Class 11 Political Science | Semester-2 Study Notes (Mark-6) | Unit-1 Key Concepts of Political Theory


    Mark-6 Notes   Part-2
Q4. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো? “কঠোর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভবও নয়, কাম্যও নয়” – মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
অথবা, “পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয়, কাম্যও নয়” – এই মত কী তুমি সমর্থন করো ? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। (Mark : 3+3=6)
Q5. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা করো। (Mark : 6)
Q6. ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো। (Mark : 6)
Q7. সাম্য ও ন্যায়ের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো। (Mark : 6)
Q8. সাম্যের বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে আলোচনা করো।  (Mark : 6)
Q9. আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা করো। 
অথবা, আইন হল স্বাধীনতার শর্ত—ব্যাখ্যা করো। (Mark : 6)
Q10. স্বাধীনতার সংজ্ঞা নিরূপণ করো এবং এর প্রকারভেদ আলোচনা করো।
অথবা, স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও। স্বাধীনতার বিভিন্নরূপ সম্পর্কে আলোচনা করো। (Mark : 3+3=6)
Q11. আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? (Mark : 3+3=6)
Q12. আইনের প্রমুখ উৎস গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো?
অথবা,আইনের বিভিন্ন উৎস আলোচনা করো। (Mark : 6)


Q4. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে কী বোঝো? “কঠোর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভবও নয়, কাম্যও নয়” – মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।
অথবা, “পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয়, কাম্যও নয়” – এই মত কী তুমি সমর্থন করো ? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। (Mark : 3+3=6)
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি : যে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারের তিনটি বিভাগ শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ যখন স্বতন্ত্রভাবে নিজ নিজ কার্যসম্পাদন করে, তখন তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি (Theory of Separation of Power) বলা হয়।

কঠোর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভব নয় : কঠোর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ সম্ভব নয়, তার কারণগুলি হল—
① সরকারের বিভিন্ন বিভাগে সহাযাগিতার অভাব : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি যদি বাস্তবে কার্যকরী হয়, তাহলে প্রত্যেক বিভাগ আপন বিভাগের কাজকর্ম ও ক্ষমতার সংরক্ষণ নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। এক বিভাগ অপর বিভাগকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবে না। যা সুষ্ঠু শাসনকার্যে বাধা সৃষ্টি করে।

② মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই নীতি প্রয়োগের ফলে অসংগতি সৃষ্টি : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পরিপূর্ণ প্রয়োগ ঘটা সম্ভবপর নয়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্রভাবে বিভাগীয় কাজকর্ম সম্পাদন করতে পারে না । প্রতিটি বিভাগের উপর অপর দুটি বিভাগের কিছু না কিছু নিয়ন্ত্রণ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।

③ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ অসম্ভব : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ সম্ভব নয়। কারণ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিই হল গণতান্ত্রিক সরকারের মূল মন্ত্র। এখানে কোনো-না-কোনোভাবে এক বিভাগ অপর বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা অন্য বিভাগের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

কঠোর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সমীচীনও নয় : কঠোর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সমীচীন বা কাম্যও নয়, তার কারণগুলি হল—
① বিভিন্ন বিভাগের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কার্যকরী হলে প্রতিটি বিভাগ পরস্পরের সঙ্গে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়, কিন্তু সরকারের কাজকর্মের সামগ্রিক সাফল্যের জন্য প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতাই কাম্য।

② সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় এই নীতির প্রয়োগ অসম্ভব : সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়। কারণ এইরূপ শাসনব্যবস্থায় আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠন করে ফলে এক বিভাগ আর এক বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

③ বিভাগীয় স্বৈরাচারিতার পথ প্রশস্ত : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কার্যকরী হলে, স্বৈরাচারের বদলে ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে না। বরং, স্বৈরাচারের পথ প্রশস্ত হবে।

④ ব্যক্তিস্বাধীনতার একমাত্র রক্ষাকবচ নয় : সরকারের স্বৈরাচারী কার্যকলাপের হাত থেকে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য মন্তেস্কু ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ ব্যক্তিস্বাধীনতার একমাত্র রক্ষাকবচ নয়। এর জন্য প্রয়োজন জাগ্রত জনচেতনা এবং স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য তীব্র স্পৃহা।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রে পূর্ণ ক্ষমতা। স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব না হলেও আংশিক ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ অবশ্যই প্রয়োজন।

