি রাজ্যে লম্বভাবে সূর্যকিরণ পতিত হওয়ার কারণে ভূ-পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে এক ধরনের উত্তপ্ত বায়ু প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। গ্রীষ্মকালীন এই স্থানীয় বায়ুপ্রবাহই 'লু' (Loo) নামে পরিচিত। এটির উষ্ণতা প্রায় 40″-50°C এর অত্যধিক উষ্ণতার কারণে অনেক সময় মানুষ ও গবাদি পশুর প্রাণহানিও ঘটে।
অঞ্চল | বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত নাম |
---|---|
➊ পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা | কালবৈশাখি এর অপর নাম Norwester |
➋ কর্ণাটক | কফি বৃষ্টি (Cherry blossom) |
➌ কর্ণাটক, অন্ধ্ৰ প্রদেশ, তামিলনাডু | আম্রবৃষ্টি (Mango Shower) |
➍ উত্তর-পূর্ব ভারত | চা বৃষ্টি |
➎ অসম | বরদইছিলা |
➏ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব, রাজস্থান | লু (এটি একধরনের উয় স্থানীয় বায়ু প্রবাহ) |
➐ পাঞ্জাব, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ | আঁধি (মরু অঞ্চলের প্রবল ধূলিবলয়) |
মৌসুমি বায়ুর আগমণকাল / বর্ষাকাল জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত : ভারতে বর্ষা ঋতুর স্থায়িত্বকাল হল জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। এই সময় উত্তর ভারতের সমভূমির ওপর সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে, ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু এই অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। ত্রিভুজের ন্যায় আকৃতির কারণে ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়—(i) আরব সাগরীয় শাখা এবং (ii) বঙ্গোপসাগরীয় শাখা।
❏ মৌসুমি বিস্ফোরণ : গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে, বিশেষত মে মাসে উত্তর-পশ্চিম ভারতে এক গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপের আকর্ষণে সুদূর ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ এলাকা থেকে আর্দ্র বায়ু আরব সাগরীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখায় বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করে। এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত। গ্রীষ্মের অসহ্য গরমের মধ্যে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আকস্মিকভাবেই ভারতে প্রবেশ করে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে ভারতে বর্ষাকালের সূচনা ঘটায়, এই ঘটনাকে মৌসুমি বিস্ফোরণ (burst of monsoon) বলে।
আরব সাগরীয় শাখা পশ্চিম উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং গোয়া ও কেরলের মালাবার উপকূলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়। এরপর এই বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বত অতিক্রম করে মধ্যপ্রদেশ ও দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে প্রবেশ করে এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়। বঙ্গোপসাগরীয় শাখা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়, যা মায়ানমারের আরাকান এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ে বাধা পেয়ে দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু হিসেবে প্রবাহিত হয়। মৌসুমি বায়ুর এই শাখার প্রভাবে গলা ও ব্রহ্মপুত্রের সমভূমি অঞ্চল ও উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে বৃষ্টিপাত হয়। খাসি পাহাড়ের দক্ষিণের বায়ুমুখী ঢালে অবস্থিত মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি-মৌসিনরাম অঞ্চল পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল গড়ে 1250 -1400 সেমি।
অবস্থান অনুসারে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সংঘটিত বৃষ্টিপাতের পরিমাণে তারতম্য দেখা যায়। আরাবল্লি পর্বত এই বায়ুর গতিপথে সমান্তরালভাবে অবস্থিত হওয়ায় এই বায়ুপ্রবাহের ফলে রাজস্থানে খুব কম বৃষ্টিপাত হয় (বছরে 25 সেমি এর থেকেও কম)। অপরদিকে, মেঘালয়েই অবস্থিত শিলং শহর বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল হওয়ায় এখানে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র 250 সেমি। বঙ্গোপসাগরীয় মৌসুমি বায়ুর কারণে নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত কলকাতায় বছরে 200 সেমি বৃষ্টিপাত হয়।
