সালোকসংশ্লেষ | Saloksongslesh (Photosynthesis) | life science notes

পৃথিবীতে জীবজগতের প্রথম আবির্ভাব উদ্ভিদ। কারণ তারাই প্রথম সূর্যালোক থেকে শক্তি সংগ্রহ করে বেঁচে থাকার কৌশলটি আয়ত্ত করতে পেরেছিল। সবুজ উদ্ভিদরা সৌরশক্তিকে সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে রাসায়নিক শক্তিরূপে প্রথমে গ্লুকোজ এবং পরে অন্যান্য কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন প্রভৃতি জৈব যৌগে আবদ্ধ করে। জৈব যৌগের মূল উপাদান হল কার্বন, যা মূলত বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে গৃহীত হয়। জীবকুল উদ্ভিদের তৈরি এই সব জৈব যৌগকে অর্থাৎ শৃঙ্খলিত সৌরশক্তিকে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে পুষ্টি, বৃদ্ধি, জনন প্রভৃতি নানারকম শারীরবৃত্তীয় জীবনক্রিয়া সম্পন্ন করে। তাই বলতে হয় সৌরশক্তি সকল শক্তির মূল উৎস।

সবুজ উদ্ভিদ সৌরশক্তিকে খাদ্য তৈরির সময় খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ করে, শ্বসন পদ্ধতিতে উক্ত শক্তি সমন্বিত খাদ্য জীব-দেহকোশে অক্সিজেনের সাহায্যে জারিত হয়ে স্থৈতিক শক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই গতিশক্তি জীবের বিভিন্ন প্রকার জীবনক্রিয়া চালু রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং জীবদেহে বিভিন্ন প্রকার শারীরবৃত্তীয় কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করাই শ্বসনের একমাত্র উদ্দেশ্য। সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন খাদ্য এবং অক্সিজেন শ্বসনে ব্যবহৃত হয়, আর শ্বসনে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড সালোক-সংশ্লেষে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং সালোকসংশ্লেষ এবং শ্বসন জৈবিক প্রক্রিয়া দুটি পরস্পর,পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল এবং বিপরীতমুখী।

সালোকসংশ্লেষ [PHOTOSYNTHESIS]

(১) সালোকসংশ্লেষের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা (Definition and Explanation of Photosynthesis) : 1898 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী বার্নেস (Bernes) 'সালোকসংশ্লেষ' বা 'ফোটোসিন্থেসিস' শব্দটি প্রচলন করেন, যা গ্রিক শব্দ ফোটোস (Photos) অর্থাৎ আলো এবং সিথেসিস (Synthesis) অর্থাৎ সংশ্লেষ-এর সমন্বয়ে সৃষ্টি। আলোর উপস্থিতিতে কোনো কিছুর সংশ্লেষকে সালোকসংশ্লেষ বলে। অর্থাৎ , যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিলযুক্ত কোশে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এবং ক্লোরোফিলের সহায়তায় পরিবেশ থেকে শোষিত জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সরল শর্করা (গ্লুকোজ) সংশ্লেষিত হয় এবং উৎপন্ন খাদ্যে সৌরশক্তির আবদ্ধকরণ ঘটে এবং উপজাত বস্তুরূপে জল ও অক্সিজেন উৎপন্ন হয়, তাকে সালোকসংশ্লেষ বা ফোটোসিন্থেসিস বলে।

সবুজ উদ্ভিদের পাতা কিংবা সবুজ অংশের ক্লোরোফিল (ক্লোরোফিল- a, ক্লোরোফিল-b, কমলা রঙের ক্যারোটিন, পীতবর্ণের জ্যান্থোফিল) দ্বারা সৌরশক্তিকে গ্রহণ করে পরিবেশ থেকে গৃহীত জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাহায্যে শর্করা জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে। স্থলজ সবুজ উদ্ভিদেরা মাটি থেকে মূলরোম দ্বারা মাটির কৈশিক জল (capillary water) শোষণ করে জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে পাতার মেসোফিল কলায় প্রেরণ করে (জলজ উদ্ভিদেরা সমস্ত দেহ দিয়েই জল শোষণ করতে পারে)। পাতার ত্বকে অবস্থিত পত্ররন্দ্র দিয়ে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে পাতার মেসোফিল কলায় নিয়ে আসে (জলজ উদ্ভিদ জলে দ্রবীভূত কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে)। সালোকসংশ্লেষে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে এবং ক্লোরোফিলের সক্রিয়তায় জল এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ার পাতার ক্লোরোফিলযুক্ত কোশে উৎপন্ন হয় সরল শর্করা বা গ্লুকোজ।

❐ সালোকসংশ্লেষকে অঙ্গার আত্তীকরণ বলে কেন ? 
Why is Photosynthesis called carbon assimilation?
সালোকসংশ্লেষের সময় বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডের কার্বন অর্থাৎ অঙ্গার গ্লুকোজ অণুতে অঙ্গীভূত হয় বলে সালোকসংশ্লেষকে অঙ্গার আত্তীকরণ বা কার্বন অ্যাসিমিলেশন বলে। যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সালোকসংশ্লেষের সময় পরিবেশের কার্বন ডাইঅক্সাইড থেকে গৃহীত কার্বন সালোকসংশ্লেষকারী জীবকোশের জৈব যৌগে অঙ্গীভূত হয়, তাকে অঙ্গার আত্তীকরণ বলে।

সালোকসংশ্লেষ ও অঙ্গার আত্তীকরণের পার্থক্য :
সালোকসংশ্লেষ :
(i) সালোকসংশ্লেষ আলোক-নির্ভর প্রক্রিয়া।
(ii) প্রক্রিয়াটি কেবল ক্লোরোফিলযুক্ত কোশে ঘটে।
(iii) এই প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন হয়।
(iv) অক্সিজেন নির্গত হয়।
(v) এই প্রক্রিয়ায় সৌরশক্তি ব্যবহৃত হয়ে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয়।
অঙ্গার আত্তীকরণ :
(i) অঙ্গার আত্তীকরণ আলোক-নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া।
(ii) প্রক্রিয়াটি যে কোনো সজীব কোশে ঘটতে পারে।
(iii) এই প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন হয় না।
(iv) অক্সিজেন নির্গত হয় না।
(v) এই প্রক্রিয়ায়, সৌরশক্তি ব্যবহৃত নাও হতে পারে। তবে জৈব অ্যাসিড সংশ্লেষিত হয়।