Q5. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বটি সংক্ষেপে আলোচনা করো। (Mark : 6)
▸ ভূমিকা : যে-কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের সরকারের তিনটি বিভাগ (শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ) যখন স্বতন্ত্রভাবে নিজ নিজ কার্যসম্পাদন করে, তখন তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি (Theory of Separation of Power) বলা হয়। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বটি আলোচনা করতে হলে তার ইতিহাস, অর্থ, মূল কথা, প্রবক্তাগণ, বাস্তব প্রয়োগ, প্রয়োজনীয়তা এইগুলি আলোচনা করা দরকার, যা নিম্নে আলোচনা করা হল—

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের ইতিহাস : ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের ধারণাটি অত্যন্ত প্রাচীন। অ্যারিস্টটলের রচনায় প্রথম এই নীতির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।এরপর রোমান চিন্তাবিদ সিসেরো ও পলিবিয়াসের রচনাতেও ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়। এ ছাড়া ষোড়শ শতাব্দীর ফরাসি দার্শনিক জাঁ বোদা, ব্রিটিশ দার্শনিক মন্তেস্কু, চিন্তাবিদ লক্ ও হ্যারিংটন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে যথেষ্ট সমর্থন জানিয়েছিলেন।

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল—  ① সরকারের যে বিভাগের যা কাজ, তা সেই বিভাগেরই করা দরকার। ② এক বিভাগের কাজ আর এক বিভাগের করা উচিত নয়। ③ এক বিভাগের কাজ অন্য বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়াও উচিত নয়। ④ একই ব্যক্তির একাধিক বিভাগের সঙ্গে জড়িত থাকা উচিত নয়।

পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইতালির চিন্তানায়ক ম্যাকিয়াভেলি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ এবং নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতিকে সমর্থন করেন। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণকে একটি বলিষ্ঠ তত্ত্ব বা মতবাদ হিসেবে প্রথম প্রতিষ্ঠিত করেন অষ্টাদশ শতাব্দীর খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মন্তেস্কু। তিনি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণকে ব্যক্তিস্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে প্রচার করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক মৌলিক নীতি প্রবর্তন করেন। ১৭৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর 'The Spirit of Laws' গ্রন্থে তিনি ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ তাত্ত্বিক রূপ দান করেন। মন্তেস্কু মনে করতেন, স্বৈরাচারী শাসনে জনগণের স্বাধীনতা বিপর্যস্ত হয়ে পরে কারণ, একই ব্যক্তির হাতে সরকারের একাধিক বিভাগের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়। এর ফলস্বরূপ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, এই নীতি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়, কারণ এই নীতি কার্যকর হলে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে অযথা বাধা সৃষ্টি করবে ফলে সরকার অচল হয়ে পড়বে। তা সত্ত্বেও এই নীতির গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তাই বলা যায়, মন্তেস্কু-এর ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সংযমী শাসনেরই এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডের আইনজ্ঞ ব্ল্যাকস্টোনের লেখা 'Commentaries of the Laws of England' ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ গ্রন্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ ঘটে। এ ছাড়াও ম্যাডিসন ও হ্যামিলটনের রচনাগুলিতেও ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমর্থন মেলে।

Q6. ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো। (Mark : 6)
ভূমিকা : স্বাধীনতা, অধিকার ও সাম্যের মতো ন্যায়-এর আদর্শকে গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে একান্তভাবে অপরিহার্য বলে মনে করা হয়। তাই একটি যথার্থ গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের জন্য ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠা হওয়াটা একান্তভাবে প্রয়োজন। ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এই ধারণাগুলি প্রকৃত অর্থে একই সূত্রে গ্রথিত, যা তত্ত্বগতভাবে সামগ্রিকতার সৃষ্টি করে। 

ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক : ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক নিম্নে আলোচনা করা হল—
① ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের শর্তসাপেক্ষ : অবাধ স্বাধীনতা আসলে একটি স্ববিরোধী ধারণা, কেন-না স্বাধীনতা কখনোই বাধাহীন বা নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে না। প্রকৃত স্বাধীনতার ধারণাটি সাম্যের নীতির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ন্যায় ও সাম্যের স্বার্থে স্বাধীনতার উপর আরোপিত সকল প্রকার নিয়ন্ত্রণকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই কারণেই স্বাধীনতার ধারণাটিকে ন্যায় ও সাম্য নীতির শর্তসাপেক্ষ বলে মনে করা হয়।