❏ মৌসুমি বিরতি : বর্ষাকালে অনেক সময় একটানা বৃষ্টি না হয়ে কিছুদিনের (5-12 দিন) বিরতি থাকে একে মৌসুমি বিরতি বলে। প্রধানত মৌসুমি অক্ষের স্থানান্তরণের ফলে এই ঘটনা ঘটে।
❏ ভারতের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল :
(i) আন্দামান – 20 মে, (ii) কেরল -1 জুন, (iii) কলকাতা — 10 জুন, (iv) মুম্বই — 10 জুন (v) দিল্লি -1 জুলাই, (vi) সমগ্র ভারত 15 জুলাই এর মধ্যে।
❏ শরৎকাল (অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত):
এই সময় সূর্য কর্কটক্রান্তিরেখার ওপর লম্বভাবে কিরণ না দেওয়ার ফলে উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। সেপ্টেম্বরের পর থেকে সূর্য মকরক্রান্তীয় অঞ্চলে লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় ভারত মহাসাগরের জলভাগ ভারতের স্থলভাগের তুলনায় বেশি উত্তপ্ত হওয়ায় ভারত মহাসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ফলে ভারতের স্থলভাগ থেকে উচ্চচাপের বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের বিপরীতে ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। এই ঘটনাকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তন বলে।
এই বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় কিছু পরিমাণ জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে অন্ধ্র ও করমণ্ডল (তামিলনাডু) উপকূলে শরৎকালে বৃষ্টিপাত ঘটায়। ফলে করমণ্ডল ও অন্ধ্র উপকূলে বছরে দুবার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। শরৎকালে অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভারতের পূর্ব উপকূলে মাঝে মাঝে প্রত্যাবর্তনকারী দুবর্ল মৌসুমি বায়ুর সংঘর্ষে ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। পশ্চিমবঙ্গে এই ঘূর্ণবাত আশ্বিনের ঝড় নামে পরিচিত।
❏ শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত):
এই সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করার ফলে সূর্যরশ্মি দক্ষিন গোলার্ধে লম্বভাবে এবং উত্তর গোলার্ধে তির্যকভাবে পড়ে। শীতল স্থলভাগ বা উচ্চচাপ এলাকা থেকে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু ভারতের ওপর দিয়ে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। সমুদ্রের সমভাবাপন্ন প্রভাব থেকে বহুদূরে অবস্থিত উত্তর ভারতের সমভূমি অঞ্চলের পাঞ্জাব, রাজস্থান ও হিমালয় সন্নিহিত স্থানে তাপমাত্রা কম থাকে। উত্তর ভারতে এ সময়ে তাপমাত্রা হয় গড়ে 10°-15°C। পার্বত্য অঞ্চলে তাপমাত্রা এসময় হিমাঙ্কের নীচে থাকে। সমুদ্র তীরবর্তী হওয়ার কারণে দক্ষিণ ভারতের জলবায়ু উত্তর ভারতের ন্যায় চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির নয়। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডুতে শীতকালে তাপমাত্রা থাকে প্রায় 25°-26°C-এর মধ্যে। শীতকালে মাঝে মাঝে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের ফলে উত্তর-পশ্চিম ভারতে সামান্য বৃষ্টি হয় একেপশ্চিমি ঝঞ্ঝা বলে।
ttt
এলাকা | প্রভাবিত এলাকা ও বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ |
---|---|
➊ অত্যধিক বৃষ্টিপাত অঞ্চল | পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল, পূর্ব হিমালয়, মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 সেমি-এর বেশি। |
➋ অধিক বৃষ্টিপাত অঞ্চল | বিহার, পূর্ব উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশের পার্বত্য অংশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশ। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100 সেমি থেকে 200 সেমি। |
➌ মাঝারি বৃষ্টিপাত অঞ্চল | পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পূর্ব রাজস্থান, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 60 সেমি থেকে 100 সেমি। |
➍ স্বল্প বৃষ্টিপাত অঞ্চল | পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার পশ্চিমাংশ, মধ্য রাজস্থান। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 20 সেমি থেকে 60 সেমি। |
➎ অতিস্বল্প বৃষ্টিপাত অঞ্চল | রাজস্থানের মরু অঞ্চল, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখ মালভূমি। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 20 সেমি-এর কম। |
👇 ভারতের জলবায়ু মানচিত্র :