সালোকসংশ্লেষ এক রকমের উপচিতি বিপাক (Photosynthesis is an anabolic metabolism) : যে বিপাকে জীবদেহের শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি পায়, তাকে উপচিতি বিপাক বলে। সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজ উদ্ভিদদেহের শুষ্ক ওজনের বৃদ্ধি ঘটায় বলে সালোকসংশ্লেষকে উপচিতি বিপাক বলে।

সালোকসংশ্লেষ সম্পর্কে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের অবদান (Contribution of Scientists in Photosynthesis) :
(1) জে. বি. ভ্যান হেলমন্ট (J. B. Van Helmont - 1648 ) : প্রমাণ করেন উদ্ভিদ মাটি থেকে সার এবং জল শোষণ করে খাদ্য প্রস্তুত করে। (2) স্টিফেন হেলস (Stephen Hales-1727) : উদ্ভিদের পুষ্টিসাধনে পাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। (3) যোসেফ প্রিস্টলে (Joseph Priestly- 1772) : সালোকসংশ্লেষের সময় উদ্ভিদ অক্সিজেন গ্যাস পরিত্যাগ করে। (4) জ্যা নেবিয়ে (Jean Senebier- 1796) : সালোকসংশ্লেষের সময় উদ্ভিদ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে। (5) পেলেসিয়ার (Pelletier-1818) : উদ্ভিদ-মধ্যস্থ সবুজ বর্ণের রঞ্জক পদার্থকে প্রথম ক্লোরোফিল নামে অভিহিত করেন। (6) রবার্ট ভন মেয়ার (Robert Von Mayer – 1844) : সালোকসংশ্লেষের সময় সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। (7) ব্ল্যাকম্যান (Blackmann - 1905) : সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি আলোক বিক্রিয়া ও অন্ধকার বিক্রিয়া—দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। (8) স্যামুয়েল রুবেন (Samuel Ruben 1941) : অক্সিজেন আইসোটোপ (ISO) ব্যবহার করে প্রমাণ করেন সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন অক্সিজেন জল থেকে উৎপন্ন হয়। (9) বেনসন ও কেলভিন (Benson & Calvin-1956) : ক্লোরেল্লা নামক উদ্ভিদে 'কেলভিন চক্র' পর্যবেক্ষণ করেন।

(২) সালোকসংশ্লেষের স্থান (Site of Photosynthesis) : ক্লোরোফিল সমন্বিত সকল সজীব কোশে সালোকসংশ্লেষ সংঘটিত হয়। তবে ক্লোরোফিলযুক্ত সবুজ পাতাই উদ্ভিদের প্রধান সালোকসংশ্লেষকারী অঙ্গ। পাতায় অবস্থিত মেসোফিল কলার কোশগুলিতে (প্যালিসেড প্যারেনকাইমা ও স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা) ক্লোরোফিলের আধিক্য থাকায় সালোকসংশ্লেষের মাত্রা সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয়। তবে পাতা ছাড়াও উদ্ভিদের যে-কোনো সজীব সবুজ কোশে অর্থাৎ সবুজ কাণ্ডে (ফণীমনসা, লাউ, কুমড়ো, পুঁই ইত্যাদি), ফুলের সবুজ বৃতিতে, অর্কিড মূলের সবুজ অংশে, গুলঞ্চের আত্মীকরণ মূলে, সবুজ শৈবাল (নস্টক, ভলভক্স, ইডোগোনিয়াম, কারা ইত্যাদি), এমনকি এককোশী প্রাণী ইউগ্রিনা (Euglena), ক্রাইস্যামিবা (Chrysamoeba) প্রভৃতির দেহেও সালোকসংশ্লেষ ঘটে। রোডোস্পাইরিলাম (Rhodospirillum), রোডোসিউডোমোনাস (Rhodopseudomonas) নামক সবুজ ব্যাকটেরিয়াও সালোকসংশ্লেষ ঘটাতে সক্ষম।

উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষের স্থান :
  1. মূল→ গুলঞ্চ, অর্কিড
  2. কাণ্ড→ লাউ, ফণীমনসা
  3. পাতা→ সবুজ পাতা
  4. বৃতি→ ফুলের সবুজ বৃতি 
  5. দল→ আতা, কাঠালিচাপার সবুজ দল 
  6. ত্বক→ কাঁচা ফলের ত্বক
  7. সালোকসংশ্লেষের প্রধান অঙ্গ→ পাতা
  8. সালোকসংশ্লেষের প্রধান স্থান→ মেসোফিল কলা
  9. সালোকসংশ্লেষকারী অঙ্গাণু → ক্লোরোপ্লাস্ট
  10. সালোকসংশ্লেষের আলোক বিক্রিয়ার ঘটনাস্থল → ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানা
  11. সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার বিক্রিয়ার ঘটনাস্থল → ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমা
  12. সালোকসংশ্লেষকারী রঞ্জক →  ক্লোরোফিল
  13. সালোকসংশ্লেষে সক্ষম প্রাণী → ইউগ্লিনা, ক্রাইস্যামিবা
  14. সালোকসংশ্লেষে অক্ষম উদ্ভিদ → ছত্রাক, স্বর্ণলতা
  15. সালোকসংশ্লেষে সক্ষম ব্যাকটেরিয়া → রোডোস্পাইরিলাম, রোডোসিউডোমোনাস
(৩) সালোকসংশ্লেষের সময়কাল (Time for Photosynthesis) : সূর্যালোক সৌরশক্তির উৎস। তাই সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি কেবল দিনের বেলায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ঘটে। তবে কৃত্রিম আলোতে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে (390-760nm) সালোকসংশ্লেষ হওয়া সম্ভব। এত বড়ো উদ্ভিদ জগতের মাথায় কৃত্রিম আলো দেওয়া সম্ভব নয় বলে সালোকসংশ্লেষের সংজ্ঞায় কৃত্রিম আলোর উল্লেখ থাকে না।

❐ সালোকসংশ্লেষের একক (Photosynthetic Unit) : সবুজ উদ্ভিদ কোশে ক্লোরোপ্লাস্ট বর্তমান। এই ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানাম পর্দার মধ্যে থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বটিকার মতো কোয়ান্টাজোম (quantasome)। প্রতিটি কোয়ান্টাজোমের মধ্যে 250টি ক্লোরোফিল অণু একসঙ্গে সালোকসংশ্লেষের আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়াকে স্বাধীনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই এদের একত্রে সালোকসংশ্লেষীয় একক বলে।


সালোকসংশ্লেষে মেসোফিল কলার ভূমিকা (Role of Mesophyll tissue in Photosynthesis) : পাতার মেসোফিল কলা সালোকসংশ্লেষের প্রধান ঘটনাস্থল। পাতার ঊর্ধ্ব ও নিম্ন বহিত্বকের মধ্যবর্তী ক্লোরোফিলযুক্ত আদি কলাস্তরকে মেসোফিল কলা বলে। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এটি ওপরের দিকে প্যালিসেড প্যারেনকাইমা (palisade parenchyma) এবং নীচের দিকে স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা (spongy parenchyma) নামক দুটি কলাস্তরে বিভেদিত। মেসোফিল কলার মধ্যে সালোকসংশ্লেষকারী অঙ্গাণু ক্লোরোপ্লাস্টের আধিক্য থাকে। ক্লোরোপ্লাস্টের থাইলাকয়েড মধ্যস্থ কোয়ান্টাজোমে ক্লোরোফিল রঞ্জক, থাকে। একমাত্র ক্লোরোফিলই সূর্যালোক শোষণে সক্ষম।


❐ পাতাকেই সালোকসংশ্লেষের প্রধান স্থানরূপে গণ্য করার কারণ :
  • পত্রফলক চ্যাপটা ও প্রসারিত হওয়ায় আপতিত সূর্যরশ্মির অধিকাংশই শোষিত হয় এবং একইভাবে অল্প সময়ে অধিক পরিমাণ Coশোষিত হয়।
  • প্রসারিত পাতায় পত্ররন্ধ্রের সংখ্যা বেশি থাকায় সালোকসংশ্লেষের সময়ে সহজে Co2 ও O2-এর আদানপ্রদান ঘটে।
  • পাতার মেসোফিল কলায়, ক্লোরোপ্লাস্টের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় সালোকসংশ্লেষের বিক্রিয়া বেশি পরিমাণে ঘটে।
  • পত্রফলকে বিন্যস্ত অসংখ্য শিরা-মধ্যস্থ জাইলেম বাহিকা দিয়ে যেমন জল পাতায় সরবরাহ হয় তেমনি সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন খাদ্য ফ্লোয়েম দ্বারা দ্রুত অপসারিত হয়।
(৪) সালোকসংশ্লেষের রাসায়নিক সমীকরণ এবং তার ব্যাখ্যা (Chemical Reaction of Photosynthesis and its Explanation): বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা সালোকসংশ্লেষের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সমীকরণ উপস্থাপন করলেও, আধুনিককালে বেনসন (Benson), কেলভিন (Calvin), রুবেন (Ruben) প্রমুখ বিজ্ঞানী সালোকসংশ্লেষের যে রাসায়নিক সমীকরণ উল্লেখ করেছেন তা এককথায় নির্ভুল এবং গ্রহণযোগ্য।

উপরোক্ত সমীকরণ থেকে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি উল্লেখ করা যেতে পারে—
1. ক্লোরোফিল কর্তৃক আলোক শোষণ।
2. জলের অণুর বিশ্লেষণ ও অক্সিজেন উৎপাদন।
3. গৃহীত কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমপরিমাণ অক্সিজেন নির্গত হওয়া (উভয়ক্ষেত্রে 6 অণু)।
4. ছয় অণু কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং বারো অণু জলের সমন্বয়ে উৎপন্ন হয় এক অণু গ্লুকোজ, ছয় অণু জল এবং ছয় অণু অক্সিজেন।
5. প্রতি গ্রাম অণু গ্লুকোজে (C6H12O6) প্রায় 686 কিলোক্যালোরি সৌরশক্তি স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ থাকে।
6. সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন অক্সিজেনের উৎস হল জল।
7. কার্বন ডাইঅক্সাইড বন্ধনের জন্য বিজারক পদার্থের উৎপাদন।
৪. সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন জল পুনরায় দেহস্থ কোশগুলির মধ্যে শোষিত হয়, যা উদ্ভিদ কর্তৃক বিভিন্ন বিপাকীয় কার্যে ব্যবহৃত হয়।

(৫) সালোকসংশ্লেষের উপাদানের উৎস এবং তাদের ভূমিকা (Sources and Role of Components of Photosynthesis) : সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত উপাদানগুলিকে গুরুত্ব সাপেক্ষে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে— (1) প্রধান উপাদান : কার্বন ডাইঅক্সাইড, ক্লোরোফিল, সূর্যালোক এবং জল। (2) সাহায্যকারী উপাদান : ADP (অ্যাডিনোসিন ডাই-ফসফেট), NADP (নিকোটিনামাইড অ্যাডেনাইন ডাইনিউক্লিওটাইড ফসফেট), RuBP (রাইবিউলোজ বিস্-ফসফেট)।

❐ সালোকসংশ্লেষের প্রধান উপাদানগুলির উৎস ও ভূমিকা নিম্নরূপ—
1. কার্বন ডাইঅক্সাইড (Carbon dioxide) : সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কার্বন- ডাইঅক্সাইড একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। উদ্ভিদ প্রধানত পত্ররন্ধ্র দিয়ে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডকে শোষণ করলেও কিছু পরিমাণ উদ্ভিদের লেন্টিসেল এবং কিউটিকল দ্বারাও শোষিত হয়। বায়ুমণ্ডলে Co-এর পরিমাণ শতকরা 0:03 ভাগ। উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্বসন, জৈব পদার্থের দহন এবং জৈব পদার্থের বিয়োজনের (Decomposition) মাধ্যমে পরিবেশে Co-এর নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় থাকে। এই কার্বন ডাইঅক্সাইডকে উদ্ভিদ সালোক সংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুতে ব্যবহার করে। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজের জন্য 6 অণু কার্বন ডাইঅক্সাইডের প্রয়োজন হয়।