② ন্যায় স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে সংযোগসাধন করে : অধ্যাপক বার্কার ন্যায়কে একটি সংযোগসাধনকারী ধারণা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। ন্যায়ের ধারণাটি একাধিক ব্যক্তির মধ্যে সংযোগসাধনের পাশাপাশি একাধিক নীতির মধ্যেও সংযুক্তি ঘটায়। আসলে স্বাধীনতা ও সাম্য সম্পর্কিত বহু দাবির মধ্যে ন্যায়নীতির মাধ্যমে একটি সেতু রচিত হয়।

③ ন্যায়ের নীতি সাম্য, স্বাধীনতা ও সৌভ্রাতৃত্বের নীতিগত ভারসাম বজায় রাখে : সাম্য, স্বাধীনতা ও সৌভ্রাতৃত্বের পারস্পরিক বিরোধের পাশাপাশি কোনো একটি নীতির অভ্যন্তরীণ একাধিক উপাদানের মধ্যেও বিরোধ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে, এই বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি চূড়ান্ত নীতি হিসেবে ন্যায়ের নীতিকেই গ্রহণ করা হয়।

④ সাম্য, স্বাধীনতা ও সৌভ্রাতৃত্বের নীতিতে ন্যায় হল বিন্যাস ব্যবস্থা : কিছু মানবিক মূল্যবোধকে স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে মানবসমাজে সাম্য, স্বাধীনতা ও সৌভ্রাতৃত্ব বিরাজ করে। এই মানবিক মূল্যবোধগুলিই সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দায়ী, কারণ এই মূল্যবোধগুলির উপর নির্ভর করেই সাম্য, স্বাধীনতা ও সৌভ্রাতৃত্বের মধ্যে নীতিগত ভারসাম্য বজায় থাকে।

⑤ ন্যায়ের প্রথম শর্তই হল স্বাধীনতা : স্বাধীনতাবিরোধী যে-কোনো ধরনের কার্যকলাপ অন্যায় বলে বিবেচিত হয়। তাই এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কর্মসমূহ ন্যায়নীতির ভিত্তিতে জনসাধারণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। এই কারণেই ন্যায়ের প্রথম শর্ত হিসেবে স্বাধীনতাকে চিহ্নিত করা হয়। 

উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনা থেকে এই ধারণা স্পষ্ট যে, ন্যায় স্বাধীনতা ও সাম্য পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ন্যায় ও সাম্য ছাড়া যেমন স্বাধীনতা হয় না, তেমনই স্বাধীনতা ছাড়াও ন্যায় ও সাম্য অসম্পূর্ণ। তাই আধুনিক সমাজব্যবস্থায় এই তিনটি ধারণার পারস্পরিক সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷

Q7. সাম্য ও ন্যায়ের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো। (Mark : 6)
সাম্য ও ন্যায়ের আন্তঃসম্পর্ক: কোনো গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে গেলে সর্বপ্রথম সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করাটা জরুরি। স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বকে ন্যায় অখণ্ডতা প্রদান ও ঐক্যবদ্ধ করে। অধ্যাপক ল্যাস্কি মনে করেন, আধুনিক রাষ্ট্রে বৈষম্যকে বজায় রেখে কখনোই প্রকৃত ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যেমন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে, তেমনই আইন প্রণয়ন করে। এর ফলে আইনের চোখে সকলে সমান ও আইন কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষণ নীতি গৃহীত হয় এবং আইনসংগত ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হয়। আইনের অনুশাসন নীতি রাজনৈতিক ন্যায়কে সুনিশ্চিত করে। অন্যদিকে আইনের দৃষ্টিতে সাম্য, বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব বলে মনে হয়।

সাম্য ও ন্যায়ের সম্পর্ক প্রসঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অভিমত : সাম্য ও ন্যায়ের সম্পর্ক প্রসঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা তাঁদের মতামত পেশ করেছেন, যথা—  ① প্লেটোর অভিমত: প্লেটো-র মতে, নৈতিক ভাবনারূপে ন্যায়ের সঙ্গে কর্তব্যের বন্ধন থাকলেও সাম্যের তত্ত্ব এখানে সরাসরি আসেনি। সাম্যের মাধ্যমে ন্যায়ের মানবিক ভাবনার প্রচার ঘটেনি। তাঁর ভাবনায় শ্রেণির পার্থক্য, ক্ষমতার শ্রেণিগত সুবিধার কথা প্রাধান্য পেয়েছে। ② বার্কারের অভিমত: সাম্য ও ন্যায়কে একসূত্রে বাঁধার প্রচেষ্টা সর্বপ্রথম অধ্যাপক বার্কার-এর আলোচনায় পরিলক্ষিত হয়। বার্কার সাম্য ও ন্যায়কে পরস্পরের পরিপূরক ধারণা হিসেবে দেখেছেন। ③ ল্যাস্কির অভিমত: অধ্যাপক ল্যাস্কিও ন্যায় ও সাম্যের সম্পর্কের মধ্যে কোনো বিভেদ করেননি। তিনি বলেছেন যে, সমাজের উদ্‌বৃত্ত উৎপাদন যদি সকলের মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হয়, তাহলে সাম্যের সঙ্গে ন্যায়ের কোনো পার্থক্য দেখতে পাওয়া যাবে না। ④ সামাজিক মূল্যবোধের প্রেক্ষিতে সাম্য ও ন্যায়: সাম্যের ধারণাটি একটি গতিশীল ধারণা। কোনো সমাজে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক মূল্যবোধ সেই সমাজের সাম্যের ধারণাটি নির্মাণ করে। একইভাবে, ন্যায়ের ধারণাটিও একটি সচল ধারণা যা সংশ্লিষ্ট সমাজে প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধগুলির দ্বারা নির্ধারিত হয়। সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটলে সংশ্লিষ্ট সমাজের সাম্য ও ন্যায়ের ধারণাটিও পরিবর্তিত হয়ে যায়। ⑤ বণ্টনমূলক ন্যায় ও আনুপাতিক সাম্য : অ্যারিস্টট্ল বণ্টনমূলক ন্যায় এবং আনুপাতিক সাম্যের কথা প্রচার করেছিলেন। বণ্টনমূলক ন্যায়ের ধারণা অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্যক্তি সমাজের প্রতি যে অবদান রাখবে তার ভিত্তিতেই সে তার প্রাপ্য লাভ করবে। এখানে আনুপাতিক সাম্যের নীতিও রয়েছে কারণ, বণ্টনমূলক ন্যায়ে স্বীকৃত যে, যারা সমান তাদের প্রাপ্যও হবে সমান। আবার যারা অসমান, তাদের প্রাপ্যও হবে অসমান। 

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, সাম্য ও ন্যায়ের সম্পর্কে তাত্ত্বিক দৃষ্টিতে যতই বিতর্ক থাকুক না কেন, মূল কথা হল সাম্য ও ন্যায় একে অপরের পরিপূরক একটি ধারণা। তাই রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ও বিন্যাস হিসেবে সাম্য ও ন্যায়ের ভাবনা দুটি পাশাপাশি অবস্থান করছে।

Q8. সাম্যের বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে আলোচনা করো।  (Mark : 6)
ভূমিকা : সাম্য একটি বহুমাত্রিক ধারণা। সুতরাং, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রকার সাম্যের ধারণার উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— ① সামাজিক সাম্য ② রাজনৈতিক সাম্য ③ আইনগত সাম্য ④ অৰ্থনৈতিক সাম্য ⑤ সাংস্কৃতিক সাম্য ⑥ লিঙ্গ সাম্য। 

① সামাজিক সাম্য : সামাজিক সাম্য হল একটি বাস্তবতা। সাধারণ অর্থে সামাজিক সাম্য বলতে বোঝায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশমর্যাদা, স্ত্রী-পুরুষ, ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকলের সামাজিক ক্ষেত্রে মর্যাদা। এককথায় বলা যায়, সমাজে যখন মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করা হয় না, তখন তাকে সামাজিক সাম্য বলে অভিহিত করা হয়।

② রাজনৈতিক সাম্য : রাজনৈতিক সাম্য বলতে বোঝায় স্ত্রী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত নাগরিকের রাজনৈতিক অধিকার ভোগের সমতা। রাজনৈতিক সাম্যই হল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। কারণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকার গঠন ও পরিচালনার দায়িত্ব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের উপর নির্ভর করে।

③ আইনগত সাম্য : উদারবাদী দর্শনে আইনগত সাম্য প্রতিষ্ঠার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আইনগত সাম্যের দুটি মূল বিষয় হল— (i) আইনের দৃষ্টিতে সাম্য (ii) আইন কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার। এই দুটি অধিকারকে একত্রে আইনগত সাম্য বলে অভিহিত করা হয়।

④ অৰ্থনৈতিক সাম্য : অর্থনৈতিক সাম্য বলতে দেশের সকল নাগরিকের আর্থিক সুযোগসুবিধা ভোগের সমতাকে বোঝায়। বুর্জোয়া তাত্ত্বিকদের মতে, আয় ও সম্পত্তির অধিকারের সমতাই হল অর্থনৈতিক সাম্য। অধ্যাপক ল্যাস্কি-র মতে, অর্থনৈতিক সাম্য ছাড়া রাজনৈতিক সাম্য মূল্যহীন হয়ে পড়ে।

⑤ সাংস্কৃতিক সাম্য : সাংস্কৃতিক সমতা হল এমন এক ধরনের সমতা যেখানে বহুত্ববাদী সমাজে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কৃতিগত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সমাজে তাদের সঙ্গে কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, না। সাংস্কৃতিক পার্থক্য নির্বিশেষে সকলকে তার সংস্কৃতি বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ দেওয়া হয়।

⑥ লিঙ্গ সাম্য : অক্সফোর্ড অভিধান অনুসারে, লিঙ্গ সাম্য বলতে লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে নারী ও পুরুষের প্রতি সমআচরণ ও সমসুযোগের ধারণাকে বোঝায়। অর্থাৎ অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান সুযোগ ও অংশগ্রহণকে সুনিশ্চিত করাই হল লিঙ্গ সাম্য।

Q9. আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক আলোচনা করো। 
অথবা, আইন হল স্বাধীনতার শর্ত—ব্যাখ্যা করো। (Mark : 6)
ভূমিকা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল—আইন ও স্বাধীনতা। কারণ, আইন ও স্বাধীনতাকে পরস্পরের পরিপূরক ভাবা হয় এবং বলা হয় আইন হল স্বাধীনতার শর্ত (Law is the condition of liberty)। আবার যারা অবাধ স্বাধীনতা বা অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থকে সমার্থক ভাবেন তাদের কাছে আইন ও স্বাধীনতার ধারণা দুটি পরস্পরবিরোধী।

আইন ও স্বাধীনতার পারস্পরিক সম্পর্ক : 
① আইল ও স্বাধীনতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত বা পরিপূরক ধারণা : আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে বলা যায়, স্বাধীনতা অবাধ নয়। কারণ, একজনের স্বাধীনতা অন্যজনের স্বাধীনতা ভোগে বাধা হয়ে দাড়ালে আইন-ই তার সমাধান করবে। স্বাধীনতা একদিকে আইনের উপর এবং অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের উপর নির্ভরশীল। কারণ আইনের দ্বারাই রাষ্ট্র স্বাধীনতা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।  স্বাধীনতার উপর আইনের প্রত্যক্ষ প্রভাব বর্তমান। রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃত্ব অর্থাৎ সরকার এবং আইনের উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিস্বাধীনতার সংরক্ষণ করা। এই কারণেই বলা হয় আইন হল স্বাধীনতার শর্ত। স্বাধীনতা রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়। আইনের দ্বারা সৃষ্ট ও সংরক্ষিত স্বাধীনতা হল আইনি অনুমোদিত স্বাধীনতা। এ প্রসঙ্গে বার্কার বলেছেন, এইরূপ স্বাধীনতা অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। (“...legal liberty, just because it is legal, is not an absolute or unconditional liberty.")

② আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর পরস্পরের বিরোধী : অধ্যাপক ল্যাস্কি বলেছেন, স্বাধীনতার প্রকৃতিতেই নিয়ন্ত্রণ বর্তমান। স্বাধীনতা অনিয়ন্ত্রিত হলে দুর্বলের স্বাধীনতা সবলের দয়ার দানে পরিণত হবে। যেমন— শিল্পপতিদের অবাধ স্বাধীনতা ভোগের অধিকার থাকলে শ্রমিকদের অধিকার সংকুচিত হবে এবং তাদের জীবন সংকুলান হয়ে উঠবে কষ্টকর। উদারনীতিবাদী ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চিন্তাবিদদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর পরস্পরের বিরোধী। তাঁরা মনে করেন, রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী এবং আইনের মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রের এই সার্বভৌম ক্ষমতার অভিব্যক্তি ঘটে। নৈরাজ্যবাদীদের অভিমতও এক্ষেত্রে পুরোপুরি স্পষ্ট। গডউইন, বাকুনিন প্রমুখ নৈরাজ্যবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্র ও তার আইনকে ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে ক্ষতিকারক বলে মনে করেছেন।

উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনাগুলি বিশ্লেষণ করে বলা যায়, আইন হল স্বাধীনতার পরিপূরক, আইন ছাড়া স্বাধীনতার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। কারণ আইন একদিকে যেমন স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে কাজ করে, অন্যদিকে তেমনি স্বাধীনতা সম্প্রসারণেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Q10. স্বাধীনতার সংজ্ঞা নিরূপণ করো এবং এর প্রকারভেদ আলোচনা করো।
অথবা, স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও। স্বাধীনতার বিভিন্নরূপ সম্পর্কে আলোচনা করো। (Mark : 3+3=6)
স্বাধীনতার সংজ্ঞা : স্বাধীনতা বিষয়ে গৃহীত সংজ্ঞা হিসেবে বলা যায়, স্বাধীনতা হল অধিকারের ফল। অতি শাসনের বিপরীত অবস্থাই হল স্বাধীনতা৷ বিনা বাধায় নিজ ব্যক্তিত্ব বিকাশ করার অধিকারকে স্বাধীনতা বলে। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পাঠে স্বাধীনতার সংজ্ঞাকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু সংজ্ঞা নিম্নে আলোচনা করা হল—

জন স্টুয়ার্ট মিল তাঁর ‘On Liberty' শীর্ষক গ্রন্থে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে স্বাধীনতার সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি ব্যক্তিস্বাধীনতায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরোধী ছিলেন। তাঁর মতে, স্বাধীনতা হল ব্যক্তির চিন্তাধারার অব্যাহত প্রকাশ। রুশো স্বাধীনতা বলতে বুঝিয়েছেন সেই রাজনৈতিক পরিবেশ, যা মানুষকে সরল ও সীমাবদ্ধ জীব থেকে উন্নত, বিচার বুদ্ধিসম্পন্ন জীবে পরিণত করে। অধ্যাপক বার্কার তাঁর 'Political Thought in England' 1848-1914 শীর্ষক রচনায় স্বাধীনতাকে একটি আইনগত ধারণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, স্বাধীনতা ভোগকে নিশ্চিত করতে হলে ব্যক্তির কাজকর্মের উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকাটা দরকার। তিনি স্বাধীনতাকে একটি নীতি হিসেবে দেখেছেন, যার মূল লক্ষ্য হল ব্যক্তির সামর্থ্যের সর্বাধিক বিকাশ ঘটানো ৷ গ্রিন ইতিবাচক অর্থে স্বাধীনতার ধারণটি বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর মতে, স্বাধীনতা হল চরম উৎকৃষ্টতা যা কোনো কিছু সম্পাদন করা বা যা আমরা একযোগে অপরের সঙ্গে সম্পাদন করতে পারি।

স্বাধীনতার বিভিন্ন রূপ বা প্রকারভেদ : ① প্রাকৃতিক স্বাধীনতা : রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বাবস্থায় মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বসবাস করে যে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করত, তাকে প্রাকৃতিক স্বাধীনতা বলা হয়। তবে বাকুনিন-এর মতো নৈরাজ্যবাদী দার্শনিকরা প্রাকৃতিক স্বাধীনতাকে অবাস্তব কল্পনা বলে অভিহিত করেছেন।

② জাতীয় স্বাধীনতা : জাতীয় স্বাধীনতার অর্থ হল, যেসকল দেশ অন্য কোনো রাষ্ট্রের অধীনে নয়, সেই সকল দেশ জাতীয় স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে। জাতীয় স্বাধীনতা বলতে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার স্বাধীনতাকে বোঝায়। এইরূপ স্বাধীনতা সকল প্রকার কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত।

③ সামাজিক স্বাধীনতা : সামাজিক স্বাধীনতা বলতে বোঝায়, মানুষ সমাজে স্বাধীনভাবে বাস করবে এবং তার চলাফেরার উপর কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ বা বাধানিষেধ থাকবে না। মূলত রাষ্ট্রীয় আইনের মধ্য দিয়ে সামাজিক স্বাধীনতা রক্ষিত হয়।

④ অহিলসংগত স্বাধীনতা : রাষ্ট্র কর্তৃক আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত, সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাকে আইনসংগত স্বাধীনতা বলা হয়। প্রকৃতিগত বিচারে এইরূপ স্বাধীনতা সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট এবং সুনিয়ন্ত্রিত। আইনসংগত স্বাধীনতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছ। 

Q11. আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? (Mark : 3+3=6)
❐ আইনের সংজ্ঞা : আইন সেই সমস্ত নিয়ম, যার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়। আইনকে সবসময় অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে হয়। অনিত্য আইন বলে কোনো ধারণা নেই, আইন হল মূলত— মানুষের কৃতিত্বের সমগ্র প্রকাশ “.. the product of totality of human achievements." তবে আইনের সংজ্ঞা নিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ লক্ষ করা যায়—

জন অস্টিন-এর মতে, আইন হল সার্বভৌমের আদেশ (Law is the command of the sovereign)। তাঁর মতে, আইন হল অধস্তনের প্রতি ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক কর্তৃত্বের আদেশ। রাজনৈতিক সমাজে সার্বভৌমই হল সেই সুনির্দিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে নিজে কোনো আদেশের বশবর্তী নয়, কিন্তু যার আদেশ অন্য সকলের কাছে শিরোধার্য। হল্যান্ড-এর মতে, আইন হল মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী সেই সমস্ত নিয়ম, যা সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রযুক্ত হয়। হেনরি মেইন বলেন, সমাজে প্রচলিত সকল আইনকেই সার্বভৌম কর্তৃত্বের আদেশ বলে ধরে নিলে তা ভুল হবে। এমন বহু আইন আছে যা সম্পূর্ণভাবেই প্রথাগত, কোনো সার্বভৌম কর্তৃক প্রণীত হয়নি। গেটেল আইন বলতে, শুধুমাত্র সেই সমস্ত নিয়মকে বুঝিয়েছেন, যা রাষ্ট্র সৃষ্টি, স্বীকার ও বলবৎ করে। মার্কসবাদীদের দৃষ্টিতে শ্রেণিসমাজের স্বার্থে ও প্রয়োজনেই আইনের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের মতে, আর্থিক ব্যবস্থার বিন্যাস ও বণ্টনের উপর আইনের চরিত্র নির্ভরশীল। তাই মার্কসবাদী তাত্ত্বিক ভিশিস্কি-র মতে, আইন বলতে সেই সমস্ত আচরণবিধিকে বোঝায়, যার মাধ্যমে প্রতিপত্তিশালী শ্রেণির ইচ্ছা প্রকাশ লাভ করে।

আইনের বৈশিষ্ট্য : সাবেকি ও আধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে আইনের বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল— ① আইন হল কতকগুলি বিধিবদ্ধ আচার-আচরণ। ② আইন মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ম। মানুষের চিন্তাভাবনার উপর আইনের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ③ রাষ্ট্রই সার্বভৌম সংস্থা হিসেবে আইনি ব্যবস্থাকে বজায় রাখে। রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত বিধিই হল আইন এবং এর দ্বারা নাগরিক জীবনের সীমারেখা স্থির হয়। রাষ্ট্রের সভ্য হিসেবে ব্যক্তির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আইন বাধ্যতামূলক। ④ আইন গতিশীল এবং দেশকালভেদে পরিবর্তনশীল। ⑤ আইন প্রথা, রীতিনীতির ঊর্ধ্বে অবস্থান করে বলেই আইনের পিছনে সার্বভৌম শক্তির সমর্থন থাকে, যার ফলে আইন সবার উপরে অবস্থান করে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আইন হল সেইসব নিয়ম, যার মাধ্যমে সমাজের কল্যাণ সম্ভব। রুডল্‌ফ স্ট্যামলার বলেছেন, আইনের পিছনে আছে সমষ্টিগত ইচ্ছা ও সামাজিক লক্ষ্যসমূহ আইনের প্রমুখ উৎসগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

Q12. আইনের প্রমুখ উৎস গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো?
অথবা,আইনের বিভিন্ন উৎস আলোচনা করো। (Mark : 6)
ভূমিকা : অতীতে আইনের উৎস হিসেবে ঈশ্বরের আদেশ, প্রথা, ধর্ম ইত্যাদিকে বোঝানো হত। পরবর্তীকালে আইনকে সংকলিত আইন হিসেবে দেখা হয়।

আইনের উৎসসমূহ : অধ্যাপক হল্যান্ড-এর মতানুসারে, আইনের প্রধানত ছয়টি উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়। সেগুলি হল— ① প্রথা ② ধর্ম   ③ বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত ④ বিজ্ঞানসন্মত আলোচনা ⑤ ন্যায়নীতি ⑥ আইনসভা। 

① প্রথা : প্ৰথা বলতে সমাজে বহুদিন ধরে প্রচলিত আচার-আচরণ, অভ্যাস, রীতিনীতি ও লোকাচারকে বোঝায়। কোনো এক সময়ে কোনো এক ব্যক্তি সমাজে যে রীতি তৈরি করেছিল, তা পরবর্তীকালে অনেকে অনুসরণ করে ফলে সেই রীতিকে বলা হয় প্রথা (Custom)। প্রথা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি লাভ করলে আইনের মর্যাদা পায়। সব দেশের সাধারণ আইন (Common Law) প্রথার উপর প্রতিষ্ঠিত বলেই বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রথাকেই আইনের প্রাচীনতম উৎস বলে চিহ্নিত করেছেন।

② ধর্ম : প্রত্যেক দেশের প্রাচীন সমাজে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। প্রাচীনকালে নিরক্ষর ও ধর্মভীরু মানুষের কাছে ধর্মীয় অনুশাসন ছিল আইনেরই নামান্তর। পরবর্তীকালে ওই ধর্মীয় অনুশাসনই আইনে রূপান্তরিত হয়। এ প্রসঙ্গে উড্রো উইলসন বলেন, প্রথম যুগের রোমান আইনগুলি ধর্মীয় অনুশাসন ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। এককথায় আইন ও ধর্ম ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিল। 

③ বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত : সমাজজীবন ক্রমশ জটিলতর হয়ে উঠলে প্ৰথা ও ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে বিচারব্যবস্থারও প্রচলন ঘটে। প্রাচীনকাল থেকেই সমাজের দলপতি, গোষ্ঠীপতি, রাজা, জমিদার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ সমাজের বিশৃঙ্খলা ও বিরোধ মীমাংসার দায়িত্ব পালন করেছেন, বিচারকদের দেওয়া এই সমস্ত সিদ্ধান্তই পরবর্তীকালে আইনের মর্যাদা লাভ করে।

④ বিজ্ঞানসন্মত আলোচনা : আইনের অন্যতম প্রধান উৎস হল আইনজ্ঞদের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা (Scientific Discussion)। আইনজ্ঞ, পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মতামত, টীকা, মন্তব্য প্রভৃতি বিচারপতিরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিচার-বিশ্লেষণ ও আলোচনা করেন।

⑤ ন্যায়নীতি : আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল ন্যায়নীতি (Justice) বা ন্যায়বিচার। যেক্ষেত্রে প্রচলিত বা বিদ্যমান আইন সাধারণ বুদ্ধি, বিবেচনা অনুসরণ করে ব্যবহার হয় না, সেক্ষেত্রে বিচারক আইনের পবিত্রতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এবং আইনের ভুলত্রুটি সংশোধন করে একে সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে, পরিমার্জিতরূপে পেশ করেন।

⑥ আইনসভা : আধুনিক যুগে গণতন্ত্রের জয়যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই আইনসভাকে আইনের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আইনসভায় বিধিবদ্ধ আইনকে নির্দিষ্ট, পদ্ধতিগত, গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণাপ্রসূত আইন বলা হয়।

 Class 11 2nd Semester Notes Mark : 2
❍ History : Unit -1
❍ Political Science : Unit-1
     ⦿ Part-1
     ⦿ Part-2
_________________________________

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন