পাসপোর্ট কী?
পাসপোর্ট একটি সরকারী দলিল যা কোনো দেশের নাগরিকের পরিচয় এবং নাগরিকত্ব প্রমাণ করে। এটি একজন ব্যক্তির জাতীয়তা এবং দেশীয় অবস্থানকে সনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাসপোর্ট একটি অনুমোদিত প্রমাণপত্র হিসেবে কাজ করে, যা ভ্রমণকারীকে বিদেশী রাষ্ট্রে প্রবেশ এবং প্রস্থান করার অনুমতি দেয়। সাধারণভাবে, পাসপোর্টে ব্যক্তির ছবি, নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয়তা, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে, এবং এটি সেই ব্যক্তির জন্য একটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সনদ হিসেবে কাজ করে।
প্রাচীন যুগে, পাসপোর্ট বা পত্রিকা মূলত রাজাদের বা রাষ্ট্রপ্রধানদের দ্বারা অনুমোদিত একটি চিঠি বা কাগজপত্র ছিল, যা তার অধীনে থাকা নাগরিকদের ভ্রমণের অনুমতি প্রদান করত। আধুনিক পাসপোর্ট ব্যবস্থা ১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক ভ্রমণের নিয়মকানুনের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে এবং সেই সময় থেকেই পাসপোর্টের কাঠামো ও কার্যকারিতা আরও সুসংহত হতে থাকে। পাসপোর্ট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, এবং প্রতিটি পাসপোর্টের ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্য আলাদা। বিভিন্ন দেশের সীমান্তে প্রবেশ এবং প্রস্থান করার জন্য পাসপোর্ট প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক। পাসপোর্টে অন্তর্ভুক্ত থাকা ভিসা সিল বা স্টিকার দেশের পক্ষ থেকে ওই ব্যক্তির প্রবেশ এবং বসবাসের অনুমতি প্রদান করে।
পাসপোর্টে সাধারণত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে, যেমন:
🔘 ব্যক্তির পূর্ণ নাম
🔘 জন্ম তারিখ এবং স্থান
🔘 জাতীয়তা
🔘 পাসপোর্ট নম্বর
🔘 ইস্যু করার তারিখ এবং মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ
🔘 পাসপোর্টধারীর ছবি
🔘 হস্তাক্ষর এবং অন্যান্য সিকিউরিটি বৈশিষ্ট্য
🔘 আজকে জানবো (world top 10 powerful passport)
বিশ্বের শীর্ষ ১০টি শক্তিশালী পাসপোর্টের নাম যা ভিসা ছাড়াই সেই দেশে প্রবেশ করা সম্ভব।
1. জার্মানি :
জার্মান পাসপোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী, যেখানে ১৯৬টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এবং শেনজেন এলাকার দেশগুলোতে জার্মান পাসপোর্টধারীরা বিশেষ সুবিধা পান, এবং কিছু নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলেও তারা ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন। ১৯৬টি দেশ বলতে যেসব দেশ জার্মান পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন, তাদের মধ্যে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক এবং অঞ্চলের দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যেমন: যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াঅন্যান্য অনেক দেশ, যেমন সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি।
2. সিঙ্গাপুর :
সিঙ্গাপুরের পাসপোর্টের মাধ্যমে ১৯৫টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করা যায়। সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা অনেক দেশ ও অঞ্চলে ভিসা ছাড়াই প্রবেশের সুবিধা উপভোগ করেন। সেগুলির মধ্যে বেশিরভাগ পশ্চিমী, এশীয়, ওশেনিয়া এবং কিছু আফ্রিকান দেশ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
3. দক্ষিণ কোরিয়া :
দক্ষিণ কোরিয়ার পাসপোর্টধারীরা ১৯৪টি দেশে ভিসা ছাড়াই যাতায়াত করতে পারেন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টগুলোর মধ্যে একটি, যা দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা প্রদান করে। দক্ষিণ কোরিয়ার পাসপোর্টধারীরা সাধারণত ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এবং অস্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন। এই সুবিধাগুলির কারণে, দক্ষিণ কোরিয়ার পাসপোর্টধারীদের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ অনেক সহজ এবং সুবিধাজনক।
4. ফিনল্যান্ড :
ফিনল্যান্ডের পাসপোর্টধারীরা ১৯৪টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে সক্ষম। ফিনল্যান্ডের পাসপোর্টধারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এবং শেঙ্গেন এরিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে সহজে ভ্রমণ করতে পারেন। এছাড়া, ফিনল্যান্ডের পাসপোর্টধারীরা অন্যান্য বহু উন্নত দেশেও, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর ইত্যাদিতে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে। ফিনল্যান্ডের পাসপোর্টধারীরা এ ধরনের সুবিধা ভোগ করার জন্য বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে একাধিক ভ্রমণ সুবিধা পাবেন, তবে কিছু দেশ বা অঞ্চলে নির্দিষ্ট শর্ত থাকতে পারে।
5. ইতালি :
ইতালির পাসপোর্টধারীরা ১৯৩টি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন। ইতালির পাসপোর্টধারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এবং শেঙ্গেন এরিয়া দেশগুলোতে সহজে ভ্রমণ করতে পারেন, এবং অনেক উন্নত দেশ, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর ইত্যাদিতে প্রবেশের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না।
6. লুক্সেমবার্গ :
লুক্সেমবার্গ পাসপোর্টধারীরা ১৯৩টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন। লুক্সেমবার্গ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এবং শেঙ্গেন এরিয়ার সদস্য হওয়ায়, লুক্সেমবার্গের নাগরিকরা অন্যান্য শেঙ্গেন অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহজেই ভ্রমণ করতে পারেন। এছাড়া, লুক্সেমবার্গের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশ ও অঞ্চলে, যেমন জাপান, সিঙ্গাপুর, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইত্যাদি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন।
7. সুইডেন :
সুইডেনের পাসপোর্টের মাধ্যমে ১৯৩টি দেশে প্রবেশ করা যায়। সুইডেনের পাসপোর্টধারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এবং শেঙ্গেন এরিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে সহজে ভ্রমণ করতে পারেন। এছাড়া, সুইডেনের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের অন্যান্য অনেক উন্নত দেশে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর ইত্যাদিতে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন।
8. স্পেন :
স্পেনের পাসপোর্টধারীরা ১৯৩টি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন। স্পেনের পাসপোর্টধারীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এবং শেঙ্গেন এরিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে মুক্তভাবে ভ্রমণ করতে পারেন। এছাড়া, স্পেনের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতেও, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদিতে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন, অথবা স্পেনের নাগরিকরা অনেক দেশে ভিসা অন অ্যারাইভাল বা ই-ভিসা সুবিধাও উপভোগ করতে পারেন। তবে, নির্দিষ্ট কিছু দেশে প্রবেশের জন্য শর্ত এবং নিয়মাবলি থাকতে পারে।
9. ডেনমার্ক :
ডেনমার্কের পাসপোর্টধারীরা ১৯৩টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন। ডেনমার্ক ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এবং শেঙ্গেন চুক্তির সদস্য হওয়ায়, ডেনমার্কের পাসপোর্টধারীরা শেঙ্গেন অঞ্চল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্যদেশগুলোতে সহজেই ভ্রমণ করতে পারেন। এছাড়া, ডেনমার্কের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান ইত্যাদিতে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন।
10. নেদারল্যান্ডস :
নেদারল্যান্ডসের পাসপোর্টধারীরা ১৯৩টি দেশে ভিসা ছাড়াই যেতে পারেন। নেদারল্যান্ডস ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এবং শেঙ্গেন এরিয়ার সদস্য হওয়ায়, নেদারল্যান্ডসের পাসপোর্টধারীরা শেঙ্গেন অঞ্চলের দেশগুলোতে মুক্তভাবে ভ্রমণ করতে পারেন। এছাড়া, নেদারল্যান্ডসের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশ, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদিতে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন। তবে, নির্দিষ্ট কিছু দেশে প্রবেশের জন্য শর্ত এবং নিয়মাবলি থাকতে পারে।
আজকাল, পাসপোর্টে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যেমন বায়োমেট্রিক তথ্য আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিস সংরক্ষণ করা হয়। এটি পাসপোর্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য করা হয়, যাতে এটি জালিয়াতি বা অন্য কোনো ধরনের প্রতারণা থেকে সুরক্ষিত থাকে।