𖤂 ভারতের জলবায়ু অঞ্চল : Koppen-এর মতানুসারে কোনো বিশেষ জলবায়ু অঞ্চল বলতে কোনো দেশ বা মহাদেশের এক বা একাধিক এরূপ অঞ্চলকে বোঝায়, যেখানে জলবায়ুর প্রকৃতি বিশেষত উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত প্রায় একধরনের।
প্রকৃতি | বণ্টন |
---|---|
➊ মেরু | পশ্চিম হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে |
➋ শীতল আর্দ্র শীত, স্বল্পস্থায়ী গ্রীষ্ম | পূর্ব হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল |
➌ মৌসুমি-শুষ্ক শীত, আর্দ্র গ্রীষ্ম | পূর্ব পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পূর্ব রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, উত্তর ঝাড়খণ্ড, উত্তরবঙ্গ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চল, উত্তর ছত্তিশগড়। |
➍ উষ্ণ-মরু | মরুস্থলি—রাজস্থান। |
➎ শুষ্কপ্রায় স্তেপ | মরুস্থলির পূর্বাংশ, পশ্চিম পাঞ্জাব, পশ্চিমঘাটের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল, কচ্ছ ও নিকটবর্তী এলাকা। |
➏ ক্রান্তীয় সাভানা [কর্কটক্রান্তি রেখার দক্ষিণে] | কাথিয়াবাড়, গুজরাত সমভূমি, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, ছত্তিশগড়ের অবশিষ্ট অংশ, অন্ধ্র প্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। |
➐ মৌসুমি-শুষ্ক গ্রীষ্ম, আর্দ্র শীত | দক্ষিণ-পূর্ব অন্ধ্র উপকূল, করমণ্ডল উপকূল। |
➑ মৌসুমি-স্বল্পস্থায়ী শুষ্ক ঋতু | পশ্চিম কর্ণাটক, পশ্চিম তামিলনাড়ু, গোয়া ও কেরল। |
📖 MCQ 1 Line : ভারতের জলবায়ু
- ভারতের জলবায়ুতে বৃষ্টিপাত বণ্টনের মুখ্য বৈশিষ্ট্য হল ঋতুকেন্দ্রিকতা।
- দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুর প্রকৃতি অনিশ্চিত ও অনিয়মিত। কখনও এটি স্বাভাবিক প্রত্যাবর্তন সময়ের আগেই বিদায় নেয়। আবার কখনও অতি সক্রিয় এই বায়ুপ্রবাহের ফলে একটানা প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এরকম অনিশ্চিত ও খামখেয়ালি মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় ভারতে অতিবৃষ্টিতে বন্যা এবং অনাবৃষ্টিতে খরার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
- অসমের ব্রক্ষ্মপুত্র অববাহিকা, উচ্চ গঙ্গা সমভূমির যমুনা, চম্বল, ঘঘরা নদী উপত্যকা, নিম্নগঙ্গা সমভূমির দামোদর উপত্যকা ইত্যাদি হল ভারতের বন্যাপ্রবণ অঞ্চল ৷
- মেঘালয়ের মৌসিনরাম হল ভারত তথা পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থান।
- ভারতের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থান/শুষ্কতম অঞ্চল রাজস্থানের জয়সলমির।
- ভারতের উষ্ণতম অঞ্চল হল রাজস্থানের যোধপুর জেলার পালোডি (প্রায় 51°C)
- ভারতের শীতলতম অঞ্চল হল জম্মু কাশ্মীরের লাদাখের দ্রাস ( প্ৰায়-50°C)
- ভারতের আর্দ্রতম রাজ্য—মেঘালয়।
- ভারতের শুষ্কতম রাজ্য—রাজস্থান।
- বছরে দুবার বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল : (i) পাঞ্জাব-হরিয়ানা, (ii) করমণ্ডল উপকূল (তামিলনাডু)।
- ভারতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল: (i) মেঘালয়ের রাজধানী শিলং, (ii) পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বটাল (বেঙ্গালুরু)।
- EL Nino : দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে চিলির উপকূলে মাঝে মাঝে সৃষ্ট অস্থির ও অনির্দিষ্ট প্রকৃতির এক দক্ষিণমুখী উম্ন স্রোত হল এল নিনো। এল নিনো কথাটির অর্থ হল ‘শিশু খ্রিস্ট’। প্রত্যেক 4 থেকে 7 বছর অন্তর এল নিনোর আগমন ঘটে। তখন সেই বছরগুলিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়।
- MONEX: উপগ্রহের সাহায্যে মৌসুমি বায়ু-সংক্রান্ত গবেষণামূলক কার্যাবলিকে ভৌগোলিক পরিভাষায় Monsoon Experiment বা Monex বলে।
- স্বল্প বৃষ্টিপাতজনিত কারণে পরিবেশে যে জলবায়ুগত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাকে খরা বলে। বৃষ্টিপাত যদি স্বাভাবিক হারের চেয়ে 25% কম হয়, তাকে স্বল্প খরা, 50% কম হলে মাঝারি খরা এবং 75% কম হলে তাকে তীব্র খরা বলে।
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত | নামকরণকারী দেশ |
---|---|
➊ মেঘসাগর, অগ্নি | ভারত |
➋ নার্গিস, লায়লা, নীলম, তিতলি | পাকিস্তান |
➌ হুদহুদ, সিডার, ইয়াস | ওমান |
➍ গোনু, আয়লা, রোয়ানু | মালদ্বীপ |
➎ হেলেন, চপলা, অক্ষি | বাংলাদেশ |
➏ মালা, রশ্মি | শ্রীলঙ্কা |
➐ ফাইলিন, পিলিন, গাজা, আমফান | থাইল্যান্ড |
➑ পেয়ার, নামুক | মায়ানমার |