❐ কার্বন ডাইঅক্সাইডের উৎস (Source of Carbon dioxide) : (i) স্থলজ উদ্ভিদের কার্বন ডাইঅক্সাইডের উৎস বায়ুমণ্ডল। (ii) জলজ উদ্ভিদের কার্বন ডাইঅক্সাইডের উৎস জলে দ্রবীভূত কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বনেট এবং বাইকার্বনেট যৌগ। (iii) শ্বসন, দহন, বিয়োজন, সন্ধান ইত্যাদি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন Co গ্যাস বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডের উৎস।


❐ আহরণ কৌশল (Mechanism of Collection) : স্থলজ উদ্ভিদ, ভাসমান এবং আংশিক নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ, পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ ব্যাপন ক্রিয়ার দ্বারা বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডকে পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে শোষণ করে পাতার মেসোফিল কোশে নিয়ে আসে। সম্পূর্ণ নিমজ্জিত জলজ উদ্ভিদ সমগ্র দেহতল দিয়ে ত্বকীয় ব্যাপন ক্রিয়ায় জলে দ্রবীভূত কার্বন ডাই- অক্সাইড শোষণ করে।

❐ সালোক সংশ্লেষে কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভূমিকা (Role of Co2 in Photosynthesis) : (i) কার্বন ডাইঅক্সাইড সালোকসংশ্লেষের একটি প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (ii) সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন গ্লুকোজের (C6H12O6) কার্বন ও অক্সিজেন পরিবেশের Co2 থেকে গৃহীত হয় এবং অঙ্গার আত্তীকরণ ঘটায়। সুতরাং Co2 ব্যতিরেকে সালোকসংশ্লেষ সম্ভব নয় ।

2. ক্লোরোফিল (Chlorophyll) : ক্লোরোফিল সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ একটি অভ্যন্তরীণ উপাদান। একমাত্র ক্লোরোফিল অণুই সূর্যালোকের ফোটন কণাকে শোষণ করে সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে। উদ্ভিদের সবুজ কোশে অবস্থিত ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানা অঞ্চলে কোয়ান্টাজোম (quantasome ) দানার মধ্যে ক্লোরোফিল থাকে। ক্লোরোফিলে অবস্থিত রঞ্জকগুলি প্রধানত ক্লোরোফিল-৫, ক্লোরোফিল-b, ক্যারোটিন ও জ্যাম্বোফিল। সবুজ উদ্ভিদ ছাড়াও সবুজ ব্যাকটেরিয়ার দেহে ক্লোরোফিল দেখা যায়। রোডোসিউডোমোনাস, রোডোস্পাইরিলাম, ক্লোরোবিয়াম প্রভৃতি সবুজ সালফার ব্যাকটেরিয়া-মধ্যস্থ ক্লোরোফিলকে ব্যাকটেরিওক্লোরোফিল বলে।

❐ ক্লোরোফিল রঞ্জকের রাসায়নিক প্রকৃতি (Chemical nature of Chlorophyll) : ক্লোরোফিল পরফাইরিন যৌগ সমন্বিত একপ্রকার জটিল প্রোটিন। যৌগটি চারটি পাইরল বলয় দ্বারা গঠিত, যার কেন্দ্রস্থলে ম্যাগনেশিয়াম (Mg) ধাতু অবস্থিত। রঞ্জকগুলির রাসায়নিক সংকেত নিম্নরূপ-
(i) ক্লোরোফিল-a  : C55H72O5N4Mg
(ii) ক্লোরোফিল-b  : C55H7006N4Mg
(iii) ক্যারোটিন  :  C40H56
(iv) জ্যাথোফিল  : C40H56O2
(v) ব্যাকটেরিওক্লোরোফিল  :  C55H74O6N4Mg

❐ ক্লোরোফিলের উৎস (Source of Chlorophyll) : উদ্ভিদের যে-কোনো সবুজ অঙ্গ, প্রধানত সবুজ পাতার মেসোফিল কলা।

❐ সালোকসংশ্লেষে ক্লোরোফিলের ভূমিকা (Role of Chlorophyll in Photosynthesis) : ক্লোরোফিল সূর্যালোকের অদৃশ্য ফোটন কণা (photon) বা কোয়ান্টাম (quantum) শোষণ করে সক্রিয় হয় এবং শোষিত জলকে হাইড্রোজেন (H+) এবং হাইড্রক্সিল (OH) আয়নে বিশ্লিষ্ট করে। সুতরাং সালোকসংশ্লেষে ক্লোরোফিলের ভূমিকা হল— সৌরশক্তি শোষণ করে সেই শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে পরিণত করা এবং জলের আয়নীকরণ ঘটানো।

3. সূর্যালোক (Sunlight) : সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় আলো একটি অপরিহার্য উপাদান। আলোর প্রধান উৎস সূর্যালোক।সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্লুকোজের মধ্যে সূর্যালোক বা সৌরশক্তি স্থৈতিক শক্তিরূপে সঞ্চিত হয়। কেবলমাত্র ক্লোরোফিল অণুই পারে সৌরশক্তিকে শোষণ করতে। সূর্যালোক দ্বারা সৃষ্ট দৃশ্যমান বর্ণালিতে (spectrum) বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (390-760nm) সাতটি রং থাকে (বেগুনি, নীল, আশমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল) এই সাতটি সূর্যালোক রিঙের মধ্যে ক্লোরোফিল প্রধানত লাল ও

নীল রং বেশি মাত্রায় শোষণ করে। সূর্যালোকের শক্তির উৎস উচ্চশক্তি সম্পন্ন অদৃশ্য ফোটন (photon) কণা। এই ফোটন কণাই সালোকসংশ্লেষের সময় ক্লোরোফিলকে উত্তেজিত ও তেজোময় করে তুলতে সক্ষম হয়। তবে আলোর প্রকৃতি, আলোর তীব্রতা এবং আলোর স্থিতিকাল সালোকসংশ্লেষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

পাতায় আপতিত সূর্যালোকের পরিমাণ সূর্যালোকের 83% পাতায় শোষিত হয়, 12% প্রতিফলিত হয় এবং 5% প্রতিসৃত হয়। পাতায় শোষিত সৌরশক্তির মোট পরিমাণের মাত্র 0.5-35% সালোকসংশ্লেষে ব্যবহৃত হয়।

❐ আলোর উৎস (Source of Light) : সালোকসংশ্লেষে আলোর প্রধান উৎস সূর্য। তবে নির্দিষ্ট তীব্রতায় কৃত্রিম আলোতেও সালোকসংশ্লেষ ঘটে।

❐ সালোকসংশ্লেষীয় কার্য বর্ণালি (Action Spectrum of Photosynthesis) : হুভার (Hoover-1937), গ্যাব্রিয়েলসন (Gabrielsen-1948) প্রমুখ বিজ্ঞানীর পরীক্ষালব্ধ ফল থেকে প্রমাণিত হয়েছে, আলোকের দৃশ্যমান বর্ণালির সাতটি বর্ণের মধ্যে লাল 650-760nm তরফা দৈর্ঘ্য এবং নীল অংশে 430-470 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য সালোকসংশ্লেষ বেশি মাত্রায় সক্রিয় বা কার্যকরী হয়। বর্ণালির এই কার্যকর অংশকে সালোকসংশ্লেষীয় কার্যবর্ণালি বলে। সবুজ বর্ণের শোষণ হার অত্যন্ত কম। সবুজ বর্ণ শোষিত না হয়ে প্রতিফলিত হয় বলে পাতাগুলিকে সবুজ দেখায়।

❐ সালোকসংশ্লেষে সূর্যালোকের ভূমিকা (Role of Sunlight in Photosynthesis) : (i) ক্লোরোফিল কণাকে সক্রিয় করা এবং সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করা। (ii) সৌরশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাই-ফসফেট) অণুর মধ্যে আবদ্ধ হয়। (iii) রাসায়নিক শক্তি (ATP) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় শক্তির জোগান দেয় এবং শর্করা

জাতীয় খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে বর্তমান থাকে। (iv) সৌরশক্তিই কোশস্থ ADP-কে উচ্চশক্তিসম্পন্ন ATP-তে পরিণত হতে সহায়তা করে। সালোকসংশ্লেষে ফসফেট যৌগের ATP-তে পরিণত হওয়াকে ফোটোসিন্থেটিক ফসফোরাইলেশন (photosynthetic phosphorylation) বলে।

4. জল (Water) : জল সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত একটি প্রধান উপাদান। সবুজ উদ্ভিদ মাটির কৈশিক জল (capillary water) মূলরোমের সাহায্যে শোষণ করে কাণ্ডের জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে পাতার মেসোফিল কলার কোশে পৌঁছে দেয়। সালোক- সংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় এক অণু গ্লুকোজ উৎপাদনের জন্য বারো অণু জলের প্রয়োজন হয়।

❐ জলের উৎস (Source of Water) : (i) স্থলজ উদ্ভিদের জলের উৎস মাটির কৈশিক জল। (ii) জলজ উদ্ভিদের জলের উৎস বিভিন্ন জলাশয়। (iii) পরাশ্রয়ী উদ্ভিদের জলের উৎস বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প। আহরণ কৌশল (Mechanism of Collection) : স্থলজ উদ্ভিদ মূলরোম দ্বারা মাটির জল অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় শোষণ করে। জলজ উদ্ভিদ জলে নিমজ্জিত অংশ (সম্পূর্ণ অথবা আংশিক) দিয়ে অন্তঃঅভিস্রবণ ও ব্যাপন প্রক্রিয়ায় জল শোষণ করে। পরাশ্রয়ী উদ্ভিদেরা বায়বীয় মূলে অবস্থিত ভেলামেন কলার* সাহায্যে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প শোষণ করে।

❐ সালোকসংশ্লেষে জলের ভূমিকা (Role of Water in Photosynthesis) : (i) জল সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার একটি অন্যতম কাঁচামাল। (ii) জল সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সময় ক্লোরোফিল অণুকে ইলেকট্রন প্রদান করে। (iii) সালোকসংশ্লেষের অন্ধকার দশায় কার্বন ডাইঅক্সাইডকে বিজারিত করার জন্য প্রয়োজনীয় হাইড্রোজেন জল বিশ্লিষ্ট হয়েই উৎপন্ন হয়। (iv) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উপজাত পদার্থরূপে যে অক্সিজেন উৎপন্ন হয় তার উৎস জল।

(৬) সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতি (Mechanism of Photosynthesis) : সালোকসংশ্লেষ একটি শারীরবৃত্তীয় জটিল প্রক্রিয়া। সালোকসংশ্লেষের সময় বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে পাতায় প্রবেশ করার পর সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরোফিলের সহায়তায় জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শর্করা জাতীয় পদার্থের সৃষ্টি হয়। আসলে সালোকসংশ্লেষ একটি জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া, যেখানে জল জারিত হয়ে অক্সিজেন মুক্ত করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বিজারিত হয়ে শর্করা প্রস্তুত করে। সালোকসংশ্লেষের সামগ্রিক রাসায়নিক বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ।

1905 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ব্ল্যাকম্যান (Blackmann) প্রথম প্রমাণ করেন সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াটি দুটি পৃথক পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা— (A) আলোক বিক্রিয়া (Light reaction) বা আলোক দশা (Light Phase) এবং (B) অন্ধকার বিক্রিয়া (Dark reaction) বা অন্ধকার দশা (Dark phase)।

(A) আলোক দশা (Light Phase) : সালোকসংশ্লেষের আলোক দশা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানার মধ্যে সম্পন্ন হয়। আলোর উপস্থিতিতে ঘটে বলে সালোকসংশ্লেষের এই পর্যায়টিকে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে। আলোক বিক্রিয়ার প্রধান উপাদানগুলি হল সূর্যালোক, জল এবং ক্লোরোফিল। এছাড়াও NADP এবং ADP-এর প্রয়োজন হয়। এই বিক্রিয়ার পর্যায়গুলি নিম্নরূপ— 1. ক্লোরোফিলের সক্রিয়তা (Activation of Chlorophyll) : এই পর্যায়ের প্রধান কাজ সৌরশক্তির শোষণ এবং সংগ্রহ। ক্লোরোফিল সূর্যালোকের অসংখ্য সূক্ষ্ম অদৃশ্য ফোটন বা কোয়ান্টাম শোষণ করে সক্রিয় ও উত্তেজিত (Chl+) হয়ে ওঠে।


2. ফোটোলাই সিস (Photolysis): সক্রিয় ক্লোরোফিল কোশস্থ জলকে  হাইড্রোজেন (H+) এবং হাইড্রক্সিল (OH) আয়নে বিশ্লিষ্ট করে। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে জলের এইরূপ বিশ্লিষ্ট হওয়াকে জলের আলোক-বিশ্লেষণ বা ফোটোলাইসিস বলে। বিজ্ঞানী রোবিন হিল (Robin Hill→ 1940)-এর নাম অনুসারে একে হিল বিক্রিয়া (Hill reaction) বলে।

এই ভেঙে যাওয়া হাইড্রোজেনকে (H+) কোশ-মধ্যস্থ কোনো হাইড্রোজেন গ্রাহক গ্রহণ করে হাইড্রোজেন-গ্রাহক যৌগ তৈরি করে। বিজারিত হাইড্রোজেন-গ্রাহক যৌগটি বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডকে গ্রহণ করে পরবর্তী অন্ধকার দশায় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় পদার্থ তৈরি করে।

3. বিজারিত NADPH গঠন (Formation of reduced NADPH) : ফোটোলাইসিস পর্যায়ে ভেঙে যাওয়া হাইড্রোজেন আয়ন (H+) পাতার কোশে অবস্থিত NADP+(নিকোটিনামাইড অ্যাডেনাইন ডাই নিউক্লিওটাইড ফসফেট) নামক হাইড্রোজেন- গ্রাহকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিজারিত NADPH (Arnon- 1951 ) গঠন করে। NADPকে হিল বিকারক (Hill reagent) বলে। যা বিজারিত NADPH +  H বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডকে গ্রহণ করে পরবর্তী অন্ধকার দশায় নিয়ে যায়।

4. অক্সিজেন উৎপাদন (Production of oxygen) : ফোটোলাইসিস পর্যায়ে উৎপন্ন হাইড্রক্সিল (OH) আয়ন থেকে ইলেকট্রন বিচ্যুত হয়ে হাইড্রক্সিল মূল্ক (OH) গঠিত হয়। চার অণু হাইড্রক্সিল মূলক থেকে দু-অণু জল এবং এক অণু অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। এই অক্সিজেন পত্ররন্ধ্র দিয়ে পরিবেশে নির্গত হয়ে যায়, 4OH-→ 4(OH)+4e-  4(OH) → 2H2O + O2

5. ফোটোফসফোরাইলেশন (Photophosphorylation) : পাতার কোশে সতি এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ ADP (অ্যাডিনোসিন ডাই ফসফেট) আলোক দশায় অজৈব ফসফেটের (Pi) সঙ্গে যুক্ত হয়ে (অচক্রাকার ও চক্রাকার ফসফোরাইলেশন পদ্ধতিতে) উচ্চশক্তিসম্পন্ন যৌগ ATP (অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট) গঠন করে। এই পদ্ধতিকে ফোটোফসফোরাইলেশন বা সালোকসংশ্লেষীয় ফসফোরীভবন বলে। এই ATP থেকে অন্ধকার বিক্রিয়ার জন্য শক্তি সরবরাহ হয়। আর জীবকোশে একমাত্র ATP অণুর মধ্যে শক্তি সজ্জিত থাকে বলে ATP-কে এনার্জি কারেন্সি (Energy Currency) বলে।

  • চক্রাকার ফোটোফসফোরাইলেশন : P700 (PSI) থেকে বিচ্যুত ইলেকট্রন (e-) কয়েকটি ইলেকট্রন বাহকের মাধ্যমে পুনরায় P700-তে ফিরে আসে। এই চক্রে 2 অণু ATP উৎপন্ন হয়।
  • অচক্রাকার ফোটোফসফোরাইলেশন : প্রথম পর্যায়ে P680 থেকে বিচ্যুত ইলেকট্রন (e-) ইলেকট্রন বাহকের মাধ্যমে বাহিত হয়ে P700 এসে পৌঁছোয়। পরবর্তী পর্যায়ে P700 থেকে নির্গত ইলেকট্রনকে ইলেকট্রন বাহক NADP-র কাছে পাঠায়। NADP হাইড্রোজেন আয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে NADPH + H+ গঠন করে। হাইড্রোজেন আয়ন জল বিশ্লিষ্ট হয়ে (H2O → H-1 + H-) উৎপন্ন হয়। এই চক্রে O2, NADPH + H+ এবং ATP উৎপন্ন হয়।

(B) অন্ধকার দশা (Dark Phase) : সালোকসংশ্লেষে আলোক দশার পরেই অন্ধকার দশাটি ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমা অঞ্চলে ঘটে। এই দশায় আলোর কোনো প্রয়োজন হয় না বলে একে অন্ধকার দশা বলে। অন্ধকার দশার বৈশিষ্ট্য হল কার্বন ডাইঅক্সাইডের সংযোজন এবং শর্করা উৎপাদন। বিজ্ঞানী ব্ল্যাকম্যান (Blackmann 1905) প্রথম অন্ধকার বিক্রিয়াটি লক্ষ করেন বলে একে ব্ল্যাকম্যান বিক্রিয়াও বলে। অন্ধকার দশার প্রধান উপাদানগুলি হল CO2, RuBP, NADPH এবং ATP। এই বিক্রিয়ার পর্যায়গুলি নিম্নরূপ —

1. অঙ্গার আত্তীকরণ (Carbon assimilation) : এই পর্যায়ে কোশস্থ পাঁচ কার্বনযুক্ত শর্করা যৌগ রাইবিউলোজ বিস্-ফসফেট (RuBP) গ্রাহকরূপে বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে 3-কার্বনযুক্ত স্থায়ী যৌগ ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড (PGA) তৈরি করে। CO2 থেকে কার্বনের কোশস্থ যৌগে অঙ্গীভূত হওয়াকে অঙ্গার আত্তীকরণ (Carbon assimilation) বলে।

2. ফসফোগ্লিসারালডিহাইড গঠন (Formation of Phosphoglyceraldehyde) : ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড আলোক দশায় উৎপন্ন NADPH এবং উৎসেচকের সহায়তায় বিজারিত হয়ে 3-কার্বনযুক্ত ফসফোগ্লিসারালডিহাইড (PGAld) গঠন করে এবং NADP+ মুক্ত করে।

3. গ্লুকোজ সংশ্লেষ (Formation of Glucose) : 12 অণু PGAld-এর মাত্র 2 অণু PGAld, ATP-এর সাহায্যে এক অণু গ্লুকোজ (6-C যুক্ত) উৎপন্ন করে। পরে এই গ্লুকোজ থেকে অন্যান্য কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট প্রভৃতি সঞ্চয়ী পদার্থ উৎপন্ন হয়।

4. রাইবিউলোজ বিস্-ফসফেটের পুনরুৎপাদন (Re-formation of RuBP) : গুরুত্বপূর্ণ এই পর্যায়ে বাকি 10 অণু PGAld একটি চক্রের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমিক কতকগুলি অন্তর্বর্তী যৌগ তৈরির দ্বারা পুনরায় 6 অণু RuBP-তে পুনর্গঠিত হয় এবং পরবর্তীকালে আবার শর্করা গঠনে সহায়তা করে। বিজ্ঞানী কেলভিন (Calvin - 1956) প্ৰদৰ্শিত এই চক্রের নাম কেলভিন চক্র (Calvin cycle)।

আলোক দশা ও অন্ধকার দশার পার্থক্য :
আলোক দশা অন্ধকার দশা
1. সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়। 1. সূর্যালোকের প্রয়োজন হয় না।
2. ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানা অঞ্চলে ঘটে। 12. ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমা অঞ্চলে ঘটে।
3. অক্সিজেন নির্গত হয়। 3. অক্সিজেন নির্গত হয় না।
4. NADP বিজারিত হয়। 4. বিজারিত NADP জারিত হয়।
5. কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষিত হয় না। 5. কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষিত হয়।
6. গ্লুকোজ উৎপন্ন হয় না। 6. গ্লুকোজ উৎপন্ন হয়।

 চক্রাকার ও অচক্রাকার ফসফোরাইলেশনের পার্থক্য :
চক্রাকার ফসফোরাইলেশন অচক্রাকার ফসফোরাইলেশন
1. জলের প্রয়োজন হয় না। 1. জলের প্রয়োজন হয়।
2. অক্সিজেন উৎপন্ন হয় না। 2. অক্সিজেন উৎপন্ন হয়।
3. NADP-র কোনো ভূমিকা নেই। 3. NADP বিজারিত হয়।
4. প্রতি চক্রে 2 অণু ATP উৎপন্ন হয়। 4. মাত্র এক অণু ATP উৎপন্ন হয়।

(৭) সালোকসংশ্লেষের তাৎপর্য  (Significance of Photosynthesis) :  জীবজগতে জীবনের অস্তিত্ব বজায় রাখতে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। সমগ্র জীবজগৎ অর্থাৎ উদ্ভিদ থেকে শুরু করে প্রাণীকুল, এমনকি মানুষ পর্যন্ত সালোকসংশ্লেষের ওপর প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল।

1. সৌরশক্তির আবদ্ধকরণ এবং খাদ্যের মধ্যে এর স্থৈতিক শক্তিতে রূপান্তর (Entrapping of solar energy and its conversion to potential energy in food) : সূর্যই সকল শক্তির মূল উৎস। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদরাই পারে সৌরশক্তিকে আবদ্ধ করে বিভিন্ন জৈবনিক কার্যে ব্যবহার করতে। সালোকসংশ্লেষের সময় সবুজ উদ্ভিদ সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তর করে ATP অণুর মধ্যে আবদ্ধ করে। পরে সেই শক্তি উৎপন্ন খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে (Potential energy) সঞ্চিত হয়।

প্রাণীকুল সবুজ উদ্ভিদ থেকে খাদ্যের মাধ্যমে শক্তি সংগ্রহ করে। অর্থাৎ গৃহীত খাদ্য-মধ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি প্রাণীদের দেহকোশে খাদ্যের জারণ প্রক্রিয়ায় গতিশক্তি বা তাপশক্তি উৎপন্ন করে। তাপশক্তি জীবদেহের বিভিন্ন জৈবনিক ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করে। এইভাবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবুজ উদ্ভিদ পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকে শক্তির জোগান দেয়। কাঠ, কয়লা, পেট্রোল প্রভৃতি জ্বালানি থেকে যে শক্তি নির্গত হয় তা প্রকৃতপক্ষে বহু বছর পূর্বে জীবিত উদ্ভিদ কর্তৃক সংরক্ষিত সৌরশক্তি। কয়লা এবং পেট্রোল দহন করে যন্ত্র চালানো হয় অর্থাৎ সঞ্চিত সৌরশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করা হয়। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়াই কেবল পারে সৌরশক্তিকে আবদ্ধ করে খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে সতি করতে। 180 গ্রাম গ্লুকোজ অর্থাৎ প্রতি গ্রাম অণু গ্লুকোজে 686 কিলোক্যালোরি সৌরশক্তি স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ থাকে।

2. গ্লুকোজের শ্বেতসারে রূপান্তর এবং বিভিন্ন সঞ্চয়ী অঙ্গে পরিবহণ (Conversion of glucose to starch and its transport to storage organs): সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্লুকোজ সরাসরি অদ্রবণীয় শ্বেতসারে রূপান্তরিত হয়ে উদ্ভিদের বিভিন্ন সঞ্চয়ী অঙ্গে সজ্জিত হয়। প্রয়োজনে সঞ্চিত শ্বেতসার ডায়াস্টেজ (Diastase) নামক উৎসেচকের প্রভাবে পুনরায় গ্লুকোজে পরিণত হয়। গ্লুকোজ থেকে অন্যান্য কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ইত্যাদি সংশ্লেষিত হয়। উদ্ভিদ উৎপাদক হিসেবে এই উৎপন্ন খাদ্যের প্রয়োজনীয় অংশটুকু নিজেদের জৈবনিক কার্যে ব্যয় করে বাকি অংশটুকু মূল, কাণ্ড, পাতা, ফল ও বীজের মধ্যে সঞ্চয় করে রাখে। পরবর্তীকালে এই উদ্ভিজ্জখাদ্য সরাসরি তৃণভোজী প্রাণীরা গ্রহণ করে এবং তৃণভোজী প্রাণীকে মাংসাশী প্রাণী খাদক হিসেবে গ্রহণ করে। প্রাণী শ্রেষ্ঠ মানুষ জীবনধারণ করে চাল, ডাল, শাকসবজি, ফল, মূল প্রভৃতি উদ্ভিজ্জ খাদ্য এবং দুধ, ঘি, মাছ, মাংস প্রভৃতি প্রাণীজ খাদ্য গ্রহণ করে। সুতরাং বলা যেতে পারে, উদ্ভিদ এবং প্রাণীজীবনে খাদ্যের মূল উৎস সালোকসংশ্লেষ।

3. পরিবেশে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্য রক্ষা (Maintenance of O2 - CO2  balance in the environment) : বাঁচার জন্য জীবকুলের প্রয়োজন শ্বসন। বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ 20.60% এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ 0.03%। জীবকুল (উদ্ভিদ ও প্রাণী) দিনরাত্রি শ্বসনের জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। ফলে বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু উদ্ভিদকুল সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে বায়ুর O2– CO2  এর ভারসাম্য বজায় রাখে। এইভাবে পরিবেশের বিশুদ্ধতা বজায় থাকে।


4. সালোকসংশ্লেষ এবং মানব সভ্যতার অগ্রগতি (Photosynthesis and Progress of human civilization) : মানব সভ্যতা ও তার অগ্রগতি সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। যেমন- (i) তুলো, রেয়ন, সেলোফেন কাগজ প্রভৃতি সেলুলোজ থেকে তৈরি, যার মূল উৎস সালোকসংশ্লেষ। (ii) গঁদ, রজন, রবার মানব সভ্যতায় বিভিন্ন সামগ্রীরূপে ব্যবহৃত হচ্ছে, যাদের উৎপত্তি সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায়। (iii) মানবকল্যাণে ব্যবহৃত উদ্ভিদ থেকে উৎপন্ন অসংখ্য ওষুধ, যেমন—বেলেডোনা, ইপিকাক, কুইনাইন, রেসারপিন ইত্যাদি পরোক্ষভাবে সালোকসংশ্লেষের অবদান। (iv) কয়লা ও পেট্রোল উল্লেখযোগ্য দুটি প্রয়োজনীয় বস্তু সালোকসংশ্লেষেরই অমূল্য দান। (v) সালোকসংশ্লেষে উৎপন্ন উদ্ভিদের হাইড্রোকার্বনযুক্ত তরুক্ষীর (Latex) কেরোসিন, গ্যাসোলিনের বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে। তরুক্ষীরযুক্ত এই জাতীয় উদ্ভিদগুলিকে পেট্রোলিয়াম উদ্ভিদ (Petro-Plant) বলে।

সালোকসংশ্লেষ ও শক্তিচক্র (Photosynthesis and energy cycle) : ক্লোরোফিল সূর্যালোক থেকে সৌরশক্তিকে শোষণ করে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তর করে ATP অণুর মধ্যে আবদ্ধ করে। জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় ATP অণুর রাসায়নিক শক্তি, উৎপন্ন গ্লুকোজ অণুতে স্থৈতিক শক্তিরূপে সঞ্চিত হয়। এই খাদ্য (গ্লুকোজ) জীবকোশে জারিত হওয়ার সময় খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তি গতিশক্তি বা তাপশক্তিতে মুক্ত হয়। সুতরাং সালোকসংশ্লেষ এবং শক্তিচক্র পরস্পর নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। সৌরশকি→ রাসায়নিক শক্তি → স্থৈতিক শক্তি → গতিশকি বা তাপশক্তি।

কমপেনসেশন পয়েন্ট : দিনের বেলায় যে সময়ে উদ্ভিদের CO2 , গ্রহণ (সালোকসংশ্লেষের সময়) এবং CO2  বর্জনের (শ্বসনের সময়) হার সমান হয় তাকে কমপেনসেশন পয়েন্ট বা পুর্তিবিন্দু বলে। ঊষাকালে ও গোধুলিতে এই পরিস্থিতি দেখা যায়।

আলোক শ্বসন বা ফোটোরেসপিরেশন : আলোকের তীব্রতায় সবুজ উদ্ভিদকোশে যে অতিরিক্ত শ্বসন ঘটে এবং তার ফলে বাড়তি CO2 , নির্গত হয় তাকে আলোক শ্বসন বলে।

animated-new-image-0047  Read More Click Here 👇
  • সালোকসংশ্লেষ Study Notes
  • শ্বসন নোটস  Study Notes
  • পুষ্টি নোটস  Study Notes
  • সংবহন নোটস  Study Notes
  • চলন ও গমন নোটস  Study Notes
  • রেচন নোটস  Study Notes
  • স্নায়ুতন্ত্র নোটস  Study Notes
  • জ্ঞানেন্দ্রিয় নোটস Study Notes
  • হরমোন নোটস Study Notes  
  • কোশ ও কোশ বিভাজন Study Notes
  • জনন Study Notes
  • বংশগতি Study Notes
  • অভিব্যক্তি Study Notes
  • অভিযোজন Study Notes
  • ভাইরাস Study Notes
  • মাইক্রোবস্ Study Notes
  • রোগ ও স্বাস্থ্য Study Notes
  • পরিবেশ Study Notes
  • বাস্তুতন্ত্র Study Notes
  • সংরক্ষণ Study Notes

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন