WBCS Geography Notes Bengali | WBCS Prakritik Bhugol Study Notes in Bengali

প্রাকৃতিক ভূগোল (PHYSICAL GEOGRAPHY) | WBCS GEOGRAPHY NOTES BENGALI | WBCS Optional GEOGRAPHY (Bengali Version)

1. সৌরজগৎ এবং পৃথিবী :
সৌরজগৎ
▸ পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ শুক্র।
▸ সৌরজগতের আয়তনে ক্ষুদ্রতম গ্রহ হল বুধ এবং বৃহত্তম গ্রহ হল বৃহস্পতি।
▸ বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল-এই চারটি গ্রহ হল অন্তঃস্থ গ্রহ (Inner Planet)
▸ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন-এই চারটি গ্রহ হল বহিঃস্থ গ্রহ (Outer Planet)। প্লুটো এবং এরিস হল সৌরজগতের বামন গ্রহ আয়তনে এরিস প্লুটোর থেকে বড়ো।
▸ শুক্র উন্নতম এবং উজ্জ্বলতম গ্রহ।
▸ বৃহস্পতি বৃহত্তম গ্রহ। এর বৃহত্তম উপগ্রহের নাম গ্যানিমিড।
▸ শুক্র ছাড়া প্রতিটি গ্রহই সূর্যের চারদিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে।
▸মঙ্গল গ্রহকে লাল গ্রহ (Red Planet) বলা হয়।
▸ শনি ও ইউরেনাসের বলয় দেখা যায়।
▸ শনির বৃহত্তম উপগ্রহের নাম টাইটান।
▸ট্রাইটন হল নেপচুনের একটি উল্লেখযোগ্য উপগ্রহ; এবং প্লুটোর উপগ্রহের নাম চ্যারণ (Charon)

➧ সৌরজগতের প্রধান গ্রহসমূহ :
➛ বুধ গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্ব : 5.79 কোটি কিমি
𒊹 গড় ব্যাসার্ধ :  2439.64
𒊹 আবর্তনকাল : 58 দিন
𒊹 পরিক্রমণকাল : ৪৪ দিন
➊ সূর্যের নিকটতম গ্রহ ➋ কোনো উপগ্রহ নেই।
-----------------------------
➛ শুক্র গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্ব : 10.82 কোটি কিমি
𒊹 গড় ব্যাসার্ধ :  6051.59
𒊹 আবর্তনকাল : 243 দিন
𒊹 পরিক্রমণকাল : 225 দিন
➊ বায়ুমণ্ডলে CO2 -এর পরিমাণ বেশি ➋ কোনো উপগ্রহ নেই।
-----------------------------
➛ পৃথিবী গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্ব : 14.96 কোটি কিমি
𒊹 গড় ব্যাসার্ধ :  6378.1
𒊹 আবর্তনকাল : 23 ঘন্টা 56 মিনিট
𒊹 পরিক্রমণকাল : 365 দিন
➊ নীল গ্রহ বলা হয়। ➋ এই গ্রহে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে। ➌ চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ।
-----------------------------
➛ মঙ্গল গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্ব : 22.79 কোটি কিমি
𒊹 গড় ব্যাসার্ধ :  3397.0
𒊹 আবর্তনকাল : 24 ঘন্টা 37 মিনিট 
𒊹 পরিক্রমণকাল : 687 দিন
➊ বায়ুতে নাইট্রোজেনের ভাগ বেশি। ➋ লোহার ভাগ বেশি থাকায় লাল গ্রহ বলে।
-----------------------------
➛ বৃহস্পতি গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্ব : 77.86 কোটি কিমি
𒊹 গড় ব্যাসার্ধ :  71492.68
𒊹 আবর্তনকাল : 9 ঘন্টা 50 মিনিট 
𒊹 পরিক্রমণকাল : 12 বছর
➊ আয়তনে বড়ো বলে গুরু গ্রহ বলা হয়। ➋ মোট 69টি উপগ্রহ আছে।
-----------------------------
➛ শনি গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্ব : 143.35 কোটি কিমি
𒊹 গড় ব্যাসার্ধ :  60267.14
𒊹 আবর্তনকাল : 10 ঘন্টা 14 মিনিট 
𒊹 পরিক্রমণকাল : 29 বছর 7 মাস
➊ শনিগ্রহের চারপাশে 7টি বলয় দেখা যায় ৷ ➋ মোট উপগ্রহের সংখ্যা 62টি।
-----------------------------
➛ ইউরেনাস গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্ব : 287.25 কোটি কিমি
𒊹 গড় ব্যাসার্ধ : 25557.25
𒊹 আবর্তনকাল : 17 ঘন্টা 14 মিনিট 
𒊹 পরিক্রমণকাল : 84 বছর
➊ শীতল গ্রহ, মিথেন গ্যাসে পূর্ণ। ➋ মোট উপগ্রহ 27টি।
-----------------------------
➛ নেপচুন গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্ব : 449.51 কোটি কিমি
𒊹 গড় ব্যাসার্ধ : 24766.36
𒊹 আবর্তনকাল : 16 ঘন্টা 14 মিনিট 
𒊹 পরিক্রমণকাল : 165 বছর
➊ খুবই শীতল গ্রহ। ➋ মোট উপগ্রহের সংখ্যা 14টি।
-----------------------------

➧ অক্ষরেখা :
  1. পৃথিবীর কেন্দ্র বরাবর (০°) পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে নিরক্ষরেখা।
  2. গড়ে 1° অন্তর দুটি অক্ষরেখার মধ্যে রৈখিক ব্যবধান হল 111.30 কিমি।
  3. উত্তর গোলার্ধে 23½° উত্তর অক্ষরেখাকে কর্কটক্রান্তিরেখা (Tropic of Cancer) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে 232° দক্ষিণ অক্ষরেখাকে মকরক্রান্তিরেখা (Tropic of Capricorn) বলে।
  4. 66½° উত্তর অক্ষরেখাকে সুমেরু বৃত্ত (Arctic Circle) এবং 662° দক্ষিণ অক্ষরেখাকে কুমেরু বৃত্ত (Antarctic Circle) বলে।
➧ দ্রাঘিমারেখা :
  1. লন্ডনের নিকটে গ্রিনিচ মানমন্দিরের ওপর দিয়ে যে কাল্পনিক অর্ধবৃত্তাকার রেখা উত্তরে সুমেরু ও দক্ষিণে কুমেরু বিন্দুর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে, তাকে মূলমধ্যরেখা বলে। এই রেখা বরাবর সময় হল গ্রিনিচ মিন টাইম (Greenwich Mean Time বা GMT)।
  2. 82°30´ পূর্ব দ্রাঘিমারেখার সময় হল ভারতের প্রমাণ সময় (Indian Standard Time)।
  3. ভারতের প্রমাণ সময় ও গ্রিনিচের সময়ের পার্থক্য হল 5 ঘন্টা 30 মিনিট।
  4. প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যগামী প্রায় 180° দ্রাঘিমারেখা বরাবর কাল্পনিক রেখা হল আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা (International Date Line)। 
  5. প্রতি 1° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় 4 মিনিট।
👇কিছু গুরুত্বপূর্ণ তারিখে পৃথিবীর অবস্থান :
  • 4 জুলাই সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সর্বাধিক হয়, একে পৃথিবীর অপসূর (Aphelion) অবস্থান বলে। অন্যদিকে 3 জানুয়ারি সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সর্বনিম্ন হয়, একে পৃথিবীর অনুসূর (Perihelion) অবস্থান বলে।
  • 21 মার্চ এবং 23 সেপ্টেম্বর পৃথিবীর সমস্ত স্থানে দিনরাত্রির দৈর্ঘ্য সমান হয়। 21 মার্চ উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল হওয়ায় এই তারিখটিকে বসন্তকালীন´ বিষুব বা মহাবিষুব (Vernal equinox) বলে । 23 সেপ্টেম্বর উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল হওয়ায় এই তারিখটিকে শরৎকালীন বিষুব বা জলবিষুব (Autumnal equinox) বলে ।
  • 21 জুন তারিখটিকে কর্কটসংক্রান্তি বা গ্রীষ্মকালীন সৌরস্থিতি (Summer solstice) বলে। 22 ডিসেম্বর তারিখটিকে মকরসংক্রান্তি বা শীতকালীন সৌরস্থিতি (Winter solstice) বলে।
2. ভূমিরূপ : 
উচ্চতা, বন্ধুরতা ও ঢালের পার্থক্য অনুসারে ভূমির যে বাহ্যিক প্রকৃতি বা রূপ দেখা যায় তাকে ভূমিরূপ বলে।
পর্বত (উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1000 মিটারের অধিক) 
(1) ভঙ্গিল পর্বত : উদাহরণ
প্রাচীন—ভারতের আরাবল্লি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেশিয়ান, ইউরোপের ক্যালিফোর্নিয়ান
নবীন–ভারতের হিমালয়, ইউরোপের আল্পস, উঃ আমেরিকার রকি, দঃ আমেরিকার আন্দিজ।
(2) স্তুপ পর্বত : উদাহরণ
ভারতের পশ্চিমঘাট, সাতপুরা, ফ্রান্সের ভোজ, জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট। 
(3) আগ্নেয় বা সঞ্চয়জাত : উদাহরণ
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মৌনালোয়া (পৃথিবীর বৃহত্তম ও উচ্চতম), জাপানের ফুজিয়ামা, ভারতের ব্যারেন।
(4) ক্ষয়জাত পর্বত : উদাহরণ
ভারতের আরাবল্লি ভঙ্গিল হলেও (বর্তমানে ক্ষয়জাত) উত্তর আমেরিকার হেনরি পর্বত।

 মালভূমি (উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 300 মিটারের অধিক) 
(1) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি : উদাহরণ
মধ্যভারতের বুন্দেলখণ্ড ও বাঘেলখণ্ড, ছোটোনাগপুর মালভূমি।
(2) পর্বতবেষ্টিত মালভূমি : উদাহরণ
তিব্বত মালভূমি, আনাতোলিয়া মালভূমি। 
(3) লাভা মালভূমি : উদাহরণ
ভারতের মহারাষ্ট্র মালভূমি, মালব মালভূমি।
(4) মহাদেশীয় মালভূমি : উদাহরণ
আরবের মালভূমি। 

 সমভূমি (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা কম 300 মিটারের মধ্যে)
✅ সঞ্চয়জাত সমভূমি
(i) পলিগঠিত সমভূমি : উদাহরণ
সিন্ধু-গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
(ii) প্লাবনভূমি : উদাহরণ
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় গঠিত সমভূমি।
(iii) বদ্বীপ সমভূমি : উদাহরণ
গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার মধ্যবর্তী সুন্দরবন বদ্বীপ সমভূমি (পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি)
(iv) উপকূলীয় সমভূমি : উদাহরণ
ভারতের পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি
(v) হ্রদ সমভূমি : উদাহরণ
পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও দিনাজপুরের তাল সমভূমি, কাশ্মীর উপত্যকা। 
(vi) হিমবাহ সমভূমি : উদাহরণ
উত্তর আমেরিকার প্রেইরি। 
(vii) লোয়েস সমভূমি : উদাহরণ
চিনের হোয়াংহো অববাহিকায় সৃষ্ট সমভূমি। 

✅ ক্ষয়জাত সমভূমি
(i) সমপ্রায়ভূমি (Pene-plain) : উদাহরণ
ভারতের রাঁচি মালভূমির একাংশ।
(ii) পেডিমেন্ট : উদাহরণ
আফ্রিকায় সাহারা মরুভূমিতে অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশীয় ভূমি। 

✅ ভূ-আন্দোলন-জাত সমভূমি
(i) উন্নত সমভূমি : উদাহরণ
ভারতের করমণ্ডল উপকূল, মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী উপসাগরীয় সমভূমি।
(ii) অবনত সমভূমি : উদাহরণ
তুরানের নিম্নভূমি।

𖤂 নদীর কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে সৃষ্ট ভূমিরূপ: পার্বত্য প্রবাহে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি নিম্নরূপ—
  • V-আকৃতির উপত্যকা : পার্বত্য প্রবাহে নদী প্রায় সর্বশক্তি দিয়ে নিম্নক্ষয় করে ও উপত্যকা গম্ভীর হতে থাকে। নদী পার্শ্বক্ষয় খুব কম করে। এইসময় অধিক নিম্নক্ষয় ও সামান্য পার্শ্বক্ষয়ের ফলে নদী-উপত্যকা ইংরেজি অক্ষর V-এর মতো দেখতে হয়, একে V আকৃতির উপত্যকা বলে।
𒊹 গিরিখাত ও ক্যানিয়ন: নদীর কেবল নিম্নক্ষয়ের ফলে যে গভীর ও অতি সংকীর্ণ নদী-উপত্যকা তৈরি হয় তাকে গিরিখাত বলে। গিরিখাত সাধারণত শায়িত শিলার ফাটল বরাবর নদীর নিম্নক্ষয়ের ফলেই সৃষ্টি হয়। নেপাল হিমালয়ের কালিগণ্ডকী বা অন্ধ্যা গলচি গিরিখাত পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত। নদীর গতিপথ জুড়ে বিস্তৃত দু-পাশের খাড়া দেয়ালযুক্ত  I  আকৃতির গভীর উপত্যকাকে ক্যানিয়ন বলে। প্রকৃতপক্ষে চুনাপাথরযুক্ত শুষ্ক অঞ্চলেই ক্যানিয়ন দেখা যায়। কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (446 কিমি লম্বা ও 1.6 কিমি গভীর) পৃথিবীর দীর্ঘতম ক্যানিয়ন।
  • জলপ্রপাত: নদীর প্রবাহপথে ঢালের হঠাৎ পরিবর্তনের জন্য জলস্রোত খাড়া ঢাল বেয়ে ওপর থেকে নীচে প্রবল বেগে পড়ে, একে জলপ্রপাত বলে। জলপ্রপাত বিভিন্নভাবে সৃষ্টি হতে পারে। যেমন— (1) নদীর প্রবাহপথে পরপর কঠিন ও নরম শিলা অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে কঠিন শিলার নীচে নরম শিলা তাড়াতাড়ি ক্ষয় পেয়ে খাড়া ঢাল তৈরি করে ও জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। (2) নদীর প্রবাহপথে আড়াআড়ি চ্যুতি থাকলে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়। ইন্দ্রাবতী নদীর চিত্রকোট (ভারতের নায়াগ্রা), নর্মদা নদীর কপিলধারা, জাম্বেসি নদীর ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত-এর উদাহরণ। এটি একটি ক্যাটারাক্ট যেখানে জলরাশি প্রবল বেগে নীচে আছড়ে পড়ে। (3) মালভূমি খাড়াভাবে সমভূমির সঙ্গে মিশলে জলপ্রপাত তৈরি হয়, উদাহরণ—কর্ণাটকের সরাবতী নদীর ওপর যোগ বা গেরোসোপ্পা (ভারতের উচ্চতম, 253মি) জলপ্রপাত। ভেনেজুয়েলার অ্যাঞ্জেল (979 মি) জলপ্রপাত পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত।
𒊹 খরস্রোত: খরস্রোতা নদীর গতিপথে ছোটো ছোটো বন্ধুরতা, বিশেষ করে কঠিন শিলার উদ্ভেদ থাকলে সেসব জায়গায় স্রোতের বেগ হঠাৎ বৃদ্ধি পায়, এদের খরস্রোত (rapids) বলে। উদাহরণ—আফ্রিকার জাইরে নদীর লিভিংস্টোন জলপ্রপাত 32টি খরস্রোত সৃষ্টি করে 270 ফুট নীচে নেমে এসেছে।

 মধ্য ও নিম্নগতিতে সৃষ্ট ভূমিরূপ : মধ্য ও নিম্নগতিতে নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি নিম্নরূপ :
𒊹 পলল শঙ্কু ও পলল ব্যজনী : পর্বতের পাদদেশে নদীবাহিত বোল্ডার, শিলাখণ্ড, নুড়ি, পলিদানার সঞ্চয়ে সৃষ্ট তিনকোণাকৃতি ভূমিরূপকে পলল শঙ্কু বলে। অনেকগুলি পলল শঙ্কু জুড়ে গেলে দেখতে হাতপাখার মতো হয়, একে বলে পলল ব্যজনী। পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে তরাই অঞ্চলে অনেক পলল ব্যজনী দেখা যায়।

𒊹 অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ : সমভূমিতে নদী কখনো-কখনো তার বাঁকা গতিপথ ত্যাগ করে সোজাপথে প্রবাহিত হয়। কালক্রমে পরিত্যক্ত স্রোতহীন বাঁকা নদীখাতটির দুই মুখে বালি, পলি, কাদা ইত্যাদি জমা হয়ে এবং মূল নদীখাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হ্রদরূপে অবস্থান করে। এ ধরনের হ্রদ ঘোড়ার ক্ষুরের মতো দেখতে হওয়ায় এদের অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে। ইয়াংসিকিয়াং নদীর ব-দ্বীপ প্রবাহে এরূপ হ্রদ দেখা যায়।

𒊹 প্লাবনভূমি: নিম্নপ্রবাহে নদীপাড় থেকে উপত্যকার শেষসীমা পর্যন্ত বন্যার পলি জমে যে সুবিস্তৃত সমভূমি গঠিত হয়, তাকে প্লাবনভূমি বা প্লাবন সমভূমি বলে। সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীর নিম্ন অববাহিকায় বিস্তৃত প্লাবনভূমি গড়ে উঠেছে।

𒊹 স্বাভাবিক বাঁধ: নদীর দুই তীরে ক্রমাগত পলি জমে যে উঁচু বাঁধের মতো ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় তাকে স্বাভাবিক বাঁধ বা লিভি (levee) বলে। সৃষ্টির কারণ—বর্ষার সময় নদীতে প্রচুর পরিমাণে পলি আসে। দুকূল উপচে জল প্লাবনভূমিতে ছড়িয়ে পড়লে পলিসমূহ নদীপাড়ের কাছেই দ্রুত থিতিয়ে পড়ে, বেশি দূরে ছড়িয়ে যেতে পারে না। এভাবে পলি জমে জমে এক সময় নদীপাড় বরাবর স্বাভাবিক বাঁধ তৈরি হয়। ভাগীরথী নদীর পশ্চিমপাড়ে স্বাভাবিক বাঁধ 'দেখা যায় ৷

𒊹 খাঁড়ি বা প্রশস্ত মোহানা: ব-দ্বীপের-মোহনা অংশে সমুদ্রের সঙ্গে সংযোগকারী যেসব ফানেল আকৃতির নদীখাত সৃষ্টি হয় তাকে খাঁড়ি বলে এসব খাঁড়ি দিয়ে নদীর জল সমুদ্রে যায় ও জোয়ারের নোনাজল নদীতে ঢোকে। খাঁড়িগুলি সমুদ্রের দিকে ক্রমশ চওড়া হয়। সুন্দরবনের দুর্গাদুয়ানি খাঁড়ি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

𒊹 বদ্বীপ: নদী যখন প্রবাহের শেষ অবস্থায় শাখাপ্রশাখায় ভাগ হয়ে সাগর বা হ্রদে মিলিত হয় তখন মোহানায় দীর্ঘদিন ধরে পলি জমতে জমতে মাত্রাহীন ‘ব’ বা গ্রিক অক্ষর ‘∆ ’(ডেল্টা)-এর মতো যে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয় তাকে বদ্বীপ বলে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ।

❏ নদীর শ্রেণিবিভাগ :
  • অনুগামী নদী: ভূমিভাগের প্রারম্ভিক ঢাল অনুসারে যে নদী প্রবাহিত হয়, তাকে অনুগামী নদী বলে। যেমন—গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, পশ্চিমঘাটের তাদ্রি, বশিষ্ঠ্য ইত্যাদি ।
  • পরবর্তী নদী: যে নদীগুলি অনুগামী নদীর পরে উৎপত্তি, সেগুলোকে পরবর্তী নদী বলে। যেমন—সোন নদী, আসন নদী ইত্যাদি।
  • পূর্ববর্তী নদী: পূর্ববর্তী কোনো নদী যদি সেই অঞ্চলের উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দ্রুত নিম্নক্ষয়ের সাহায্যে সেটি পূর্বেকার প্রবাহ বজায় রাখে, তাহলে সেই নদীটিকে পূর্ববর্তী নদী বলে। সিন্ধু, শতদু, ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গার মস্তকের দিকে অবস্থিত অংশ হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ায় পূর্বেই অবস্থিত ছিল। এই নদীগুলো হিমালয় পর্বতের উত্থানের গতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ক্ষয়কার্যের সাহায্যে পূর্বেকার প্রবাহ বজায় রেখেছে।
  • অধ্যারোপ নদী: কোনো প্রাচীন শিলাখণ্ডের ওপর পলি সঞ্চিত হয়ে নতুন শিলাস্তর গঠন করলে তার ওপর একটি নদীগোষ্ঠী গড়ে ওঠে। বহুদিন ধরে এই নদীগুলি ক্ষয়কার্য করতে করতে নিম্নে অবস্থিত কঠিন শিলাস্তরের ওপর নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে। এইভাবে ওপরের শিলাস্তরে গঠিন নদী নিম্নের শিলাখন্ডের ওপর অধ্যারোপিত হলে তাকে অধ্যারোপ নদী বলে। যেমন—সুবর্ণরেখা নদী দলমা পাহাড়ে ফিলাই শিলাস্তরের ওপর অধ্যারোপিত হয়েছে। 
3. হিমবাহ :
বিশালায়তন বরফের স্তুপ ভূমির ঢাল বরাবর অভিকর্ষের টানে ধীর ধীরে নীচের দিকে নামলে তাকে হিমবাহ বলে।
  1. পৃথিবীর দ্রুততম হিমবাহ ▻ গ্রিনল্যান্ডের কোয়ারেক। 
  2. পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ ▻ অ্যান্টার্কটিকার ল্যামবার্ট। 
  3. পৃথিবীর দীর্ঘতম ও বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ ▻ আন্টার্কটিকার ল্যামবার্ট। 
  4. পৃথিবীর দীর্ঘতম ও বৃহত্তম পার্বত্য হিমবাহ ▻ আলাস্কার হুবার্ট। 
  5. পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহ ▻ আলাস্কার মালাসপিনা। 
  6. ভারতের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম হিমবাহ ▻ সিয়াচেন।
হিমবাহের ক্ষয়জাত ভূমিরূপসমূহ :
হিমবাহ ঘর্ষণ, অবঘর্ষ, উৎপাটন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্য দ্বারা বিভিন্ন ভূমিরূপ তৈরি করে। যথা—
  1. বার্গসুন্ড ▻ হিমবাহ ও পর্বতগাত্রের মধ্যে সংকীর্ণ ফাঁক এটি।
  2. ক্রেভাস ▻ হিমবাহের ওপর সমান্তরাল ও আড়াআড়ি ফাটলকে ক্রেভাস বলে।
  3. করি বা সার্ক ▻ এটি হাতলযুক্ত চেয়ার বা অ্যাম্ফিথিয়েটারের আকৃতির ভূমিরূপ। এটি ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে করি, ফ্রান্সে সার্ক, নরওয়েতে বন, ওয়েলসে কার নামে পরিচিত।
  4. এরিটি বা অ্যারেৎ ▻ পাশাপাশি দুটি করির মধ্যবর্তী তীক্ষ্ণ আকারের অংশকে এরিটি বা অ্যারেৎ বলে।
  5. কর্তিত শৈলশিরা ▻ উপত্যকার মধ্য দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় কর্তিত শৈলশিরা উভয়দিকে স্পার বা শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশকে ক্ষয় করে। এগুলিকে কর্তিত শৈলশিরা বলে।
  6. ঝুলন্ত উপত্যকা ▻ প্রধান হিমবাহের সঙ্গে ছোটো ছোটো উপ হিমবাহ এসে মিলিত হলে উভয় হিমবাহের পৃথক ক্ষয়কার্যের ঝুলন্ত উপত্যকা ফলে উপ হিমবাহের অগভীর উপত্যকা প্রধান হিমবাহের গভীর উপত্যকার ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় আছে বলে মনে হয় একে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে।
  7. রসে মতানে ▻ হিমবাহের গতিপথে কোনো কঠিন শিলা অবস্থান করলে এই শিলার সামনের দিক অবঘর্ষজনিত ক্ষয়ের ফলে মসৃণ এবং বিপরীতদিক উৎপাটনজনিত ক্ষয়ের ফলে মসৃণ হয়। এই ভূমিরূপকে রসে-মতানে বলে।
  8. ক্র্যাগ ও টেল ▻ হিমবাহের গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলা পাশাপাশি অবস্থান করলে কঠিন শিলা ক্ষয় প্রতিরোধ করে কিন্তু কোমল শিলাটি তার পিছনে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে লেজের মতো অবস্থান করে। একে ক্র্যাগ ও টেল বলা হয়।
  9. 'U' আকৃতির উপত্যকা ▻ পার্শ্বক্ষয়ের কারণে হিমবাহ উপত্যকা ‘U’ আকৃতির হয় একে হিমদ্রোনী বলে
  10. পিরামিড চূড়া ▻ কয়েকটি এরিটি পরস্পরের বিপরীতমুখী অবস্থান করলে মধ্যবর্তী শৃঙ্গটি পিরামিডের আকার নেয়।
❏ হিমবাহের ক্ষয়জাত ভূমিরূপসমূহ :
হিমবাহ ঘর্ষণ, অবঘর্ষ, উৎপাটন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্য দ্বারা বিভিন্ন ভূমিরূপ তৈরি করে। যথা—
▻ ভারতের প্রধান প্রধান হিমবাহ
𒊹 হিমবাহের নাম : সিয়াচেন
দৈর্ঘ্য : 76 কিমি
𒊹 হিমবাহের নাম : বালটোরো
দৈর্ঘ্য : 60 কিমি
𒊹 হিমবাহের নাম : বিয়াফো
দৈর্ঘ্য : 60 কিমি
𒊹 হিমবাহের নাম : হিসপার
দৈর্ঘ্য : 62 কিমি
𒊹 হিমবাহের নাম : গঙ্গোত্রী
দৈর্ঘ্য : 39 কিমি
𒊹 হিমবাহের নাম : হিসপার
দৈর্ঘ্য : 26 কিমি

4. বায়ুর কাজ :
উষ্ণ মরু অঞ্চল এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ুর কাজ সবথেকে বেশি হয়। পৃথিবীর বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা এবং শুষ্কতম মরুভূমি চিলির আটাকামা । উষ্ণ মরু অঞ্চল ও উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ুর কাজ অধিক দেখা যায় ।

বিভিন্ন ধরনের মরুভূমি: ➊ বালুকাময় মরুভূমি (এটি সাহারায় আগ এবং তুর্কিস্থানে কুম নামে পরিচিত) ➋ পাথুরে মরুভূমি (এটি আলজিরিয়ায় রেগ এবং লিবিয়া ও মিশরে সেরির নামে পরিচিত) ➌ শিলাময় মরুভূমি (এটিকে সাহারায় হামাদা বলে)।

বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি হল—
  1. গৌর: কঠিন ও কোমল শিলায় বায়ুর বৈষম্যমূলক ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্টি হওয়া উপরিভাগ চওড়া ও তলদেশ সরু, ব্যাঙের ছাতার মতো আকৃতিবিশিষ্ট ভূমিরূপকে গৌর বলে।
  2. জুইগেন বা জুগ্যান: কঠিন ও কোমল শিলা পর্যায়ক্রমে অনুভূমিকভাবে অবস্থান করলে বায়ু দ্বারা অসম ক্ষয়ের ফলে যে প্রায় সমতল চূড়াবিশিষ্ট ভূমিরূপ গঠিত হয় তাকে জুইগেন বা জুগ্যান বলে।
  3. ইয়ার্দাং: কঠিন ও কোমল শিলা পর্যায়ক্রমে উল্লম্বভাবে অবস্থান করলে বায়ুপ্রবাহ দ্বারা কোমল শিলা অধিক ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে মোরগের ঝুঁটির মতো আকৃতিবিশিষ্ট ভূমিরূপ গঠিত হয় তাকে ইয়ার্দাং বলে।
  4. ইনসেলবার্জ: মরু অঞ্চলে ক্ষয়প্রাপ্ত সমতলভূমি বা পেডিমেন্টের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থিত অনুচ্চ কঠিন শিলাগঠিত টিলাকে ইনসেলবার্জ বলে।
𖤂 সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ :
𒊹 বালিয়াড়ি : বায়ুবাহিত বালি সঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন আকারের বালির স্তুপ বা বালিয়াড়ি গঠন করে। যথা, বার্খান (অর্ধচন্দ্রাকার), সিফ (তলোয়ার সদৃশ), নক্ষত্র বালিয়াড়ি (নক্ষত্রাকার), অ্যাকলি বালিয়াড়ি (সর্পিলাকার), পুচ্ছ বালিয়াড়ি (লেজসদৃশ)।

𒊹 লোয়েস : বায়ুবাহিত বালি, পলি ইত্যাদি সূক্ষকণা বহুদূরে বাহিত ও সঞ্চিত হয়ে যে ভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস বলে। যথা—মধ্য এশিয়ায় গোবি মরুভূমি থেকে হাজার হাজার বছর ধরে লোয়েস বাহিত হয়ে চিনের হোয়াংহো অববাহিকায় বিস্তীর্ণ লোয়েস ভূমি গঠিত হয়েছে।

𖤂 আবহবিকার বা বিচূর্ণিভবন :
আবহবিকার বা বিচূর্ণিভবন শব্দটি আবহাওয়া থেকে এসেছে। আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান, বিশেষতঃ সূর্যালোকের উত্তাপ, বায়ুর আর্দ্রতা প্রভৃতির তারতম্যে ভূপৃষ্ঠের শিলাসমূহে যে পরিবর্তন ঘটে তাকে আবহবিকার বলে। 

বিভিন্ন প্রকারের আবহবিকার: আবহবিকার তিন ধরনের হয়, যথা— ➊ যান্ত্রিক আবহবিকার : এই ধরনের আবহবিকারে ভূপৃষ্ঠের শিলাসমূহ উত্তাপের তারতম্যে, তুষারের কার্যে এবং আংশিকভাবে গাছপালা ও জীবজন্তুর ক্রিয়াকলাপে ভেঙে খণ্ড খণ্ড হয়ে যায়। ➋ রাসায়নিক আবহবিকার: এই ধরনের আবহবিকারের ফলে বায়ুমণ্ড অবস্থিত জল, অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং জৈব পদার্থ ও অবশিষ্টাংশের দ্বারা শিলার খনিজদ্রব্যসমূহ বিয়োজিত এবং দ্রবীভূত হয়ে আলগা হয়ে পড়ে। ➌ জৈবিক আবহবিকার: এটি জীবজন্তু এবং বিভিন্ন জৈব পদার্থের দ্বারা সংঘটিত হয়, এবং এই আবহবিকারটি যান্ত্রিক এবং রাসায়নিক উভয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ করে থাকে। উদাহরণ – গাছের শিকড় দ্বারা আবহবিকার।

বিভিন্ন প্রকারের যান্ত্রিক আবহবিকার :
প্রস্তর চাঁই-এ বিচ্ছিন্নকরণ: এইপ্রকার আবহবিকার আবহাওয়ার তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য ঘটে থাকে। এটি বীরভূমের গ্রানাইট শিলায় বেশি দেখা যায় । ➋ ক্ষুদ্রকণা বিশরণ: শিলায় অবস্থিত বিভিন্ন খনিজ বিভিন্নভাবে প্রসারিত ও সংকুচিত হয় এবং এতে শিলায় বিভিন্ন টানের (strains) সৃষ্টি হয়ে শিলাখণ্ডটি ফেটে পড়ে। এটি মরু অঞ্চলে লক্ষণীয়। ➌ শল্কমোচন বা গোলাকৃতি আবহবিকার: শিলা উত্তপ্ত হয়ে উপরের দিকে প্রসারিত হয়ে পেঁয়াজের খোসার ন্যায় খুলে পড়ে (peel off)। গ্রানাইট জাতীয় শিলায় এবং উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে, এটি লক্ষণীয়। বীরভূমের দুবরাজপুরে মামা-ভাগ্নে পাহাড়েও এটি দেখা যায়। ➍ তুষার খণ্ডীকরণ: শিলায় ফাটল ও দারণ-এর মধ্যে বৃষ্টির জল ঢুকে যখন জমে বরফে পরিণত হয়, তখন এই আবহবিকারটি ঘটে। উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে এটি লক্ষণীয়।

রাসায়নিক আবহবিকারের প্রক্রিয়াসমূহ: এই আবহবিকারটি নিম্নলিখিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়—
হাইড্রেশান: রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় খনিজের সাথে জল যুক্ত হয়ে খনিজের যে পরিবর্তন ঘটায় তাকে হাইড্রেশান বলে। ➋ হাইড্রোলিসিস: জল হাইড্রোজেন আয়ন এবং হাইড্রক্সিল আয়নে ভেঙে যায় এবং এই হাইড্রক্সিল খনিজের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটায়। ➌ অক্সিডেশান: শিলায় উপস্থিত লৌহ-মিশ্রিত খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন যুক্ত হলে, তাকে অক্সিডেশান বলে। এর ফলে লোহা ‘ফেরিক অক্সাইডে’ পরিণত হয়ে সহজেই ভেঙে পড়ে। ➍ কার্বনেশান: বিভিন্ন খনিজের সাথে কার্বন ডাইঅক্সাইডের রাসায়নিক সংযোগকে কার্বনেশান বলে। ➎ দ্রবণ: রাসায়নিক আবহবিকারে গঠিত বিভিন্ন দ্রব্যকে জলে দ্রবীভূত করে অপসৃত করে এবং অপ্রত্যক্ষভাবে আবহবিকারে একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। ➏ ক্ষয়ীভবন: আবহবিকারের ফলে ভূ-ত্বকের উপরিস্তরের শিলা ক্ষুদ্র শিলাখণ্ডে ভেঙে পড়ে, কিন্তু অপসৃত হয় না। এই সকল শিথিল শিলাখণ্ডের অপসারণকে ক্ষয়ীভবন বলে। বিচূর্ণিভবন এবং ক্ষয়ীভবনের মধ্যে পার্থক্য হল, যে, ক্ষয়ীভবনের ফলে শিলাখণ্ডসমূহ দূরদেশে অপসারিত হয়, কিন্তু বিচূর্ণিভবনে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা স্থানচ্যুত হয় বটে, কিন্তু দূরদেশে অপসারিত হয় না।

𖤂 অভিক্ষেপ : 
ভূগোলকের সমাক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার জালিকাকে কোনো নির্দিষ্ট তলে (কাগজে) যথাযথ ও শ্রেণিবদ্ধভাবে স্থানান্তর করাকে অভিক্ষেপ বলা হয়।

অভিক্ষেপের প্রকারভেদ: বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে 4 ভাগে ভাগ করা যায়— ➊ সমক্ষেত্রতলবিশিষ্ট (Equal Area); ➋ সমাকৃতিবিশিষ্ট (Orthomorphic) ➌ সমদূরবর্তী (Equi-distant) এবং ➍ সমদিগংশ- বিশিষ্ট (Azimuthal)।

অভিক্ষেপের ব্যবহার :
  1. মেরুস্পর্শী জেনিথাল স্টিরিওগ্রাফিক অভিক্ষেপ (Polar Zenithal Stereographic Projection)-এর মাধ্যমে আন্টার্কটিকার মানচিত্র আঁকা যায়।
  2. শাঙ্কব অভিক্ষেপ (Conical Projection) - এর দ্বারা ইউরোপের মানচিত্র আঁকা যায়।
  3. বেলনাকার অভিক্ষেপ (Cylindrical Projection) -এর মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্র আঁকা যায়
  4. মার্কেটর অভিক্ষেপ (Mercator's Projection) -এর মাধ্যমে পৃথিবী আঁকা যায় এবং এটি নৌবহবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়।
  5. Polyconic অভিক্ষেপের মাধ্যমে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ,ইউরোপ আঁকা যায়। 
  6. বনস্ অভিক্ষেপ (Bonne's Projection) -এর দ্বারা ভারতের মানচিত্র আঁকা যায়।

গর্জনশীল চল্লিশা : দক্ষিণ গোলার্ধে পৃথিবীর জলের ভাগ বেশি এবং সেজন্য উত্তর-পশ্চিম বায়ু 40° – 60° দঃ অক্ষাংশের ভেতর দিয়ে বাধাহীনভাবে জোরে প্রবাহিত হয়। 40° অক্ষাংশে এই প্রবাহকে বলে গর্জনশীল চল্লিশা, 50° অক্ষাংশে বলে ক্রোধান্মত্ত পাশ (Furious fifties) প্রবলভাবে প্রবাহের জন্য ও শব্দের জন্য এই বায়ুকে বলে সাহসী পশ্চিমা ও 60° অক্ষাংশে একে বলে চিল্লানো ষাট (Screaming sixties) বায়ু (Brave west wind)।
ফন: রাইন উপত্যকার মধ্য দিয়ে আল্পসের পার্বত্য অঞ্চলে প্রবাহিত স্থানীয় বায়ুকে ফন বলে। এই বায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক হয়।
চিনুক: কানাডায় অবস্থিত রকি পার্বত্য অঞ্চলের পূর্বাংশে পশ্চিম থেকে প্রবাহিত স্থানীয় বায়ুকে চিনুক বলে। আন্দিজ থেকে পম্পাস্ (Pampas) তৃণভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুকে পাম্পেরো (Pampero) বলে । -.
লু: গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতের স্থলভাগ উত্তপ্ত হয় এবং উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণ বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে প্রবলবেগে প্রবাহিত হয় এই বায়ুকে লু অথবা আঁধি বলে ৷
দোয়াব: প্রধানত এটি গঙ্গা নদীর অববাহিকায় দেখা যায়। দুটি নদীর মাঝখানের পলিসঙ্কিত ভূমিভাগকে দোয়ার বলে।
থ্রিয়ান: প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে অনেকসময় মরু অঞ্চলে বিভিন্ন বালিয়াড়ি সরে সরে চলন্ত বালিয়াড়ির (Shifting sand duness) সৃষ্টি হয় একে থ্রিয়ান বলে।

তরাই: প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টির জন্য স্যাতস্যাতে আবহাওয়া, ছোটো ছোটো অনেক নদী এই তরাই অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। হিমালয়ের পাদদেশ হল তরাই অঞ্চল। নেপালে তরাই অঞ্চল রয়েছে।
ভাঙ্গর ও খাদার: নদীর কাজের ফলে পুরোনো পলি দিয়ে তৈরি যে উঁচু অংশ তাকে বলে ভাঙ্গর এবং নতুন পলিগঠিত ভূমিকে খাদার বলে।
মিস্ট্রাল: এটি সাহারা মরুভূমিতে দেখা যায়। মরুভূমি থেকে আগত উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু যেটি রোন (Rhone) উপত্যকা এবং ডুরান্স নদীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তাকে মিস্ট্রাল বলে।
মেশা ও বিউট: মালভূমি বিভিন্ন কারণে ক্ষয়ে যায়, ফলে মালভূমির ওপরের অংশ সমতল আকার নেয়। একে মেশা বলে এবং এটিও যখন ক্ষয়ে গিয়ে ক্ষুদ্রতর আকার নেয়, তখন তাকে বিউট বলে।
সমোষ্ণরেখা: যেসব অঞ্চলগুলির উষ্ণতা সমান হয়, সেইসব অঞ্চলগুলিকে যে কাল্পনিক রেখা দিয়ে যোগ করা হয় তাকে সমোষ্ণরেখা বলে।
সমপ্রেষরেখা: যেসব অঞ্চলগুলির বায়ুচাপ একই, সেইসব অঞ্চলগুলিকে যেসব কাল্পনিক রেখা দিয়ে যোগ করা হয় তাকে সমপ্রেষরেখা বলে।
সমবর্ষণরেখা: সমান বৃষ্টি যুক্ত অঞ্চলগুলিকে যে কাল্পনিক রেখা যুক্ত করে তাকে সমবর্ষণরেখা বলে।
সমসৌরকিরণরেখা: সমান সৌরকিরণযুক্ত অঞ্চলগুলিকে যে রেখা যুক্ত করে তাকে সমসৌরকিরণরেখা বলে।
সাড: এটি নীলনদের অববাহিকায় অবস্থিত। উচ্চভূমি হলেও ক্রান্তীয় বৃষ্টির ফলে অনেক নীচু অংশে জল জমে থাকে এবং এতে শ্যাওলা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। এই জলাভূমিকে সাড বলে।

হিমবাহ: হিমবাহ হল একটি বিশাল আকৃতির বরফের স্তূপ যা তুষার জমাট বেঁধে তৈরি হয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে। এটি চলন্ত অবস্থায় থাকে বা কোনো এক সময় চলন্ত অবস্থায় ছিল। আলাস্কার হাবার্ড হল পৃথিবীর বৃহত্তম পার্বত্য হিমবাহ; আন্টার্কটিকার ল্যাম্বার্ট হল পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ; গ্রিনল্যান্ডের কোয়ারেক হল পৃথিবীর দ্রুততম হিমবাহ; কারাকোরাম পর্বতের সিয়াচেন হল ভারতের বৃহত্তম হিমবাহ।

হিমশৈল: গ্রিনল্যান্ড, আলাস্কা অঞ্চলে হিমরেখা সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থিত বলে হিমবাহ জলে এসে পড়ে এবং এই হিমবাহের বৃহৎ অংশ যখন ভেঙে জলে ভাসতে থাকে, তখন তাকে হিমশৈল বলে। হিমশৈল উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে আসলে কিংবা ভাসতে ভাসতে নিম্ন অক্ষাংশে উপস্থিত হলে তা গলে যায় এবং তার মধ্যে সঞ্চিত শিলাচূর্ণ, কাদা প্রভৃতি মুক্তি পেয়ে সমুদ্রগর্ভে সঞ্চিত হয়ে মগ্নচড়ার (Sand Banks) সৃষ্টি করে। নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের নিকট সমুদ্রবক্ষে গ্র্যান্ড ব্যাংক (Grand Banks) নামক বিখ্যাত চড়াটি এইভাবে সৃষ্টি হয়েছে।

নর্মাল ল্যাপস্ রেট: উচ্চ পর্বতে আরোহণ করলে বা বিমানে করে ঊর্ধ্বাকাশে উঠলে উত্তাপ কমতে থাকে। এই উত্তাপ সাধারণভাবে প্রতি 300 ফুট উচ্চতায় 1° ফারেনহাইট (6.5°C / 1000 meter) হারে হ্রাস পায়। একে নর্মাল ল্যাপস্ রেট বলে। 

উপগ্রহ দ্বারা মৌসুমি গবেষণা বা MONEX: এটি মৌসুমি গবেষণা সংক্রান্ত একটি কর্মসূচি। বিশ্ব বায়ুমণ্ডল গবেষণা প্রকল্পের (Global Atmospheric Research Programme) অধীনে মৌসুমি বায়ুর গবেষণার একটি বিশেষ কার্যক্রম স্থির হয়, যা মৌসুমি গবেষণা বা মনেক্স নামে পরিচিত। এই কর্মসূচিতে একটি মার্কিন ভূ-উপগ্রহ GOES ভারত মহাসাগরের ওপর নিরক্ষরেখার 60° পূর্ব দ্রাঘিমার অবস্থানে থেকে মনেক্স অঞ্চলের বায়ুমণ্ডল সমীক্ষা করতে থাকবে। GOES মেঘমণ্ডলের অবস্থান নিরীক্ষণ করে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি কর্তৃক উৎক্ষিপ্ত
METEOSAT উপগ্রহের সাহায্যে মুম্বই-এ অবস্থিত উপগ্রহবার্তা গ্রাহক কেন্দ্রে তথ্য প্রেরণ করবে।

𖤂 বায়ুমণ্ডল :
ভূপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার কিমি ওপর পর্যন্ত নিভৃত, পৃথিবীর চারিদিকে বেষ্টনকারী গ্যাসীয় আবরণকে বায়ুমণ্ডল বলে। ➊ বিস্তার– ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় 10000 কিমি। ➋ বায়ুমণ্ডলের উপাদানের 97% পদার্থই রয়েছে ভূপৃষ্ঠ থেকে 29 কিমির মধ্যে।

বায়ুমণ্ডলের উপাদান
প্রধান উপাদান → পরিমাণ (%)
➊ নাইট্রোজেন :  78.084
➋ অক্সিজেন :  20.946
➌ আর্গন :  0.934
➍ কার্বন ডাই অক্সাইড :  0.033
➎ অন্যান্য গ্যাসীয় উপাদান :  0.002678
➏ জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা :  0-4

বায়ুমণ্ডলের স্তরভেদ : সর্বনিম্ন স্তর হল ট্রপোস্ফিয়ার। এর ঊর্ধ্ব সীমাকে বলে ট্রোপোপজ। এই স্তরেই সমস্ত মেঘের সৃষ্টি এবং বৃষ্টিপাত হয়। এরপরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। মেঘশূন্য ও বৃষ্টিহীন বলে একে শান্তমণ্ডল বলে। এর ঊর্ধ্বসীমাকে বলে স্ট্যাটোপজ। স্ট্যাটোস্ফিয়ারের গঠনকারী অন্যতম গ্যাস হল ওজোন (Ozone)। এর পরে আছে মেসোস্ফিয়ার এবং না ঊর্ধ্বসীমা হল মেসোপজ। থার্মোস্ফিয়ার এর ওপরের স্তর এবং এই স্তরে উত্তাপ প্রায় একরকমই থাকে বলে এই অঞ্চলকে আইসোথার্মাল অঞ্চল বা সমতাপ অঞ্চলও বলা হয়ে থাকে। এর পরের স্তর আয়োনোস্ফিয়ার। বেতার তরঙ্গ এই স্তরে প্রতিফলিত হলে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই স্তরের ফলেই সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে সুমেরুপ্রভা ও কুমেরুপ্রভার সৃষ্টি হয়। এর পরে যথাক্রমে আছে এক্সোস্ফিয়ার ও ম্যাগনেটোস্ফিয়ার।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন